3:32 pm , February 26, 2023
আরিফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিবেদক ॥ অক্ষর জ্ঞানহীন ভাসমান, বস্তিবাসী ও পথশিশুদের অনেকটা জোর করে ধরে এনে বিভিন্ন উপহার উপঢৌকন দিয়ে অক্ষর জ্ঞান শিক্ষা দেয়ার পাশাপাশি সমাজের অবহেলিত মানসিক প্রতিবন্ধীদেরও নিরাপদ আশ্রয় অজপাড়া গাঁ থেকে উঠে আসা একটি সংগঠন তরঙ্গ। একটি সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হিসেবে গত দুই বছরে সংগঠনটি স্থান দখল করে নিয়েছে বরিশাল জেলা ছাড়িয়ে দূর দূরান্তের মানুষের মনেও। একজন দুইজন করে এ সংগঠনের শিক্ষার্থীদের সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি বদলাচ্ছে সেবার ধরণও। প্রতি শুক্রবার বরিশালের কীর্তনখোলা নদী তীরবর্তী এলাকায় ঘুরে ঘুরে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি রাত-বিরাতে নগরীর ভাসমান অসহায় মানুষের পাশে সেবা ও খাবারের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে তারা। একইসাথে খুঁজে নিচ্ছে ভাসমান মানসিক প্রতিবন্ধীদের। জানা গেছে, ২০২০ সালের ২৪ এপ্রিল মানসিক ভারসাম্যহীন ও ভবঘুরে মানুষের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে বরিশালের বাকেরগঞ্জ থেকে কাজ শুরু করে তরঙ্গ সংগঠনটি। এ কাজের পাশাপাশি ছিন্নমূল পথশিশুদের উন্নত শিক্ষা দানের লক্ষ্য নিয়ে তরঙ্গের পাঠশালা কার্যক্রম শুরু হয়। যেখানে শিক্ষা পাচ্ছে সমাজের হতদরিদ্র, পথভ্রষ্ট ও মাদকাসক্ত শিশুরাও। এই কার্যক্রমের মাধ্যমে চলতি বছরের শুরু থেকে সপ্তাহে ১টি দিন (শুক্রবার) বরিশাল মুক্তিযোদ্ধা পার্কে খোলা আকাশের নিচে বিনামূল্যে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করছে তরঙ্গ সংগঠন। প্রতিদিন ক্লাস শেষে সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করে তারা। অনেকটাই শিক্ষার বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি এটি। বর্তমানে ‘তরঙ্গের পাঠশালা’তে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৫ জন বলে জানান সংগঠনটির পরিচালক রেদোয়ান ইসলাম। তিনি বলেন, সংগঠনটির কোনো প্রকার দাতা কিংবা সরকারি সহযোগিতা নেই, স্বেচ্ছাসেবীদের নিজ নিজ অর্থায়নেই চলছে চলমান এ কার্যক্রম। রেদোয়ান ইসলাম ছাড়াও আরো কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবী স্বপ্নবাজ তরুণ আব্দুল্লাহ, বায়েজিদ চৌধুরী, ইফতেখার সাদিদের হাত ধরে এই সংগঠনটির জন্ম। এই তরুণদের নিয়ে আলোকিত সমাজ গড়ার স্বপ্ন দেখতেন রেদোয়ান। তাই পড়াশোনার পাশাপাশি পরিবার থেকে পাওয়া হাত খরচের টাকা জমিয়ে সুযোগ পেলেই খাবার নিয়ে ছুটে যেতেন রাস্তার পাশে পড়ে থাকা অবহেলিত মানুষের কাছে। একই সঙ্গে বন্ধুদের নিয়ে নিজ এলাকার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম ও অসহায় দরিদ্র পরিবারের পাশে দাঁড়াতেন। করোনাকালে নিজ গ্রামের ক্ষুধার্ত পরিবারের মধ্যেও খাবার পৌঁছে দিতেন তারা। গরিব ও অসহায়দের শিক্ষা উপকরণ, খাদ্য, চিকিৎসা ও মৌলিক চাহিদা পূরণের পাশাপাশি, রক্তদানে উৎসাহিতকরণ ও বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ নির্ণয়সহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন তারা। সংগঠন সম্পর্কে জানতে চাইলে এর প্রতিষ্ঠাতা রেদোয়ান বলেন, ‘মানসিক ভারসাম্যহীন বা ভবঘুরে মানুষের খাবার, বস্ত্র ও চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছি আমরা। বর্তমানে আমাদের সঙ্গে দেশের ১৪ জেলায় প্রায় ৫৮৫ জন তরুণ স্বেচ্ছায় এই কাজ করে যাচ্ছে। এ ছাড়া আরও ৪টি প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছি আমরা। মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষের মাসে একবার চুল, দাঁড়ি ছাঁটা, নতুন পোশাক পরিধান করিয়ে পরিপূর্ণ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করা ও তরঙ্গের পাঠশালার মাধ্যমে পথশিশুদের সপ্তাহে একদিন ফ্রি পাঠদান ও পুষ্টিকর খাবার প্রদান। তরঙ্গ ব্লাডের মাধ্যমে জরুরি রক্তদানে জনসাধারণকে উৎসাহিত করা এবং শহরের অলিগলিতে থাকা শারীরিক দিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত প্রাণীদের সেবা প্রদানের মাধ্যমে সুস্থ করে তোলার কথা জানান রেদোয়ান।