টিসিবির এক কার্ডে ওএমএস পণ্যসহ রমজানে খেজুরও চায় বরিশালবাসী টিসিবির এক কার্ডে ওএমএস পণ্যসহ রমজানে খেজুরও চায় বরিশালবাসী - ajkerparibartan.com
টিসিবির এক কার্ডে ওএমএস পণ্যসহ রমজানে খেজুরও চায় বরিশালবাসী

3:27 pm , March 2, 2023

আরিফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিবেদক ॥ শুধু তেল, ডাল, চিনি নয় ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) এক কার্ডেই রমজানের জন্য প্রয়োজনীয় সব উপকরণসহ ওপেন মার্কেট সার্ভিসের (ওএমএস) পণ্য চায় সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। তাদের অভিযোগ সরকারের ওএমএস ট্রাকে পৃথকভাবে চাল পেলে আটা পায়না, আবার আটা পেলে চাল পাওয়া যায়না। আবার কোথাও কোথাও ওএমএস ট্রাকে ২ কেজি চাল বা আটার সাথে তেল বা পিঁয়াজ নিতে বাধ্য করা হয়। এটা না করে টিসিবির এক কার্ডে একইসাথে চাল-ডাল, আটা, লবন, পিঁয়াজ, তেল ও চিনি ছাড়াও পবিত্র মাহে রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে খেজুরসহ প্রয়োজনীয় পণ্য পেলে খুব উপকার হবে। সাধারণ মানুষের এই দাবীতে সহমত পোষণ করেছেন বরিশালের সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ। বরিশাল সাহিত্য সংসদ এর সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দিন মানিক( বীর প্রতীক), বরিশাল অর্থনীতি সমিতির সভাপতি কাজী মিজানুর রহমান এবং বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সভাপতি নজমুল হোসেন আকাশ বলেন, টিসিবি ও ওএমএস পণ্য এক কার্ডে হওয়া উচিত। ঢাকায় খেজুর দেওয়া হয়, আর এখানে দেয়া হয়না। এ বৈষম্য কেন হবে বরং বরিশালে বা গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষের জন্য খেজুরটা সবচেয়ে জরুরি প্রয়োজন। তবে টিসিবি কর্মকর্তাদের দাবী সারাদেশে দু/একদিন আগে পরে এ কার্যক্রম শুরু হয়। সরকার থেকে যা সিদ্ধান্ত ও বরাদ্দ হয় তা আমরা সুষ্ঠু বন্টন করছি। এর বাইরে বাড়তি কিছু করার ক্ষমতা আমাদের নেই।
বরিশালে আগামী ১০ মার্চ থেকে টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু হবার সম্ভাবনা রয়েছে জানিয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সোহেল মারুফ বলেন, রমজানে দু,বার টিসিবি পণ্য দেয়া হবে। তাছাড়া চিনিটা নিয়েও একটু সমস্যা হয়েছে তাই দেরী হচ্ছে। সোহেল মারুফ আরো বলেন, খুব শীঘ্রই ওএমএস পণ্যও কার্ডে বিক্রি হবে বলে শুনেছি। এখনো কার্যক্রম শুরু হয়নি।
নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় বরিশাল বিভাগের ছয় জেলাতেই খোলাবাজারে (ওএমএস) চাল ও আটা এবং ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্য কিনতে স্বল্প আয়ের মানুষের লাইন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতম হচ্ছে। চাহিদার চেয়ে কয়েক গুণ মানুষের ভীড়।  ডিলারদের বরাদ্দ স্বল্পতার কারণে অনেকেই পণ্য না পেয়ে খালি হাতে ফিরে যাচ্ছেন। ভীড়ের কারণে পরপর কয়েক দিন লাইনে দাঁড়িয়েও ওএমএস পণ্য না পাওয়ার অভিযোগ বরিশালের অনেক ক্রেতার। তবে টিসিবি নিয়ে এমন অভিযোগ নেই কোথাও।
মাসখানেক ধরে বরিশালসহ সারাদেশেই নিত্যপণ্যের দাম দফায় দফায় বেড়েছে। চাল, ডাল, তেল, আলু, পিঁয়াজ ছাড়াও সবজি, মাছ, মুরগিসহ সব জিনিসের দাম এখন আকাশ ছোঁয়া। সরকার যতবার তেল, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে ততবারই লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে নিত্যপণ্যের দাম। তারউপর যুক্ত হয়েছে বৈশ্বিক অস্থিরতাও। ফলে গত এক মাসের ব্যবধানে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে ৩ থেকে ১০ টাকা। বেড়েছে অতি প্রয়োজনীয় ডিম, চাল ও আটার দামও। ফলে নি¤œবিত্তের পাশাপাশি মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষও এসে অনায়াসে ওএমএস ও টিসিবির পণ্য কিনতে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকছেন।  এমনকি জেলা শহরের পাশের উপজেলা ও বিভিন্ন গ্রাম থেকে মানুষ পণ্য কিনতে ওএমএস ও টিসিবির লাইনে ভীড় করেছেন। এতে স্পষ্ট যে, সরকারের টিসিবি কার্ড ও কার্ডের মাধ্যমে রেশনিং পদ্ধতিতে তেল ডাল, চিনি বিক্রি কার্যক্রম বরিশালসহ সারাদেশে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। বিশেষ করে সাধারণ খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের কাছে এটি একটি জনপ্রিয় ও অতিপ্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। যে কারনে ফেব্রুয়ারী মাসে টিসিবি পণ্য না পেয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর, চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পণ্য বিক্রি বিষয়ে খোঁজ নিয়েছেন সাধারণ উপকারভোগী ক্রেতারা। এমনই চিত্র দেখা গেছে  গত ২ মার্চ বৃহস্পতিবার বরিশাল নগরীর আমতলা মোড়ের ১৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়, রূপাতলী হাউজিং এলাকা, রসুলপুর বস্তি, নথুল্লাবাদ ও কাউনিয়া হাউজিং এলাকায়। স্থানীয় কাউন্সিলর কার্যালয়ে প্রতিদিন অন্তত ২০/২৫ জন এসে খোঁজ নিচ্ছেন টিসিবি পণ্য বিক্রির বিষয়ে। চরকাউয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম বলেন, তার কাছেও অনেকে  ফোন করে খোঁজ নিচ্ছেন।  নগরীর ১৩ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি হুমায়ন কবীর বলেন, রাস্তায় বের হলেই মানুষের জিজ্ঞাসা  টিসিবির পণ্য বিক্রি কবে শুরু হবে? গতমাসে পাইনি, রোজার মাসে কি পাবোনা? এবার খেজুর পাবোতো?
গত বছর রমজানে দুবার পণ্য পেয়েছে বরিশালবাসী। তখন তারা খেজুর পায়নি। এবার তাই সাথে খেজুর দেওয়ার দাবী বেশিরভাগ ক্রেতার। সর্বশেষ বরিশালে গত ২৩ জানুয়ারী টিসিবির পণ্য বিক্রি হয়েছে। এরপর ফেব্রুয়ারিতে কার্যক্রম বন্ধ থাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে টিসিবি পণ্য নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন তৈরি হয়। তবে গত ৮ ফেব্রুয়ারী বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি  জানান, মার্চের প্রথম সপ্তাহেই টিসিবি পণ্য বিক্রি শুরু হবে।
এরপর গত ২৭ ফেব্রুয়ারী মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টিসিবির মতো ওএমএস পণ্য বিক্রিতেও কার্ড পদ্ধতি চালুর নির্দেশ দেন। পরে ঐদিন বিকেলে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে প্রধানমন্ত্রীর ওই নির্দেশসহ মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো: মাহবুব হোসেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, চলমান ওএমএস কার্যক্রমে মাঝেমধ্যে ব্যবস্থাপনায় কিছু ঘাটতি সরকারের নজরে এসেছে। এজন্য প্রধানমন্ত্রী ব্যবস্থাপনার এই ঘাটতি উন্নতি করতে বলেছেন এবং টিসিবির পণ্যের মতো ওএমএস’র পণ্য কার্ডের মাধ্যমে দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। কার্ড কিভাবে ও কাদের দেয়া হবে, তা এখন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সাথে বসে ঠিক করা হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। আর কার্ড না হওয়া পর্যন্ত এখনকার মতোই ওএমএস কার্যক্রম চলবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে মার্চে টিসিবি পণ্যে রমজানের প্রয়োজনীয় উপকরণ থাকবে বলে জানিয়েছেন বরিশালের জেলা প্রশাসক মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি বলেন, পবিত্র রমজান মাসে টিসিবির পণ্য তালিকায় তেল, চিনি ও মসুর ডালের সাথে যোগ হবে ছোলা। কার্ডধারী ক্রেতারা এক কেজি করে চিনি, ছোলা ও দুই কেজি মসুর ডাল এবং দুই লিটার সয়াবিন তেল কিনতে পারবেন বলে জানান তিনি। তবে খেজুর দেয়া হবে কিনা তা এখনই কিছু জানেন না জেলা প্রশাসক।
এবিষয়ে টিসিবির কর্মকর্তারা জানান, চলতি সপ্তাহেই ঢাকায় টিসিবি পণ্য কিনতে পারবেন ক্রেতারা। এছাড়া রমজান উপলক্ষে সরকার টিসিবির মাধ্যমে ১ কোটি ৬০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল ক্রয় করছে।
বাজার চাহিদা বিবেচনায় দেখা গেছে, তেল-চিনি-মসুর ডাল-ছোলা-খেজুরের বাড়তি চাহিদা থাকে বলেই রোজায় এসব পণ্যের দাম বেড়ে যায়। প্রতি বছর বাড়তি দামেই নিত্য প্রয়োজনীয় এসব পণ্য কিনতে হয় ক্রেতাদের। তবে এবার রমজানে কিছুটা হলেও ভোক্তাদের স্বস্তি দেয়ার পরিকল্পনা করছে টিসিবি। মার্চেই যেহেতু রমজান শুরু হচ্ছে, তাই চলতি মাসেই পাওয়া যাবে রোজার জন্য বরাদ্দ পণ্য। কার্ডের সংখ্যা অথবা পণ্যে খেজুরের পরিমাণ বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে কি না, এমন প্রশ্নে টিসিবি চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ আরিফুল হাসান, পি.এস.সি. জানান, খেজুরের দাম খুব বেশি পরে যায়, আমরা সারাদেশে এটা দিতে চাইলে এককোটি কার্ডের জন্য ১০ হাজার মেট্রিকটনের বেশি খেজুর প্রয়োজন হবে। কিন্তু চলতি বাজেটে আমাদের আমদানি মাত্র ১১০০ মেট্রিকটন। যা শুধু ঢাকার নির্দিষ্ট কয়েকস্থানে দেয়া সম্ভব হবে। তাছাড়া জেলা উপজেলা পর্যায়ে খেজুরের চেয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের চাহিদা বেশি বলে জানান তিনি।
ওএমএস কার্ড বিষয়ে আরিফুল হাসান বলেন, আসলে টিসিবি কার্ডের এককোটি সুবিধাভোগীর মাঝেই  ওএমএস চাল দেয়ার বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তবে সাথে আটা দেয়ার বিষয়টিও আমাদের চিন্তায় রয়েছে। দামে পোষাতে পারলে হয়তো আটাও দেয়া সম্ভব হবে বলে জানান টিসিবি চেয়ারম্যান। তিনি আরো বলেন, পরিস্থিতি বিবেচনায় অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নিতে হবে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT