নগরীতে আতশবাজী ও পটকার শব্দে আতংকিত শিশু ও বৃদ্ধরা! নগরীতে আতশবাজী ও পটকার শব্দে আতংকিত শিশু ও বৃদ্ধরা! - ajkerparibartan.com
নগরীতে আতশবাজী ও পটকার শব্দে আতংকিত শিশু ও বৃদ্ধরা!

3:45 pm , March 9, 2023

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ সকাল-সন্ধ্যা ও মধ্যরাতে আচমকা আতশবাজির শব্দে আতংকে কেঁপে উঠছে নগরীর শিশু ও বৃদ্ধরা। এমনকি পাখিদের মাঝেও শুরু হয় আতংকে উড়াউড়ি ও চেচামেচি। ইদানীং নগরীর নির্দিষ্ট কয়েকটি পয়েন্ট থেকে রাত বা দিন দুপুরে আচমকা আতশবাজি ফোটানো হচ্ছে। কে বা কারা, কেন এটা করছেন তা জানা না গেলেও তাদের কারণে বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার ঘটনা শোনা যায় হরহামেশাই। নগরীর ১৩ নং ওয়ার্ডের একজন বাসিন্দা তার শিশু সন্তান নিয়ে শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটতে ছুটতে বলেন,  রাতে আচমকা আতশবাজির শব্দে ভয়ে চিৎকার চেচামেচি করে তার সন্তান। পরে ঘুমের মধ্যে কেঁপে উঠছে বারবার। তাই ডাক্তারের কাছে যাচ্ছি।  একই অভিযোগ পাওয়া গেছে নগরীর ২০ নং ওয়ার্ড থেকেও। এখানে শিউলি আকতার নামের এক তরুণীর অভিযোগ, রাতে হঠাৎ আতশবাজির শব্দে বাবা ঘুম থেকে লাফিয়ে ওঠেন। তিনি হার্টের রোগী। বাইপাস সার্জারি হয়েছে। এখন তাকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে আবার।নগরীতে এরকম অবস্থা ও অভিযোগ অসংখ্য। এখানে সরকারি, বেসরকারি সব সংস্থাই আতশবাজি ফোটানোর মহা উৎসব পালন করেন যে কোনো উৎসবে। আর জন্মদিন, বিয়ে বা জাতীয় কোনো উৎসব পার্বন হলে তো কথাই নেই। রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি তখন তরুণদের মধ্যেও আতশবাজি করার প্রতিযোগিতা শুরু হয়। গত বছর ২৫ জুন যার অনন্য প্রমাণ রেখেছেন বরিশালের প্রায় সব রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলো। আর এতে করে শুধু মানুষই নয়, পশু পাখিদের মাঝেও এর প্রভাব পড়েছে বলে জানান পরিবেশবিদ কাজী মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, আপনারা লক্ষ্য করেছেন কিনা জানি না, চলতি বছর শীতকালীন অতিথি পাখিদের আগমন কিন্তু ছিলোনা বরিশালে। এটার অন্যতম কারণ এই আতশবাজি। এটা পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি বলে জানান বরিশাল জেলা অর্থনীতি সমিতির সভাপতি কাজী মিজান।
ঢাকার স্ট্যামফোর্ড, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ গ্লোবাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গবেষণায় উঠে আসা তথ্যানুযায়ী, শব্দ ও আলোক দূষণ যে কেবল মানবদেহেই প্রভাব ফেলে তা নয়, এর গভীর প্রভাব পড়ে অন্যান্য প্রাণি ও পক্ষীকুলের ওপরেও। কুকুরের শ্রবণক্ষমতা মানুষের প্রায় পাঁচ গুণ। মানুষের কাছে যা খুব ফিসফিস করা শব্দ। প্রাণিটির কাছে তা যেন হাজার ওয়াটের সাউন্ডসিস্টেম বাজানো। তাতেই পরিষ্কার হয়ে যায়, ৯০ ডেসিবেলের শব্দবাজি কুকুরের কাছে কতটা যন্ত্রণাদায়ক। আর পাখিদের অবস্থাতো বলাই বাহুল্য।
চলতি বছর নতুন ইংরেজি সালকে বরণ করা নিয়ে শুধু  ঢাকায় রাতের শব্দদূষণ নিয়ে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বরে (৯৯৯) ৩৬৫টি অভিযোগ এসেছে। রাত ১২টার পর এসব অভিযোগের ফোন আসে। এর মধ্যে ১৬০টি ফোন এসেছে ঢাকা মহানগর এলাকা থেকে। নতুন বছর বরণ করতে গিয়ে (থার্টি ফার্স্ট নাইটে) দেশের বিভিন্ন স্থানে আতশবাজি ও পটকা ফুটিয়ে, উচ্চ শব্দে গান বাজিয়ে ও হইহুল্লোড় করে শব্দদূষণ করার অভিযোগ করা হয়েছে। এ ছাড়া রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় ফানুস ওড়ানোর সময় অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে।
দীর্ঘ সময় নিয়ে বড় ধরনের আতশবাজির ভয়ংকর আনুষ্ঠানিকতা কোনোভাবেই কাম্য নয় বলে জানান বরিশাল জেলা ইমাম সমিতির সভাপতি মাওলানা আব্দুল মান্নান। তিনি বলেন, ইসলাম কিছুতেই এসব সমর্থন করে না। অথচ এ সংস্কৃতি দিন দিন ব্যাপক থেকে ব্যাপকতর হতে চলেছে।
মাওলানা মান্নান আরো বলেন, শুধু নববর্ষের উৎসবেই এটি থেমে নেই। বরং বিভিন্ন খেলা, টুর্ণামেন্ট ও উৎসবে আতশবাজির প্রয়োগ দিনকে দিন বাড়ছে। এটা বিভিন্ন দেশেই ঘটে চলেছে। এমনকি আমাদের দেশও এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। আতশবাজি বা কোটি কোটি টাকার আগুন-পটকা ফোটানোর উৎসব এখন আর ধনী দেশগুলোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই।
সম্প্রতি বিশ্ব সংস্থা অক্সফ্যামের একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, পৃথিবীর এক শতাংশ ধনী যে পরিমাণ সম্পদ ভোগদখল করেন তা বাদ বাকি নিরানব্বই শতাংশ মানুষের সমান। বিপুল বৈষম্য, অসম বণ্টন ও সম্পদ কুক্ষিগতকরণের চিত্র এটি। এর একটি উল্টো প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে এসব আতশবাজিতে। টাকাওয়ালারা টাকা উড়াচ্ছে। কোটি কোটি টাকা কয়েক মুহুর্তেই আগুনে পুড়িয়ে দিচ্ছে। বাতাসে মিলিয়ে দিচ্ছে। এ নিয়ে তারা কোনো রকম বিকার ও অস্বস্তিতেও ভুগছে না। চোখের সামান্য সুখের জন্য কয়েক মুহুর্তে সম্পদ জ্বালিয়ে দেওয়ার উৎসব চলছে। অথচ বিশ্বের অর্ধেক মানুষ এখনো চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করছে। স্বাভাবিক অন্নবস্ত্র তারা পায় না। সেখানে ধনী-গরিব কোনো রাষ্ট্রেরই এমন অপচয়মূলক কর্মকা-ে যুক্ত হওয়ার অর্থ দরিদ্রদের দারিদ্র্যের প্রতি কটাক্ষপাত। ধনী রাষ্ট্রগুলোর দায়িত্ব তাদের অতিরিক্ত সম্পদ দরিদ্র রাষ্ট্রগুলোর দারিদ্র্য বিমোচনে ব্যয় করা। সে দায়িত্ব যথাযথ পালন না করে আগুনে টাকা পুড়িয়ে উৎসব করার মানে দারিদ্র্যের প্রতি অমানবিক উপহাস। ইসলাম এ জাতীয় উৎসবকে কোনোভাবেই সমর্থন করে না বলে জানান তিনি।
রাজাধানীর স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদারের মতে আতশবাজি সাধারণভাবেই পরিবেশের জন্য বেশ ক্ষতিকর। এর ফলে অধিক পরিমাণে বায়ু ও শব্দ দূষণ ঘটে। গত পাঁচ বছরে নতুন বছরের আগের রাত থেকে পরের রাত ঢাকার বায়ুদূষণ ৩৩ শতাংশ বেড়ে যায় বলে তারা জরিপে দেখেছেন। তা ছাড়া থার্টিফার্স্ট নাইটে রাত ১১টা থেকে ১টার মধ্যে শোরগোলের (নয়েজ) পরিমাণ বেড়েছে ১১৩ শতাংশ! [সূত্র: বিডি নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২ জানুয়ারি, ২০২৩]। আতশবাজিতে ব্যবহৃত সালফার পুড়ে (অক্সিজেনের সঙ্গে দহন বিক্রিয়া করে) সালফার ডাই-অক্সাইড তৈরি করে যা পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর এবং অ্যাসিড বৃষ্টির জন্য দায়ী।
তবে আতশবাজি বা পরিবেশ দূষণ সংক্রান্ত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। এজন্য যে কোনো অভিযোগ প্রতিটি জেলা শহরের পুলিশ কমিশনারদের তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেয়া রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
বরিশাল মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন প্রোগ্রামে ও কমিউনিটি পুলিশিং সভায় সবাইকে অনুরোধ জানানো হয় আতশবাজি, পটকা ও উচ্চ শব্দে গান-বাজনা না করার জন্য। মানুষকে বোঝাতে হচ্ছে মানবিক কারনে, কিন্তু অসহনীয় পরিস্থিতি তৈরি করলে আর অভিযোগ পেলে আইনের আওতায় আনা হবে এবং কঠিন শাস্তির বিধান রয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT