3:53 pm , March 6, 2023

আরিফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিবেদক ॥ মঙ্গলবার শবে বরাত বা মুক্তির রজনী। বাঙালি মুসলিম পরিবারে এ দিনটিকে ঘিরে তৈরি হয় উৎসব আমেজ। ঘরে ঘরে পিঠা-পায়েসসহ নানা রকম খাবারের ধুম লেগে যায়। এ দিনে ঝাল-পিঠা তৈরি বরিশাল অঞ্চলের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য। বিশেষ করে গরুর মাংসের ঝোলে রুটি পিঠার উৎসব হতো একটা সময়। বড় বড় ষাড় বা মহিষ জবাই হতো, ভাগাভাগি করে বিক্রি হতো তা। কিন্তু গত কয়েকটি বছর সেই উৎসবে যেন মোড়ক লেগেছে। প্রথমে করোনা মহামারী সংকট, তারপর বাজারের উর্ধ্বগতিতে এ উৎসব এখন মলিন হয়ে গেছে। নগরীর বাজারে ৬ মার্চ সোমবার গরুর মাংসের দাম দেখা গেছে ৭৫০ টাকা কেজি। যা দুদিন আগেও ছিলো ৭০০ টাকা। বয়লার মুরগীর মাংস কেজি প্রতি ২৩০, লেয়ার- ২৯০, সোনালি মুরগী বিক্রি হচ্ছে ৩২০ থেকে ৩২৫ টাকায় আর দেশী মুরগী ৫০০-৫৮০ টাকার নিচে নেই কোথাও। খুদে প্রাণী কবুতরের ছানা একটি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা দরে। পাশেই ঘুরতে দেখা গেল ভ্রাম্যমাণ আদালতের গাড়ি। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটও আজ নিরব। কেননা বাজার দরের এই বৃদ্ধিতে স্থানীয় ব্যবসায়ী কারো খামখেয়ালি নেই। তাই কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে চলে গেলেন তারা।
এদিকে বাজারে লোকসমাগম আজ খুব কম বলে দাবী বাংলা বাজারের মাংস ব্যবসায়ীদের। গরুর মাংসের ব্যবসায়ী সালাম বললেন, আগে প্রতিদিন চার পাঁচটি গরুর জবেহ করতে হতো। কিন্তু গত এক সপ্তাহে মাত্র পাঁচটি গরুর জবেহ করেছি আমি। ক্রেতা নেই এখন।
একইকথা বললেন বরিশালের চরকাউয়া খেয়াঘাট সংলগ্ন বাজারের মুরগী বিক্রেতা কাওসার। তিনি বলেন, প্রতিদিন যেখানে ৩০০ পিসের বেশী মুরগী বিক্রি হতো সেখানে আজ বিক্রি হয়েছে মাত্র ৮০ পিস মুরগী। পোর্টরোডের সড়কে বসা সবজির বাজারে কিছুটা ভীড় চোখে পড়লেও মাংস ও মাছ বাজার যেন ফাঁকা। এখানে পদ্মাবতী সড়কের বাসিন্দা একজন মহিলা ক্রেতা বললেন, শাকপাতা কিনতে এসেছি। একটু টমেটো নিলাম। শবে বরাতে গরম ভাত আর টমেটো ভাজাই গরীবের জন্য অনেক। প্রতিদিন বাজারে মাছ মাংসের দাম বাড়ছে এ নিয়ে কিছু করেন। পাশেই কাচা মরিচ ক্রেতা বয়োবৃদ্ধ আসলাম সিকদার বলেন, আমি নিজে দেখেছি শবে বরাতে বিকেল থেকে শুরু হতো এ ঘরে ওঘরে খাবার নিয়ে ছুটাছুটি। বড় গামলায় ঢাকনি দিয়ে প্রতিবেশীর ঘরে ভালমন্দ খাবার পাঠানো একটা সুন্দর রেওয়াজ ছিলো আমাদের। সেটা আজ প্রায় উঠেই গেছে। সব কিছুর দাম বেড়েছে। কমেছে শুধু মানুষের দাম বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চলে যান বৃদ্ধ আসলাম সিকদার।বরিশালের চৌমাথা, নতুনবাজার সহ সব বাজারেই আজ যেন শোকাহত কোনো দিবস। শুধু দু-চারজন চাল ডাল চিনি ক্রেতার ভীড়। চাল ও আটার দাম আকাশ ছোঁয়া। চিনি এখন শতের উপরে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তেল-ডালে ওঠানামা বাঙালির ঘরে ঘরে বাজারের শোক।