3:29 pm , March 4, 2023

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ নিজ পৈত্রিক ভিটায় স্বাস্থ্যসেবা ও পাঠাগার কার্যক্রম চালু করার উদ্যোগে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের স্থানীয় সরকার প্রশাসনসহ কতিপয় প্রভাবশালীরা। এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে ৪ মার্চ শনিবার দুপুর সাড়ে বারোটায় বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল বাসদ কার্যালয়ে সদস্য সচিব ডাঃ মনীষা চক্রবর্তী জানান , যারা আজ বাধা দিচ্ছে তারাই কিন্তু ২০২১ সালে এই সেবামূলক কাজের উদ্বোধন করেছিলেন। চেয়ারম্যান বশির ও ইউপি সদস্য শামীম দাঁড়িয়ে থেকে এই সেবা কার্যক্রমের ফিতা কাটেন। অজ্ঞাত কারণে তারা আজ আমাদের বর্গাচাষীর পক্ষ নিয়ে ওই জমি গাজীদের বলে রটিয়ে বেড়াচ্ছেন। বরিশাল আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী একটি মহল তাদের মদদ দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন মনীষা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাসদ সদস্য সন্তু মিত্র। এতে উল্লেখ করা হয় ‘এই দখলদার বাহিনী ইতিপূর্বে শহীদ সুধীর কুমার স্মৃতি পাঠাগার ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের তালা ভেঙে হামলা চালিয়েছিল। যার পরিপ্রেক্ষিতে একটি মামলা চলমান আছে ও আসামীদের অপরাধ ইতিমধ্যে তদন্ত প্রতিবেদনে প্রমাণিত হয়েছে। এই মামলার আসামী মজিবর গাজী, সুজন গাজী, শহিদুল গাজী রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের শ্যামপুরে মনীষার পৈতৃক ভিটায় পাহারাদার হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। এই গাজী পরিবারকে চার বছর আগে ২০১৯ সালেই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে অন্যত্র চলে যেতে বলা হয়। সেসময় বাকেরগঞ্জ থানার তৎকালীন ওসির মধ্যস্থতায় তারা গত বছরের জুলাই মাসের মধ্যে তাদের নিজ বাড়িতে চলে যাবার জন্য স্ট্যাম্প কাগজে অঙ্গীকারাবদ্ধ হন। যার প্রমাণাদি দেখানো হয় সংবাদ সম্মেলনে। সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয় জুলাই থেকে নয় মাস অতিক্রান্ত হলেও তারা তাদের নিজ বাড়িতে না গিয়ে বিভিন্ন কৌশলে সময়ক্ষেপণ করতে থাকে। সম্প্রতি শ্যামপুরে বাসদের বার্ষিক মিলনমেলা করার জন্য গত ১ মার্চ মনীষা চক্রবর্তী শ্যামপুরে ভেন্যু নির্ধারণ করতে যান। সেখানে তাদের নিজ বাড়ির উঠানে একটি কাঠের লাকড়ি রাখার পরিত্যাক্ত ঘর সরিয়ে তারা মিলনমেলার জন্য উঠান পরিষ্কার করেন। গাজী পরিবার এই ঘটনাকে উচ্ছেদের নাটক সাজিয়ে এলাকায় প্রচার করে ও নিজেরাই নিজেদের মালামাল সরিয়ে নেয় ও মূল ভিটাবাড়ির কিছু টিনও সরিয়ে ফেলে। পরবর্তীতে পুলিশ প্রশাসন বিষয়টি সমাধানের জন্য তাদের থানায় ডাকলেও তারা আসেনি ও বিষয়টি সমাধানে অস্বীকৃতি জানায়। জমি দখলের অপচেষ্টা সাধারণ মানুষ করতে পারে, কিন্তু কোন জনপ্রতিনিধি দখলদারদের পক্ষে দাঁড়িয়ে অন্যায়ের পক্ষে সমর্থন দেয়াটা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক ও নিন্দনীয় বলে উল্লেখ করেন বক্তারা । এসময় তারা বলেন, শহীদ সুধীর কুমার চক্রবর্তীর জমি যদি কেউ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জমি ভেবে দখল করার অপচেষ্টা করেন আর কোন জনপ্রতিনিধিও যদি এই অপচেষ্টায় মদদ দেন তাহলে তারা জমি দখলকারীদের সাগরেদ হিসেবেই পরিচিত হবেন। শ্যামপুরে স্থানীয় মেম্বারসহ বরিশাল ও বাকেরগঞ্জের একটি প্রভাবশালী মহল সরাসরি এই দখলদারদের পক্ষ নিয়েছেন এবং তারা এলাকায় ও সামাজিক গণমাধ্যমে নানা কুৎসা রটাচ্ছেন। তারা এই ঘটনায় সাম্প্রদায়িক রং ছড়িয়ে একটি বিদ্বেষমূলক পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করছে। এই প্রভাবশালী মহল এলাকায় দখলদারদের পক্ষে কাজ করছে। শহীদ সুধীর কুমার চক্রবর্তী স্মৃতি পাঠাগার ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কেউ গেলে তাদের উপর হামলা চালাতেও প্ররোচিত করছে। যে কারণে প্রশাসনের সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করে মনীষা চক্রবর্তী বলেন, শত বছরের পৈতৃক ভিটায় কোন মানবিক সেবামূলক প্রতিষ্ঠান করতে গেলে যদি কেউ এই ধরণের বাধার সম্মুখীন হয়, সেখান থেকেই দেশের সাধারণ মানুষের পরিস্থিতি অনুমান করা যায়। মনীষা এই দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য দ্রুত প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এসময় বাসদ নেতা শহিদুল ইসলাম ছাড়াও স্থানীয় সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলন শেষে বাকেরগঞ্জের রঙ্গশ্রী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বশির উদ্দীনকে ফোন করা হলে রিসিভি করেননি। ইউপি সদস্য শামীম জানান, গাজীরা ওখানে দীর্ঘদিন বসবাস করছে। হুট করে কেউ এসে তাদের বাড়িঘর ভেঙে দেয়ায় মানবিক কারণে আমাকে যেতে হয়েছে। পুরো বিষয়টি আইনগতভাবে সম্পন্ন হবে বলে জানান তিনি।