3:52 pm , March 6, 2023

= এম.এম. আমজাদ হোসাইন =
আগামীকাল ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। সারা বিশ্বে নারীদের সামাজিক অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক অর্জনকে সম্মান জানাতে দিনটি ব্যাপকভাবে পালিত হয়। দিনটি লিঙ্গসমতা, প্রজননের অধিকার, নারীদের উপর হিংসা ও নির্যাতন, নারীর সমান অধিকার প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ন বিষয়গুলির উপর দৃষ্টি নিবন্ধ করে। সারাবিশ্বে প্রতিটি নারীকে উদযাপনে প্রলুদ্ধ করার জন্য দিনটি পালন করা হয়ে থাকে।
১৮৫৭ সালে আন্তর্জাতিক শ্রমজীবী নারী দিবস হিসেবে যে নারী আন্দোলন শুরু হয়েছিল তার অনেক ঘাত প্রাতিঘাত এবং ত্যাগের মহিমা রয়েছে। ১ মে যেমন আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস, ২১ ফেব্রুয়ারী যেমন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ত্যাগের মহিমা রয়েছে, তেমনি আন্তর্জাতিক নারী দিবসও অনেক ত্যাগের মহিমায় মহিমান্বিত।
পূর্বেই বলা হয়েছে সেটি ১৮৫৭ সালের ঘটনা। ঐ বছর মজুরী বৈষম্য কর্মঘন্টা নির্ধারন এবং কাজের অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধে আমেরিকার সুতা কারখানার নারী শ্রমিকরা তাদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নিউইয়র্কের রাজপথে নেমে আসে। ঐক্যবদ্ধ নারী শ্রমিকদের সেটাই ছিল প্রথম সংগ্রাম। কিন্তু সেই সংগ্রাম আর সামনে এগোতে দেয়নি সরকার ও কারখানা মালিকদের পেটোয়া বাহিনী। নারী শ্রমিকদের মিছিলে বেপরোয়া হামলা চালায় লেঠেল বাহিনীর সদস্যরা। শুরু হয় ব্যাপক দমন-পীড়ন। ফলে সঙ্গত কারনেই সেই আন্দোলন স্তিমিত হয়ে যায়।
ঐ ঘটনার বায়ান্ন বছর পর অর্থাৎ ১৯০৮ সালে নিউইয়র্কের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সম্মেলনের নেতৃত্বে ছিলেন জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী (রাজনৈতিক) ক্লারা জোটকিন। এরপরে আমেরিকার সোসালিস্ট পার্টি ১৯০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারী নিউইয়র্কে জাতীয় নারী দিবসের আয়োজন করে। দিবসটির প্রস্তাবক ছিলেন শ্রম কর্মী থেরেসা মালকিয়েল। আয়োজনটির পেছনের কারন ছিল গার্মেন্টস শ্রমিকদের প্রতি বৈষম্যের প্রতিবাদ।
এসবের ধারাবাহিকতায় ১৯১০ সালে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন। সম্মেলনে ১৭টি দেশের ১০০ নারী প্রতিনিধি অংশ গ্রহন করেন। ঐ সম্মেলনে ক্লারা জেটকিন প্রতিবছর ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করার প্রস্তাব উথাপন করেন। প্রস্তাবটির উপর আলোচনা পর্যালোচনার পর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে ১৯১১ সাল থেকে নারীদের সম অধিকার দিবস হিসেবে প্রতি বছর ৮ মার্চ নারী দিবস পালিত হবে। সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়নের জন্য অগ্রগামী ভূমিকায় এগিয়ে আসে বিভিন্ন দেশের সমাজতান্ত্রিক আদর্শবাদী নারী সমাজ। প্রতমটায় যেমনই হোক ১৯১৪ সাল থেকে বেশ কয়েকটি দেশের সমাজতান্ত্রিক মনোভাব সম্পন্ন নারী সমাজ ৮ মার্চ নারী দিবস হিসেবে পালন শুরু করে।
এমনিভাবে ক্রমবর্ধমান নারী দিবস পালন করার ৬১ বছর পর পর অর্থাৎ ১৯৭৫ সালে এসে জাতিসংঘ ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করার স্বীকৃতি দেয় এবং দিনটি পালন করার জন্য সদস্য দেশ গুলোকে আহবান জানায়। জাতিসংঘের সেই আহবানের পর থেকে বিভিন্ন দেশে নারীর সম অধিকার আদায়ের প্রত্যয় নিয়ে পালিত হয়ে আসছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পূর্বেও অর্থাৎ বাংলাদেশ পূর্বপাকিস্তান থাকার সময় থেকেই ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত হয়ে আসছে। মূলত দিবসটির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভের আগে থেকেই পাকিস্তানে সমাজতান্ত্রিক নারী সমাজ দিনটি পালন করতেন বলে জানা যায়।প্রসঙ্গত: একটি বিষয় উল্লেখ করার দাবী রাখে যে, নারী দিবস পালনের লক্ষ্য সকল দেশে কিন্তু এক ও অভিন্ন নয়। কোন কোন দেশে নারীর প্রতি সাধারন সম্মান ও শ্রদ্ধা হলো দিবসটি পালনের মূখ্য বিষয়। আবার কোন কোন দেশে নারীদের আর্থিক, রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠার বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্ব বহন করে। বাংলাদেশের নারীদের আর্থিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক অধিকারের বিষয়টিই নারী দিবসের মূল লক্ষ্য। ফলে বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশের নারী সমাজ গ্রাম থেকে গ্রামাঞ্চলে এবং শহরের কর্মজীবনে।বিশ্বের অনেক দেশেই আন্তর্জাতিক নারী দিবস সরকারী ছুটিরদিন এবং অনুষ্ঠানিকভাবে দিনটি পালন করা হয়। এধরনের দেশের মধ্যে রয়েছে আফগানিস্তান, আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, বেলারুশ, কম্বোডিয়া, বুরকিনা কাসো, কিউবা, জার্জিয়া, গিনিবিসাউ, ইরিক্রিয়া, কাজখাস্তান, ফিরগিস্তান, লাওস, মালদোবা, মঙ্গোলিয়া, মন্টেনিগ্রো, রাশিয়া, তাজিকিস্তান, তুর্কেমেনিস্তান, উগান্ডা, ইউক্রেন, উজবেকিস্তান, ভিয়েতনাম এবং জামিবয়া এছাড়া চীন, মেসিডোনিয়া মাদাগাস্কার ও নেপাল আন্তর্জাতিক নারী দিবসে শুধুমাত্র নারীরাই ছুটি ভোগ করে থাকে।