নিত্যপণ্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি : দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগের সাথে বাড়ছে ক্ষোভ নিত্যপণ্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি : দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগের সাথে বাড়ছে ক্ষোভ - ajkerparibartan.com
নিত্যপণ্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি : দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগের সাথে বাড়ছে ক্ষোভ

3:22 pm , February 26, 2023

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ দক্ষিণাঞ্চলে চাল, চিনি, ডাল, লবন, ভোজ্য তেল আর রান্নার গ্যাস সহ প্রায় প্রতিটি নিত্যপণ্যের লাগামহীন মূল্য বৃদ্ধির দুঃসহ যন্ত্রনায় সাধারন মানুষের দুর্ভোগ চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। শীত বিদায়ের সাথে সবজির দামের স্বস্তিও উধাও হতে শুরু করেছে। বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের যেকোন বাজারে এক কেজি ঢেড়স বিক্রী হচ্ছে ১২০ টাকায়। অন্যান্য সবজির দামও গত এক সপ্তাহে ২৫Ñ৫০ ভাগ বেড়েছে। রান্নার গ্যাস আর ভোজ্য তেল সাধারণ গৃহস্থের অস্বস্তিকে ইতোমধ্যে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে গেছে। বিদ্যুতের বাড়তি দাম ইতোমধ্যে প্রতিটি পরিবারে বাড়তি দুর্ভোগ সৃষ্টি করেছে। বাজেট সংকুলান না হওয়ায় শহরের জীবন ব্যবস্থায় অনেক পরিবারের খাদ্য তালিকা থেকে মাছ ও গোশত অনেকটাই উঠে যেতে শুরু করেছে। দক্ষিণাঞ্চলের নি¤œ ও নি¤œ-মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো এখন মেহমান বাড়ীতে এলে অস্বস্তিতে ভোগেন। আউশের পরে আমনের ভরা মৌসুমে ভাল উৎপাদনের পরেও চালের দাম কমার পরিবর্তে ক্রমশ বাড়ছে। গত বছর একই সময়ে তুলনায় এবার ফেব্রুয়ারীতে প্রতি কেজি চালের দাম ১০-১২ টাকা বেশী। অথচ সদ্য সমাপ্ত খরিপ-২ মৌসুমে বরিশাল কৃষি অঞ্চলে ৮ লাখ ৭০ হাজার হেক্টরে জমিতে প্রায় ২০ লাখ ৫৬ হাজার টন চাল উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রাও অতিক্রম করেছে বলে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর-ডিএই জানিয়েছে। এর আগে খরিপ-১ মৌসুমে এ অঞ্চলে প্রায় ৬ লাখ টন আউশ চাল উৎপাদন হয়েছে বলে ডিএই সূত্রে বলা হয়েছে। এমনকি চলতি রবি মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ৩ লাখ ৬৯ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের মাধ্যমে আরো প্রায় ১৭ লাখ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যে এখন মাঠে কৃষি যোদ্ধারা। আবাদকৃত আরো প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে ১ লাখ ৫৫ হাজার টন গম উৎপাদনের ব্যাপারেও আশাবাদী কৃষিবীদরা ।চাল ও সবজি সহ খাদ্য শস্যের কোন ধরনের সংকট বা ঘাটতি সম্ভাবনা না থাকলেও সব নিত্যপণ্যের দাম সাধারন মানুষকে যথেষ্ট অস্বস্তিতে রেখেছে। ফলে হতাশার সাথে বাড়ছে ক্ষোভ। একইভাবে ডালের দামও সাধারন মানুষকে কোন ধরনের স্বস্তি দিচ্ছে না। সয়াবিন সহ সব ধরণের ভোজ্য তেল এখনো সাধারণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। ১৩০ টাকা কেজি চিনি কেনার ক্ষমতা বেশীরভাগ মানুষের নেই। ভেজাল আখ ও খেজুর গুড়ের ভীড়ে আসল হারিয়ে যেতে বসলেও তা কেনার ক্ষমতাও এখন অনেক মানুষের নেই।