3:30 pm , March 3, 2023
স্বরুপকাঠি প্রতিবেদক ॥ স্বরুপকাঠিতে ইট ভাটায় কাঠ পোড়ানোর মহোৎসব চলছে। একদিকে উজাড় হচ্ছে বনাঞ্চল। অপরদিকে ভাটার কালো ধোয়া জনজীবন চরম ঝুকির সম্মুখীন। কয়লা দ¦ারা ইট পোড়ানোর শর্ত থাকলেও বেশির ভাগ ভাটায়ই কোন কয়লা ব্যবহৃত হচ্ছে না। বর্তমানে আস্ত গাছ ছোট ছোট টুকরা করে কুঠার, বাইশ দিয়ে বা স্ব-মিলে চেরাই করে দেদারছে ভাটায় পোড়ানো হচ্ছে। পরিবেশ আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে জনবসতি এলাকায় স্থাপিত হয়েছে ওইসব ভাটা। উপজেলার প্রায় শতভাগ ভাটায়ই কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। প্রকাশ্যে এসব কর্মকান্ড চললেও দেখার যেন কেউ নেই। সরেজমিনে পৌর শহরে প্রবেশের মুখে স্বরুপকাঠি সদর ইউনিয়নের উত্তর ছারছিনা গ্রামে দুইটি ভাটা। একটি ইভা অন্যটি ছারছিনা ব্রিক্স। ইভা ব্রিক্স ভাটায় শতভাগ কয়লা ব্যবহার করা হলেও পার্শবর্তী ছারছিনা ব্রিক্স এ প্রকাশ্যে শতভাগই কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। জলাবাড়ী ইউনিয়নে মামুন ব্রিক্স এর একটি ও সততা ব্রিক্স এর দুইটি ভাটা রয়েছে। মামুন ব্রিক্স সম্পূর্ন কয়লা দিয়ে ইট পোড়ালেও সততা ব্রিক্স এর একটিতে কয়লা অপরটিতে সম্পূর্ন কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। সুটিয়াকাঠি ইউনিয়নের সন্ধ্যা নদীর তীর এলাকায় আর বিএফ ব্রিক্স, লাকি ব্রিক্স, এমবিএফ ব্রিক্স, টিবিএফ ব্রিক্স নামের চারটি ভাটা রয়েছে। সেখানে সবগুলো ভাটায় পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। ছারছিনা ভাটার মালিক মনিরুল ইসলামের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, কয়লার দাম বেশি বিধায় কাঠ পোড়াচ্ছি। আমি একা না উপজেলা চেয়ারম্যানের সততা ব্রিক্সসহ সুটিয়াকাঠি এলাকার সবগুলো ভাটায় কোন কয়লা নেই সবাই কাঠ দিয়ে ইট পোড়ায়। বুঝেনতো সবাইকে ম্যানেজ করে ব্যবসা করতে হয়। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হকের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, সততা ব্রিক্স এর মালিক আমি নই। আমার কোন ইট ভাটা নেই। ওই ভাটার মালিক আমার বন্ধু বিধায় তাদের সাথে টাকা পয়সার লেনদেন আর ওঠা বসার কারনে কেউ কেউ ধারনা করতে পারেন আমি ভাটা ব্যবসার সাথে জড়িত। কিন্তু আমি ওই ব্যবসা করিনা। ওই ভাটার অপর মালিক মো. রুহুল আমিন বলেন, কয়লার খুব অভাব। দুটি ভাটায়ই কয়লা দিয়েই পোড়াতাম। বর্তমানে কয়লা পাওয়া যায় না বিধায় বাধ্য হয়ে একটিতে কাঠ পোড়াই। আর বিএফ এর মালিক বলেন, দেশেই কয়লা নেই। সামান্য কিছু কয়লা পেয়েছিলাম। তার দাম অত্যাধিক বিধায় পোষাতে পারি না। আমরা লাকড়ি পোড়াই না। পেকিং কাঠ চেরাই করে ব্যবহার করি। একইভাবে এমবিএফ এর মালিক হেকমত মিয়া, এলবিএফ এর মালিক সোহেল, টিবিএফ এর মালিক মুক্তাদির মিয়ার একই কথা ‘কয়লা পাওয়া যায়না বিধায় পেকিং কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। সম্প্রতি