3:29 pm , February 18, 2023

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ তরিকায়ে নকসবন্দিয়া মোজাদ্দেদিয়ার উপমহাদেশের অন্যতম বৃহত দরবার বিশ^ জাকের মঞ্জিলের উরশ শরিফে গত তিন দিনের মত শণিবারেও দিনরাত জন¯্রােত অব্যাহত ছিল। মঙ্গলবার সকালে আখেরী মোনাজাত পর্যন্ত এ জন¯্রােত অব্যাহত থাকবে। অতীত ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় শুক্রবার জুমার নামাজ বাদে মিলাদ এবং দেয়া শেষে হজরত মাওলানা শাহসুফি সৈয়দ খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেবের রওজা শরিফ জিয়ারতের মাধ্যমে বিশ^ জাকের মঞ্জিলে এবারের উরশ শরিফের সূচনা হয়েছে। ঐদিন মাগরিব নামাজ বাদ দু রাকাত করে ৬ রাকাত নফল নামাজ এবং ফাতেহা শরিফ পাঠের পরে মোনাজাতের মাধ্যমে এ উরশ শরিফের কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।
ফরিদপুরের আটরশির বিশ^ জাকের মঞ্জিলের এ উরশ শরিফে যোগদানে দেশের বাইরে থেকেও বিপুল সংখ্যক জাকেরান ও আশেকান সহ মুসুল্লীয়ানগন সমবেত হয়েছেন। শণিবার বিকেলে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সংযুক্ত সড়ক ও মহাসড়ক ধরে জন¯্রােত ছিল এ দরবার শরিফ মুখী। ভরতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মেঘলয়, ত্রিপুরা, বিহার ছাড়াও উত্তর প্রদেশ এবং সুদুর কাশ্মির থেকেও বেশ কিছু জাকেরান ও আশেকানগন এ দরবারে পৌছেছেন। শুধু কুচবিহারের প্রায় ৩শ জাকেরানের কাফেলা বিশ^ জাকের মঞ্জিলে পৌছে গত বুধবার। তরিকায়ে নকসবন্দিয়া-মোজাদ্দেদীয়ার নিয়ম অনুযায়ী বিশ^ জাকের মঞ্জিলে পাঁচ ওয়াক্তিয়া ফরজ ও সুন্নত নামাজ ছাড়াও প্রতিদিনই রাতের শেষ প্রহরে রহমতের সময়ে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে এবাদত বন্দেগীর কার্যক্রমের সূচনা হয়ে থাকে। উরশ শরিফের সময়ও একই কার্যক্রম অব্যাহত থাকছে। এরপরে মিলাদ ও দোয়া মোনাজাত ছাড়াও জিকির শেষে লক্ষÑলক্ষ জাকেরান ও আশেকানবৃন্দ জামাতের সাথে ফজরের নামাজ আদায়ন্তে ফাতেহা শরিফ ও খতম শরিফ পাঠের মাধ্যমে এ উরশ শরিফের প্রতিদিনের কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন। বিশ^ জাকের মঞ্জিলের খাদেমবৃন্দ সহ দেশের বিশিষ্ট ওলামায়ে কেরামগনও এ উরশ শরিফে ওয়াজ করছেন।
এ দরবারে ফজর থেকে এশার নামাজ জামাতের সাথে আদায় সহ নফল নামাজ, মোনাজাত এবং মোরাকাবা-মোশাহেদা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নকসবন্দিয়াÑমোজাদ্দেদীয়া তরিকার নিয়ম অনুযায়ী বাদ ফজর ও বাদ মাগরিব ফাতেহা শরিফ পাঠন্তে মোনাজাত এবং বাদ এশা ৫শ বার দরুদ শরিফ পাঠন্তে নবী করিম(সাঃ)-এর পাক কদম মোবারকে নজরানা দেয়া হচ্ছে। এছাড়াও জোহর, মাগরিব ও এশার নামাজন্তে নফল নামাজ আদায় এবং দোয়াÑমোনাজাতও অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে।
বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের পীর খাজা এনায়েতপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেব শণিবার ছবেহ ছাদেকের সময় জন্ম গ্রহন করেছিলেন। তিনি ওফাত লাভ করেন রোববার দুপুর সোয়া ১২টায়। তার দাফন হয় সোমবার বাদ আসর। আর বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের পীর ছাহেব এর দাদা হুজুর, হজরত মাওলানা শাহ সুফি সৈয়দ খাজা ওয়াজেদ আলী (রঃ) ছাহেব ওফাত লাভ করেন মঙ্গলবার। আপন পীর ও দাদা হুজুরের জন্ম-মৃত্যুর এসব দিবসকে হিসেব করেই প্রতিবছর ফাল্গুন মাসের প্রথম শণিবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে ৪ দিন ব্যাপী মহাপবিত্র বিশ্ব উরশ শরিফ উদযাপিত হয়ে থাকে।
বিশ্ব জাকের জাকের মঞ্জিলের পীর ছাহেব নিজেও সোমবার দিবাগত মধ্যরাতের পরে মঙ্গলবার ওফাত লাভ করেন। এসবেরই ধারাবাহিকতায় আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে উরশ শরিফের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
বিশ^ জাকের মঞ্জিল ও সংযুক্ত প্রায় ২৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এ উরশ শরিফের এন্তেজাম ইতোপূর্বেই সম্পন্ন হয়েছে। সমবেত জাকেরান ও আশেকান সহ মুসুল্লীয়ানদের অজু ও আহার সহ এক সামিয়ানার নিচে নামাজ আদায় এবং অবস্থানের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। উরশ শরিফ উপলক্ষে এ দরবার শরিফের খাবার মাঠে দিনরাত একই সাথে অর্ধ লক্ষাধিক মানুষের খবার পরিবশেন করা হচ্ছে।