এদিকে অন্যসব নিত্য পণ্যের সাথে মাছ-গোশতের বাজারেও উত্তাপ ক্রমশ বাড়ছে। ৮শ টাকা কেজির নিচে কোন মাছ নেই বাজারে। অথচ প্রায় ৫ লাখ টন উদ্বৃত্ত দক্ষিণাঞ্চল থেকে মাছ যাচ্ছে রাজধানী সহ সারা দেশে। এক কেজি ওজনের নিচের সাইজের ইলিশের কেজিও এখন হাজার টাকার ওপরে। গরুর গোশতের কেজি সাড়ে ৭শ টাকা হলেও খাশি প্রায় ১১শ টাকা কেজি। ফলে গোশত কেনা এখন নি¤œ-মধ্যবিত্ত থেকে মধ্যবিত্তের জন্য কল্পনা বিলাস।  ব্রয়লার মুরগির কেজি গত এক বছরে প্রায় ৫০ টাকা বেড়ে এখন ২৩০ টাকা। কর্ক ও সোনালী মুরগির দামও বছরের মাথায় কেজিতে প্রায় একশ টাকা বেড়ে ৩শ টাকা ছুঁয়েছে। ফলে দক্ষিণাঞ্চলের বেশীরভাগ পরিবারের পাত থেকে মাছের মত গোশত উঠে যেতে বসেছে।এদিকে এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে মাহে রমজান শুরু হচ্ছে। রোজাকে সামনে রেখে গত বছর রাষ্ট্রীয় বানিজ্য সংস্থা-টিসিবি সারা দেশের মত দক্ষিণাঞ্চলেও ছোলাবুট, খেজুর, চিনি ও সয়াবিন তেল বিক্রী করলেও এবার আর তা হচ্ছে না। গত বছর ঈদ উল ফিতরের পর থেকেই টিসিবি খোলা বাজার থেকে সরে দাঁড়িয়ে ‘এক কোটি পরিবারকে স্বল্পমূল্যে খাদ্যপণ্য সরবরাহের আওতায় দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় ৬ লাখ পরিবারকে ১ কেজি করে চিনি, এক লিটার ভোজ্যতেল ও ২ কেজি করে মুসুর ডাল দিচ্ছে। এ কার্যক্রমকে অনেকে সাধুবাদ জানালেও খোলাবাজারে বিক্রী কার্যক্রম বন্ধ থাকায় সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষই একটু কম দামে নির্দিষ্ট কয়েকটি নিত্যপণ্য কেনার সরকারী এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এমনকি গত বছর খোলা বাজারে টিসিবি’র পণ্য বিক্রীর ফলে বাজারে মূল্য বৃদ্ধি যতটা নিয়ন্ত্রনে ছিল, এবার তা অনুপস্থিত থাকায় সাধারন মানুষ ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন বলেও অভিযোগ সাধারন মানুষের। ফলে আসন্ন রমজানে নিত্যপণ্য নিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের সাধারন মানুষের দুর্ভোগ কোন পর্যায়ে যাবে তা নিয়ে শংকা আছে বেশীরভাগ মানুষের। অপরদিকে বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের কোথাও গত মাসখানেক ধরে সরকার নির্ধারিত মূল্যে রান্নার গ্যাস মিলছে না। সাড়ে ১২ কেজির সিলিন্ডার দেড় হাজার টাকার পরিবর্তে এখন ১৭শ টাকায় বিক্রী হচ্ছে। ডিলারদের দাবী, ‘গ্যাস কোম্পানীগুলোই ডিলারদের কাছে সাড়ে ১২ কেজি গ্যাস বিক্রী করছে দেড় হাজার টাকার ওপরে’। পাইকারী ডিলাররা তা ৩০টাকা মুনাফায় সাব-ডিলারদের কাছে বিক্রী করলেও সেখান থেকে আর কোন নিয়ন্ত্রন থাকছে না। ফলে ভোক্তারা সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে দুইশ টাকা বেশী দামে গ্যাস কিনতে বাধ্য হচ্ছে। গত বছর ফেব্রুয়ারী মাসে বরিশাল মহানগরীতে সাড়ে ১২ কেজি এলপি গ্যাস বিক্রী হয়েছে ১২শ টাকারও কমে।

এই বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT