4:25 pm , February 20, 2023

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ বরিশাল জেলা ও মহানগর বিএনপি নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে বিতর্কিত কমিটি গঠনের অভিযোগ চারিদিকে। জেলা দক্ষিণ ও উত্তর বিএনপির নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ সবচেয়ে বেশি। অভিযোগ থেকে বাদ যায়নি কেন্দ্রীয় নেতারাও। অনুসন্ধানে গত ২০ ফেব্রুয়ারী উঠে এসেছে এ চিত্র। এদিন সকাল সাড়ে দশটায় বরিশালের সদর রোডে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া উপজেলা ও পৌর কমিটির বাদ পরা অংশের বিক্ষোভ সমাবেশে অসংখ্য অভিযোগ তুলে ধরা হয় কেন্দ্রীয় কয়েক নেতা ও উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব শহীদুল্লার বিরুদ্ধে। বিশেষ করে শহীদুল্লাহর বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে কমিটি গঠনের অভিযোগ করেন বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা। অন্যদিকে জেলা দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবুল হোসেন টাকার বিনিময়ে নিজের পছন্দের লোকদের কমিটিতে স্থান দেয়ার অভিযোগ একাধিক। উভয়পক্ষই প্রতিবাদ সমাবেশ করছে এবং কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে এসে মারামারি হট্টগোল বাজাচ্ছে। যা এই মুহূর্তে বিএনপির জন্য প্রচ- ক্ষতিকর বলে দাবী সাধারণ নেতাকর্মী ও সমর্থকদের।
একই দিনে বরিশাল দক্ষিণ এবং উত্তরের কমিটিও বাতিল করে ঘোষণা হয় আহ্বায়ক কমিটি। ওইদিন ৩ কমিটিতে আহ্বায়ক, যুগ্ম আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব হিসেবে যে ৭ জনের নাম ঘোষণা হয় তারা প্রায় সবাই এখানে সরোয়ার বিরোধী হিসেবে পরিচিত ছিলো। এরপর ২০২২ সালের ২২ জানুয়ারী রাতে পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা প্রকাশ করা হয়। তখন নতুন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক বলেন, মহানগর বিএনপির কমিটি ছিল ১৭১ সদস্যের। পক্ষান্তরে আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মাত্র ৪২ জন। এখানে সবাইকে রাখা যাবে না এটাই স্বাভাবিক। তারপরও এই ৪২ জনের মধ্যে ২৬ জনই ছিলেন সাবেক মহানগর কমিটিতে। কে কোন পক্ষের সেটা বিবেচনা করে কমিটি হয়নি। আন্দোলন সংগ্রামে যারা ভূমিকা রাখতে পারবে, তারাই রয়েছেন কমিটিতে। এর ঠিক একবছর পর বিভিন্ন অভিযোগে নান্টু ও মেবুল প্যানেল সরিয়ে ২০২২ সালের ১৫ নভেম্বর বরিশাল জেলা (দক্ষিণ) এর আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে আবুল হোসেনকে আহ্বায়ক এবং অ্যাডভোকেট আবুল কালাম শাহীনকে সদস্য সচিব করা হয়। অন্যদিকে একই সময়ে অনেক টানাপোড়েনের পর বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির আগের কমিটি বিলুপ্ত করে ৫৭ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়। এতে দেওয়ান মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ কে আহ্বায়ক এবং সদস্য সচিব করা হয় মিজানুর রহমান মুকুলকে। এসময় মহানগর বিএনপিকে ওয়ার্ড কমিটি গঠনের পাশাপাশি বিভিন্ন সভা সমাবেশ সফলভাবে সম্পন্ন করতে দেখা গেলেও যুবদল ও ছাত্রদলের নেতৃত্ব সংকট স্পষ্ট হয়ে ওঠে। গত বছরের ১১ মার্চ নগরীর ৩০টি ওয়ার্ড কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। ৩০ ওয়ার্ডে কমিটি গঠনে মহানগর বিএনপি’র ৬ যুগ্ম আহ্বায়ক ও একজন সদস্যকে প্রধান করে ৭টি সাংগঠনিক টিম গঠন করা হয় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশে। নেতাকর্মীদের দাবি মহানগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে মহানগর যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক, সদস্য সচিব, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সহসভাপতি সহ দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা ব্যক্তিদের দিয়ে ওয়ার্ড কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে করে ওয়ার্ডের ত্যাগী বিএনপি নেতারা বঞ্চিত হয়েছে।