3:34 pm , February 14, 2023
কাজী মিরাজ ॥ একদিকে পহেলা ফাল্গুন ও বসন্তের আগমনে প্রকৃতি ও নদীর জলকেলি খেলা। অন্যদিকে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস নামের ভালোবাসা ফেরিওয়ালার লাল সাদা ফুল হাতে সঙ্গী খোঁজার মেলা। দু’টো এক হয়ে একাকার আজ বরিশালের বঙ্গবন্ধু উদ্যান, মহিলা কলেজ, বিএম কলেজ ও হাতেম আলী কলেজের আঙ্গিনায়। এ যেন বাসন্তী আর হলুদ রংয়ের মেলা নেমেছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ নগরীর চৌমাথা ও বিবির পুকুর পাড়ে। কীর্তনখোলা নদী তীরবর্তী এলাকায়ও ফাঁকা নেই কোথাও। যানবাহনের ভিড় সামলাতে হিমশিম চৌমাথা ও বটতলা মোড়ে ট্রাফিক কনস্টেবলের চোখেমুখের বিরক্তি। লুকিয়ে তারাও যেন ফুলেল শুভেচছা জানাতে ব্যাকুল রিক্সা আরোহিণীদের। বসন্ত আর ভালোবাসা এতোদিনে মিলেছে একইদিনে। তাই উৎসবমুখরতাও অন্যান্য সময়ের চেয়ে অনেক বেশি বলে জানালেন প্রকৃতি প্রেমিক কবি সদানন্দ সরকার। তিনি বলেন, সচরাচর ১৩ ফেব্রুয়ারীতে পহেলা ফাগুন ও বসন্তের আগমনী দিন পালিত হয়েছে বাংলাদেশে। করোনাকালীন সংকটে বাধ্যবাধকতা ছিলো গত তিনটি বছর। এবার তা নেই তারউপর ক্যালেন্ডারের পাতায় এবারই প্রথম ফাগুনের প্রথম দিনে ভ্যালেন্টাইন্স ডে যুক্ত হয়েছে তাই উৎসবটাও বড় হয়ে গেছে। তবে পহেলা ফাল্গুন আর বসন্তের আগমনী বার্তায় নির্দিষ্ট দিনক্ষণ থাকলেও ভালোবাসার কোন দিনক্ষণ নেই। বিশেষ করে বাঙালির প্রতিটি দিনই ভালোবাসার দিন বলে দাবী করেন কবিদের প্রায় সবাই।
যদিও বাংলাদেশ তথা সারাবিশ্বে পৃথকভাবে নির্দিষ্ট একটি দিনকে ভালোবাসা দিবস আখ্যায়িত করা হয়েছে। আর এ দিনটি পালিত হচ্ছে কোনো এক ভ্যালেন্টাইন্স নামক সৈনিক বা ধর্মযাজকের স্মরণে।
যার ইতিহাস বিভিন্ন গল্পে আস্বাদিত। তবে সবচেয়ে ব্যবহৃত গল্পটি হচ্ছে – সেন্ট বা সন্তো ভ্যালেন্টাইন নামের এক রোমান ক্যাথলিক ধর্মযাজক ছিলেন। তিনি ধর্মযাজক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছিলেন চিকিৎসকও। সে সময় রোমানদের সম্রাট ছিলেন দ্বিতীয় ক্লডিয়াস। বিশ্বজয়ী রোমানরা একের পর এক রাষ্ট্র জয় করে চলেছে। আর যুদ্ধের জন্য প্রয়োজন শক্তিশালী সেনাবাহিনী। কিন্তু, সমস্যা দাঁড়ায় তরুণীদের নিয়ে। তারা যে কিছুতেই তাদের পছন্দের পুরুষটিকে যুদ্ধে পাঠাতে চায় না। তখন সম্রাট ক্লডিয়াস মনে করলেন, পুরুষরা বিয়ে না করলেই বোধ হয় যুদ্ধে যেতে রাজি হবে। ভাবনাটার বাস্তবায়ন করলেন তিনি। বিয়ে নিষিদ্ধ করলেন সম্রাট। কিন্তু ভালবাসার তাড়নায় ছুটে চলা তারুণ্যকে কি আর আইন করে বেধে রাখা যায় এগিয়ে এলেন সেন্ট বা সন্তো ভ্যালেন্টাইন। তিনি নিজে সকল প্রেমে আবদ্ধ তরুণ -তরুনীদের এক করার ব্যবস্থা করলেন, বিয়ে দিলেন সবাইকে। কিন্তু সেই প্রথা বেশি দিন তার ধারা বজায় রাখতে পারলো না। ধরা পড়লেন ভ্যালেন্টাইন। তাকে বন্দী করা হলো।
কিন্তু, তখন নতুন করে আরেকটা সমস্যা দেখা দিল। তার অনেকে ভক্তরাই ভ্যালেন্টাইন’কে দেখতে কারাগারে যেতেন। দিয়ে আসতেন তাদের অনুরাগের চিহ্ন হিসেবে অনেক ধরনের ফুলের শুভেচ্ছা। তাদের মধ্যে একটি অন্ধ মেয়েও ছিল শোনা যায়, সেন্ট ভ্যালেন্টাইন তার অন্ধত্ব দূর করেন। শুধু যে তার দৃষ্টি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন তাই নয়, সঙ্গে মেয়েটির প্রেমে আবদ্ধ হয়ে ধর্মযাজকের আইন ভেঙে তাকে বিয়েও করে জীবনসঙ্গী করেন তিনি। কিন্তু তারপর এমন একটা খবর রাজার কানে পৌঁছোতেই তিনি ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেন। ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার আগে, প্রিয়াকে লেখা ভ্যালেন্টাইনের শেষ চিঠিতে ছিল ‘লাভ ফ্রম ইউর ভ্যালেন্টাইন’। আর সেই দিনটিও ছিল ১৪ই ফেব্রুয়ারি।
৪৯৬ খ্রিস্টাব্দে পোপ গেলাসিয়াস প্রথম এই দিনটিকে ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’ হিসেবে ঘোষণা করেন। ১৭০০ শতাব্দীতে দিনটিকে জনপ্রিয়ভাবে পালন শুরু করে ব্রিটেন। শুরু হয় হাতে লেখা কার্ড অথবা উপহার বিনিময়। এরপর ১৮৪০ সালে বাণিজ্যিকভাবে প্রথম ‘ভালবাসা দিবস’-এর উপহার তৈরি শুরু করেন। উল্লেখ্য, পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো ‘ভ্যালেন্টাইন কার্ড’-টি সংরক্ষিত আছে লন্ডনের ব্রিটিশ মিউজিয়ামে।
আর বাংলাদেশে ‘ভালোবাসা দিবস’ উদযাপন যিনি চালু করেন তিনি হচ্ছেন সাংবাদিক শফিক রেহমান। ১৯৯৩ সালে তার সম্পাদিত যায়যায়দিন পত্রিকায় প্রথম এই দিনটিকে উপলক্ষ করে বিশেষ ‘ভালোবাসা সংখ্যা’ বের করেছিলেন তিনি। দিনে দিনে সে ভালোবাসা দিবস বাংলাদেশে রূপ নিয়েছে রীতিমত উৎসবে।