দাঁড়ানো যাত্রী নিতে বিআরটিসির ইজারাদারদের নতুন প্রতারণা দাঁড়ানো যাত্রী নিতে বিআরটিসির ইজারাদারদের নতুন প্রতারণা - ajkerparibartan.com
দাঁড়ানো যাত্রী নিতে বিআরটিসির ইজারাদারদের নতুন প্রতারণা

3:32 pm , February 27, 2023

আরিফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিবেদক ॥ নতুন কৌশলে যাত্রীদের সাথে প্রতারণায় নেমেছে বিআরটিসির ইজারাদাররা। নির্দিষ্ট সময়ের আগেই কাউন্টার ত্যাগ করে টিকিট যাত্রী রেখে দাঁড়ানো যাত্রী নেয়ার প্রতিযোগিতা শুরু করেছে তারা। যারফলে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন অগ্রিম টিকিটের ও নগদে টিকেট কেটে সিটে বসা বেশিরভাগ যাত্রী। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অগ্রীম টিকিটের একাধিক যাত্রী যদি বরিশালের নথুল্লাবাদ কাউন্টার ছাড়া অন্য কোনো কাউন্টার বা পথ থেকে ওঠার চাপ থাকে, তাহলেই চালক, হেলপার ও কাউন্টার ম্যানেজার পরিকল্পিত ভাবে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই গাড়ি নিয়ে ওই স্থান ত্যাগ করে। ফলে নির্দিষ্ট যাত্রীর আসনে অন্য যাত্রীকে নিয়ে ডাবল ভাড়া আদায় করে এবং টাকাটা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয় বলে অভিযোগ একাধিক যাত্রীর। বিআরটিসি বরিশালের এই নতুন প্রতারণায় হতভম্ব বরিশালের সাধারণ যাত্রীসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনও। সরেজমিনে ২৬ ফেব্রুয়ারী সোমবার বরিশাল থেকে খুলনা- সাতক্ষিরাগামী বিআরটিসি পরিবহনের যাত্রী হয়ে প্রতিবেদক নিজেই পড়েছে এই ভোগান্তিতে। সোমবার সকাল ৮ টার গাড়িটি প্রতিবেদককে বরিশাল নগরীর আমতলা মোড়ের পানির ট্যাঙ্ক থেকে তুলে নেয়ার শর্তে আগেরদিন রবিবার সন্ধ্যায় টিকিট কাটা হয়। সোমবার সকালে, ঠিক পৌনে আটটায় বিআরটিসি খুলনাগামী বাসটি আমতলা মোড় অতিক্রম করে চলে যায়। পিছন থেকে তাদের ইশারা দিলেও তা দেখেনা তারা। বয়স্ক মা’কে সাথে নিয়ে দৌঁড়ানো সম্ভব নয়। এটা সম্ভবত খুলনার গাড়ি নয়, এতো আগে কেন আসবে? তাই আটটা পর্যন্ত অপেক্ষা করে দ্রুত কাউন্টারে ফোন করলে বিআরটিসি বরিশালের অফিস কর্মকর্তা (এটিডি) মসিউর রহমান গাড়িটি থামার ব্যবস্থা করেন এবং রূপাতলী বাসস্ট্যান্ড পার হয়ে র‌্যাব-৮ কার্যালয়ের সামনে এসে গাড়িতে চড়তে প্রতিবেদককে রীতিমতো সময়, বাড়তি অর্থ ও বয়স্ক মায়ের শারীরিক কষ্ট পোহাতে হয়েছে। তারউপর গাড়ির চালক আজিজুল উল্টো রাগারাগি দেখালেন যাত্রীর সাথেই। চালককে তখন বাধ্য হয়েই প্রশ্ন করতে হয় – আপনি কি ওখানে গাড়িটা থামিয়ে ছিলেন?  প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমি কাউকে দেখতে পাইনি তাই থামাই নাই। তাছাড়া ওটা কাউন্টার নয়। এ সময় সুপারভাইজার জাহাঙ্গীর চালকের কথার প্রতিবাদ করেন ও বলেন, আমি এক মিনিটের জন্য ওখানে গাড়িটা থামাতে বারবার অনুরোধ করার পরও চালক গাড়িটা থামায়নি। যে কারণে এখন দশ মিনিট দাঁড়াতে হলো।  এই সুপারভাইজারকে দেখিয়েই গতদিন টিকিট কাউন্টারে বয়স্ক মা আছেন, তাই পথ থেকে ওঠার ঠিকানা ও ফোন নম্বর লিখে রাখা হয়। চালক আজিজুলের তাড়াহুড়ো খুব বেশি, সে পিছন থেকে সিটে বসার তাড়া দিয়ে গাড়ি ছেড়ে দিলো। এসব সহ্য করে সিটে বসতে যেয়ে  দেখা গেল, নির্দিষ্ট সিটে অন্য যাত্রী বসা। পুরো গাড়ির  ৬০/৬৩ সিট পরিপূর্ণ হবার পরও দাঁড়ানো যাত্রীর কারণে ভিতরে প্রবেশের উপায় নেই। ১৫-২০ জন দাঁড়ানো যাত্রীকে ঠেলে বাসের মাঝামাঝি ১২, ১৫,১৬ আসনে বসতে এবং সিট দখলে রাখা মহিলা যাত্রী সরাতে কতটা বিবেকহীন হতে হয়েছে তা সহজেই অনুমেয়। চোখে পড়ার বিষয় হচ্ছে দূরপাল্লার ৬০/৬৩  আসনের বিআরটিসির বেশিরভাগ যাত্রী ঝালকাঠি, পিরোজপুর ও বাগেরহাটের। খুলনা ও সাতক্ষীরার যাত্রীও কম নয়। কিন্তু এতো বড় গাড়িটির একটি মাত্র দরজা যাত্রী ওঠা-নামার জন্য যা সত্যি দুশ্চিন্তার ও ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়। এছাড়াও ফিটনেস বিহীন এমনকি মেরামত অযোগ্য বাসগুলোতে টিকিট ছাড়াও বাড়তি যাত্রী ও ভাড়া আদায় নিয়ে কথা-কাটাকাটি লেগেই ছিলো পুরোটা পথেই। বরিশাল থেকে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে প্রতিদিন এসি, নন এসি মিলিয়ে ৩২টি বিআরটিসি বাস চলাচল করে। এরমধ্যে ৫টি ইজারাদার নিয়ন্ত্রিত। বাকীগুলো সরাসরি সরকার নিয়ন্ত্রিত এখন বলে জানান বরিশালের ব্যবস্থাপক। এসি বাসগুলো চলছে বরিশাল-মাওয়া, কুয়াকাটা, দিনাজপুর ও খুলনায়। দেখতে অত্যাধুনিক মনে হলেও, ভিতরে এসি, টিভি এবং সাউন্ড সিস্টেমসহ সবই নষ্ট। এছাড়াও বেশিরভাগ গাড়ির ভাঙ্গা বডি জোড়াতালি দিয়ে টিকিয়ে রাখা হয়েছে কোনোভাবে। যশোর খুলনা, গোপালগঞ্জ ও পিরোজপুর হয়ে এখন চারটি এসি বাস চলাচল করছে। নামেই এসি এবং ভাড়াও আদায় হয় এসি বাসের। কিন্তু বাস্তবিক এগুলো ননএসি সার্ভিস। এ বিষয়ে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের কোনো বক্তব্য নেই। তবে দাঁড়িয়ে যাত্রী নেয়া নিষেধ দূরপাল্লার প্রতিটি যানবাহনে বলে জানান বিআরটিএ বরিশাল বিভাগের উপ পরিচালক জিয়াউর রহমান। আর বিআরটিসি বরিশালের ম্যানেজার জমশেদ আলী পুরো বিষয়টির জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ভবিষ্যতে দাঁড়ানো যাত্রী না নেয়া ও পথে নির্দিষ্ট সময়ের পরও ১ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করার জন্য সব সুপারভাইজার ও চালকদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আমরা চেষ্টা করছি বিআরটিসিকে লাভজনক ও জনপ্রিয় পরিবহন সেবা হিসেবে জনগণের কাছে প্রতিষ্ঠিত করতে। কিছু বাস এখনো পূর্বের নিয়মে ব্যক্তি মালিকানায় ইজারা দেওয়া রয়েছে। এ বাসগুলোতে চালক ও সুপারভাইজারদের মধ্যে দ্বন্দ্বের ফলে যাত্রী ভোগান্তি হচ্ছে বলে জানান তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT