3:46 pm , March 9, 2023
আরিফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিবেদক ॥ বাম্পার ফলনের পর চলতি বছরের তরমুজের দাম মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরেই থাকার আশঙ্কা ব্যাবসায়ীদের। তাদের মতে, পরিবহন খরচ তিনগুণ বৃদ্ধির কারণে গড়ে প্রতিটি তরমুজের দাম বাড়ছে সর্বনি¤œ ৩০ টাকা। এরসাথে কেনা পড়ছে সর্বনি¤œ ৭০-১৭০ টাকা থেকে ২০০- ২৮০ টাকা পর্যন্ত। বৃহস্পতিবার নগরীর পোর্ট রোডে ফলের আড়তদারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে এ তথ্য। ভোলা জেলার বিভিন্ন চর এলাকা ও পটুয়াখালীর গলাচিপা থেকে এই মুহুর্তে পাঁচটি তরমুজ বোঝাই ট্রলারের মালামাল খালাস হচ্ছে। চারটি ট্রাকে বোঝাই হচ্ছে সরাসরি ট্রলার থেকে। দুটি ট্রাক যাবে উত্তরবঙ্গের রাজশাহী ও রংপুরে। অন্য দুটি ট্রাকের একটি চট্টগ্রামের চকরিয়া ও একটি যাবে সিলেট। ট্রাকচালকদের একজন আব্দুল মান্নান বলেন, চকরিয়া বাজার পর্যন্ত তার ভাড়া ৭০ হাজার টাকা। পাঁচ -ছয় হাজার তরমুজ বোঝাই হতে পারবে তাদের পাঁচ টনি একটি ট্রাকে।
ফলপট্টির আড়ৎদার ওমর আলী ও মাহবুব মিয়ার সাথে কথা বলে জানা গেছে, পাঁচটি ট্রলারে প্রায় ৫০ হাজার পিস বিভিন্ন সাইজের তরমুজ এসেছে ভোলা ও পটুয়াখালী থেকে। কৃষকের কাছ সাধারণত চুক্তিতে ক্ষেত কিনে নেন তারা। এতে ১০০ তরমুজের দাম হিসেবে কৃষক প্রতি পিচে পাচ্ছেন ৫০ থেকে সর্বোচ্চ ১২০ টাকা। এরপর শ্রমিক খরচ ও ট্রলার ভাড়া যুক্ত হয়ে আড়তে পৌঁছে।
মাহবুব বলেন, ট্রলার ও ট্রাকের ভাড়া এখন গত বছরের চেয়ে তিনগুণ বেড়েছে। ফলে গত বছর যে ট্রলারের খরচ ছিলো দুই হাজার টাকা তা এ বছর পাঁচ-ছয় হাজার টাকা হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই একটি ১০০ টাকার তরমুজে ৩০ টাকা ট্রলার খরচ যুক্ত হচ্ছে ঘাটে এসেই। এরপর পাইকারি বাজারের আড়তদার যখন চকরিয়ার বাজারে এটি তুলছে তখন দেড়কেজি বা দুই কেজি ওজনের তরমুজটির গায়েও কৃষকের থেকে কেনার পর বাড়তি যুক্ত হচ্ছে সর্বনি¤œ ৭০ টাকা।
এসময় আড়তদার ওমর আলী বলেন, আমার এখানে ছোট দেড় কেজি ওজনের তরমুজের শ কেনা পড়েছে সর্বনি¤œ ৩৫০০ টাকা, এরপর সর্বোচ্চ রয়েছে ২৩ হাজার, মাঝারি সাইজে দু’টো একটি বাংলালিংক তরমুজ অন্যটি গাড়ো সবুজ চাইনিজ তরমুজ বলি। বাংলালিংকের দাম বেশি ১৭ হাজার ও ১৪ হাজার টাকা।
বরিশাল নগরীর বিভিন্ন বাজারে কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে গাড়ো সবুজ চাইনিজ তরমুজটি। এই মুহুর্তে বরিশালের বিভিন্ন বাজারে অল্পকিছু তরমুজ দেখা গেছে। যা আকারে ছোট ও দামে চড়া।
বাকেরগঞ্জের দুধল মৌ কারখানা নদীর তীরবর্তী এলাকার তরমুজ চাষী আ. বাতেন জানালেন, তিনি ৩ একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। এতে তার প্রায় তিন লাখ টাকা খরচ পড়েছে। তিনি দুই লাখ টাকা বাণিজ্য করবেন বলে আশা পোষণ করেন।
মাস দুয়েক পরে এ দাম কমার সম্ভাবনা আছে বলে জানিয়েছেন বরিশালের কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কর্মকর্তারা। খামারবাড়ি বরিশালের তথ্য মতে, গত মৌসুমে (২০২১-২২) বিভাগের ছয় জেলায় ৪৬ হাজার ৪৫১ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। যা গত মৌসুমের (২০২০-২১) চেয়ে ১১ হাজার ৭৬৩ হেক্টর বেশি। কারণ বিগত মৌসুমে ছয় জেলায় ৩৪ হাজার ৬৮৮ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছিল।
এরমধ্যে পটুয়াখালীতে ২২ হাজার ৮৯০ হেক্টর, বরগুনায় ১১ হাজার ৫১২ হেক্টর, ভোলায় ১১ হাজার ২৪৯ হেক্টর, বরিশালে ৬৪৬ হেক্টর, পিরোজপুরে ১০৬ হেক্টর এবং ঝালকাঠিতে ৪৮ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছিলো।
বরিশাল বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক শওকত ওসমান বলেন, গত বছর উৎপাদন ভালো হওয়ায় চলতি ২০২২-২৩ মৌসুমে ৬৪ হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষ হয়েছে। পটুয়াখালীতে ফলন সবচেয়ে ভালো দেখে এসেছি। তবে বাজারে আসতে আরো দেড় মাস সময় লাগবে।
শওকত ওসমান আরো বলেন, চলতি বছর বিভাগের প্রায় ২০ হাজার কৃষক তরমুজ উৎপাদনে মনোযোগী হয়েছেন।
এ সময় কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কর্মকর্তা শিউলি আকতার জানান, চলতি বছর পটুয়াখালীর ২৮ হাজার, ভোলায় ১৮ হাজার এবং বরগুনায় ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হচ্ছে। বরিশাল জেলাতেই শুধু তরমুজ চাষ খুব কম। এখানে ১ হাজার হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে বলে জানান তিনি।