ঘোষিত ওয়ার্ড কমিটির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব অনেককে চেনেন না বলে দাবী করেছেন মহানগর বিএনপি’র সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক তারিন। কাউন্সিলে বেশী ভোট পাওয়ার জন্য মহানগরীর শীর্ষ দুই নেতা ত্যাগীদের উপেক্ষা করে তাদের নিজস্ব অনুসারীদের নিয়ে ওয়ার্ড কমিটি গঠন করছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন।
সর্বশেষ গত ১২ ফেব্রুয়ারী টাকার বিনিময়ে জাতীয় পার্টির নেতাদের দিয়ে কমিটি গঠনসহ নানা অভিযোগে বিক্ষোভ সমাবেশ, ঝাড়ু মিছিল ও বরিশাল জেলা উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের ছবিতে আগুন দিয়েছে গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া উপজেলা বিএনপির নেতারা। ২০ ফেব্রুয়ারী তারা বরিশালে বিএনপির কার্যালয়ের সামনে একইদাবীতে প্রতিবাদ সমাবেশ করে আগৈলঝাড়া বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস এম আফজাল হোসেনসহ অনেকে। তবে এ বিষয়ে সমাবেশে অংশ নেয়া দলীয় একজন কর্মী বলেন, কেন কি জন্যে আমরা এখানে এসেছি তা আগে বলেনি কেউ। যাতায়াত খরচ পাঠিয়ে আসতে বলেছেন তাই এসেছি। এদিকে গৌরনদী আগৈলঝাড়ার সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির মিডিয়া সেলের প্রধান জহির উদ্দিন স্বপন এ বিষয়ে কিছুই জানেন না দাবী করে নবগঠিত কমিটির এক নেতা বলেন, যারা প্রতিবাদ আন্দোলন করছেন, তাদের বেশিরভাগের নামই কমিটিতে রয়েছে। শুধু গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখা হয়নি বলে কেউ কেউ ক্ষুব্ধ হয়ে এসব করছেন এবং তাদের দিয়ে এটা অন্যকেউ করাচ্ছে তা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। এদিকে বাকেরগঞ্জে আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে এবং মুলাদিতে শহীদুল্লাহ ও মুকুলের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ। বিএনপি নেতা মাহবুবুল ইসলাম মাহবুব বলেন, ‘বিএনপির উত্তর জেলার আহ্বায়ক দেওয়ান মো. শহিদুল্লাহ ও সদস্য সচিব মিজানুর রহমান মুকুল অর্থ বাণিজ্যের মাধ্যমে ত্যাগী ও নির্যাতিতদের বাদ দিয়ে একজন সাবেক সংসদ সদস্যের দোসরদের নিয়ে কমিটি গঠন করায় তৃণমূলের নেতাকর্মীরা তা প্রত্যখান করেছেন। মুলাদী উপজেলা ও পৌর নেতারাও কমিটি প্রত্যাখান করেছেন বলে জানান তিনি। বিষয়টি শুনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন বলেন, বরিশালকে খুব গুরুত্ব সহকারে দেখছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এখানের প্রতিটি বিষয়ে তিনি নজর রাখছেন। যে কারণে আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারী বরিশাল নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠক ডেকেছেন তিনি।
জেলা উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক দেওয়ান মোহাম্মদ শহীদুল্লাহকে ফোনে পাওয়া না গেলেও জেলা দক্ষিন আহবায়ক আবুল হোসেন বলেন, কমিটি গঠন নিয়ে পত্রিকা ও মিডিয়ায় অর্থ-বাণিজ্য সহ অনেক রকম অভিযোগ উঠেছে। এসব কারণে কমিটি ভেঙ্গে আহ্বায়ক কমিটি করা হচ্ছে। পূর্বের নেতারা স্বার্থসিদ্ধির জন্য পকেট কমিটি করতেন তাদের লোকেরাই এখনো বিভিন্নভাবে সোচ্চার রয়েছে। তারাই এসব অভিযোগ রটাচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা কোন কিছুই নিজেদের স্বার্থে করছি না, দলের স্বার্থে করছি দাবী করে আবুল হোসেন আরো বলেন, আহ্বায়ক কমিটিতো সব নয়, পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের পর বলা যাবে বাছাই সঠিক হয়েছে কি হয়নি।