3:54 pm , March 1, 2023
কোতয়ালী পুলিশের সফল অভিযানে চক্রের ৫ সদস্য আটক
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ কাজের প্রলোভন দেখিয়ে দরিদ্র কিশোরীদের চোখ বেঁধে নিয়ে যাওয়া হতো গোপন আস্তানায়। সেখানে বাধ্য করা হতো দেহ ব্যবসায়। সম্প্রতি এক কিশোরী পালিয়ে গিয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ দিলে অপহরণকারীদের সন্ধানে নামে কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশ। ৮ ঘণ্টার মধ্যেই সেই গোপন আস্তানা থেকে জিম্মি থাকা আরও দুই কিশোরীসহ চক্রের পাঁচ সদস্যকে আটক করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে নগরীর আগুরপুর রোডস্থ মহিলা কলেজ গলির হাবিব ভবনে। গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টা থেকে এক ঘণ্টা অভিযান পরিচালনা করে অভিযুক্তদের আটক ও জিম্মি থাকা কিশোরীদের উদ্ধার করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন। তিনি জানান, নির্যাতিত এক কিশোরীর অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তদন্তে নেমে চক্রটির সন্ধান পায়। সন্ধ্যায় অভিযান চালিয়ে দুই কিশোরীসহ অভিযুক্ত পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। এখন যাচাই-বাছাই শেষে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নির্যাতনের শিকার কিশোরী জানায়, বরগুনার তালতলী উপজেলায় তার বাড়ি। পরিবারের অসচ্ছলতার কারণে একই এলাকার মেম্বার ও প্রতিবেশী এক নারী বরিশালে ভালো চাকরির প্রলোভন দেখায় তাকে। এমনকি ওই নারী তাকে ১০ ফেব্রুয়ারি বাসে করে নগরীর রুপাতলীতে নিয়ে আসেন। সেখানে আনার পরে একটি মাইক্রোবাসে তুলে চোখ বেঁধে একটি ফ্ল্যাটে নিয়ে আটকে রাখেন। ওই কিশোরী বলে, গ্রামের সেই নারী আমাকে বিক্রি করে দিয়েছে তা বুঝতে পারি যখন আমাকে ফ্ল্যাটে নিয়ে মারধর করে। আমি সেখানে গিয়ে দেখি আমার চেয়েও বয়সে ছোট ৫/৬ জন কিশোরী আছে। তাদেরও এভাবে জিম্মি করে দেহ ব্যবসা করাচ্ছে। আমাকে যিনি কিনেছেন তার নাম আবুল কালাম এবং তিনি ওই আস্তানা চালান। তার কথা না শুনলে মারধর এবং ধর্ষণ করতেন। যৌন সম্পর্কের সময় অমানবিক কষ্ট দিতেন। ১৭ বছর বয়সী ওই কিশোরী বলে, আমার মা গ্রামের বাড়িতে স্থানীয় মেম্বর ও প্রতিবেশী সেই নারীর ওপর চাপ সৃষ্টি করলে বরিশালের আস্তানা থেকে একদিন ভোর রাতে আমার চোখ বেঁধে মারধর করে গাড়িতে তুলে দেয়। মারধরের সময় আমার তলপেটে একাধিকবার লাথি মেরে নির্যাতন চালান কালাম। ২২ ফেব্রুয়ারি আমি তালতলি গ্রামের বাড়িতে যাই। ওই কিশোরীর মা বলেন, আমার মেয়েকে কাজ দেওয়ার কথা বলে আটকে রেখে ধর্ষণ ও মারধর করা হতো। বাইরের লোকদের কাছে রাতযাপনের জন্য বাধ্য করা হতো। এসব কথা সে গিয়ে আমাকে বলায় আমি থানায় গেলে তারা এসব অভিযোগ আমলে না নিয়ে মারামারির মামলা নেয়। পরে আমি ২৮ ফেব্রুয়ারি কোতোয়ালি মডেল থানায় গেলে পুলিশ আমার মেয়ের চিকিৎসার ব্যবস্থা করে এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে সেই আস্তানা খুঁজে বের করে আসামিদের আটক করে। উল্লেখ্য, চৌকস ওসি আনোয়ার হোসেন কোতয়ালী মডেল থানায় যোগদানের পর এই সফল অভিযান পুলিশের ভাবমুর্তি অনেকটাই উজ্জ্বল করেছে।