কয়লা পাওয়া গেলেও আকাশচুম্বি মূল্যের কারনে বাধ্য হয়ে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। অপর দিকে শতভাগ কয়লা পোড়ানো ভাটা ইভা ব্রিক্স এর মালিক মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, আগে কাঠ পোড়াতাম। সরকার কাঠ পোড়ানোর বিষয়ে কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন তাই একটুকরা কাঠও ব্যবহার করিনা। কয়লা দিয়ে ইট পোড়ালে ইট ভাল হয়। ব্যবসা বেশি না হলেও ইটের চাহিদা বেশি থাকে। এম এম ব্রিক্স এর মালিক মামুনের সাথে কথা বললে তিনি জানান, তার ভাটায় সম্পূর্ন কয়লা পোড়ানো হয়। তাছাড়া কাঠ পোড়াতে গেলে নানা ধরণের জটিলতায় পড়তে হয়। এ কারনে কষ্ট হলেও কয়লা সংগ্রহ করি।
এদিকে দিকে ইটভাটার মাটি যোগান দিতে সন্ধ্যা নদীর তীর, ফসলী জমির মাটি উজাড় হয়ে যাচ্ছে। বার বার জমির মালিক, জনতার তৎপরতায় প্রশাসনের আটক ছেড়ে দেওয়ার মধ্যে বহাল তবিয়তে চলছে মাটি কাটার মহোৎসব। একাধিকবার জরিমানাও করা হয়েছে ভ্রাম্যমান আদালতে। তবুও থামছে না এ কর্মকান্ড। উপজেলার জলাবাড়ী, সেহাঙ্গল, বিনায়েকপুর নদীর অপর পাড়ে রাজবাড়ী আবাসনের উত্তর পাশের খালের পার হয়ে সারেংকাঠি এলাকা থেকে ব্যাপক হারে কাটা হচ্ছে ফসলী জমির মাটি। কোন কোন স্থানে একজন মালিকের কাছ থেকে সামান্য টাকায় কিছু জমির মাটি কিনে লাগাতার ভাবে মাটি কেটে নদীর সাথে মিলিয়ে দিচ্ছে। স্বরূপকাঠি উপজেলার মাঝখান দিয়ে চলমান সন্ধ্যা নদীর দুই তীর প্রতিবছর ভাঙছে সমান তালে। বিলীন হচ্ছে হেক্টরের পর হেক্টর ফসলী জমি। অপর দিকে সরকারীভাবেও ভাঙন রোধে কোটিকোটি টাকা সন্ধ্যায় ঢালা হচ্ছে। প্রশাসনের নাকের ডগায় মাটি কাটা ও কাঠ পোড়ানোর ঘটনা ঘটলেও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এভাবে মাটি কাটার সাথে জড়িত উপজেলা সবগুলো ভাটা।
এ বিষয়ে নেছারাবাদ(স্বরুপকাঠি) উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাপস পালের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, নদীর তীর থেকে মাটি কেটে নেওয়া যাবেনা। গর্ত করে মাটি নেওয়ার সুযোগ নেই । এটা সম্পূর্ন অবৈধ। সাংবাদিকদের কাছ থেকে তথ্য পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে কোন মাটি কাটা ট্রলার পাওয়া যায়নি। আমরা নজদারী করছি। কেউ মাটি কাটলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাহাবুব উল্লাহ মজুমদার বলেন, আমাদের কাছে তথ্য আছে। অচিরেই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নদীর তীর থেকে মাটি কাটার কোন সুযোগ নেই। তথ্য পেয়ে সহকারী কমিশনার অভিযানে গিয়ে ছিলেন। কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে আমাদের নজরদারী রয়েছে। এ বিষয়ে বরিশাল পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক মো. আব্দুল হালিমের সাথে কথা বললে তিনি জানান, আমাদের কাছে অভিযোগ আছে। পর্যায়ক্রমে আমরা অভিযান করবো। স্বরুপকাঠিতে খুব শীগ্রই অভিযান করা হবে।