3:29 pm , February 12, 2023

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ চাল, চিনি, ডাল, লবন, ভোজ্য তেল আর রান্নার গ্যাস সহ প্রায় প্রতিটি নিত্যপণ্যের লাগামহীন মূল্য বৃদ্ধির দু:সহ যন্ত্রনায় সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ কষ্টের সময় অতিক্রম করছে। তবে আগের তুলনায় সবজির দাম প্রায় অর্ধেক হ্রাস পাওয়ায় কৃষকের কপালে চিন্তার ভাজ পরলেও সাধারন মানুষ কিছুটা স্বস্তিতে। বিদ্যুতের বাড়তি দাম চলতি মাসেই প্রতিটি পরিবারে বাড়তি দুর্ভোগ সৃষ্টি করেছে। বাজেট সংকুলান না হওয়ায় শহরের জীবন ব্যবস্থায় অনেক পরিবারের খাবারের তালিকা থেকে মাছ ও গোশত উঠে যেতে শুরু করেছে। কোন মেহমান বাড়ীতে আসা ছাড়া অনেক পরিবারের সদস্যদের খাবারের তালিকায় এখন আর মাছ-গোশত দেখা যায়না।
আউশের পরে আমনের ভরা মৌসুমে ভাল উৎপাদনের পরেও চালের দাম কমার পরিবর্তে ক্রমশ বাড়ছে। গত বছর একই সময়ের তুলনায় এবার ফেব্রুয়ারীতে প্রতি কেজি চালের দাম ১০-১২ টাকা বেশী। অথচ সদ্যসমাপ্ত খরিপ-২ মৌসুমে বরিশাল কৃষি অঞ্চলে ৮ লাখ ৭০ হাজার হেক্টরে জমিতে প্রায় ২০ লাখ ৫৬ হাজার টন চাল উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে ডিএই’র দায়িত্বশীল মহল। এর আগে খরিপ-১ মৌসুমে এ অঞ্চলে প্রায় ৬ লাখ টন আউশ চাল উৎপাদন হয়েছে বলে ডিএই সূত্রে বলা হয়েছে। এমনকি চলতি রবি মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ৩ লাখ ৬৯ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের মাধ্যমে আরো ১৬ লাখ ১৮ হাজার ৩৮৪ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যে এখন মাঠে কৃষি যোদ্ধারা। আরো প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে গমের আবাদ সম্পন্ন হয়েছে। ফলে ১ লাখ ৫৫ হাজার টন গম উৎপাদনের ব্যাপারেও আশাবাদী কৃষিবীদরা।
ফলে খাদ্য শস্যের কোন ধরণের সংকট বা ঘাটতি সম্ভাবনা না থাকলেও এসব নিত্যপণ্যের দাম সাধারন মানুষকে যথেষ্ট অস্বস্তিতেই রেখেছে। একইভাবে ডালের দামও সাধারন মানুষকে কোন ধরনের স্বস্তি দিচ্ছে না। সয়াবিন সহ সব ধরণের ভোজ্য তেল এখনো সাধারনের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। ১৩০ টাকা কেজি চিনি কেনার ক্ষমতা বেশীরভাগ মানুষের নেই। ভেজাল আখের ও খেজুরি গুড়ের ভীড়ে আসল হারিয়ে যেতে বসেছে। তাও কেনার ক্ষমতা এখন অনেক মানুষের নেই।
এদিকে অন্যসব নিত্য পণ্যের সাথে মাছ-গোশতের বাজারেও উত্তাপ ছড়াচ্ছে। ৮শ টাকা কেজির নিচে কোন মাছ নেই বাজারে। অথচ প্রায় পৌনে ৫লাখ টন উদ্বৃত্ত দক্ষিণাঞ্চল থেকে মাছ যাচ্ছে রাজধানী সহ সারা দেশে। এক কেজি ওজনের নিচের সাইজে ইলিশের কেজিও এখন হাজার টাকার ওপরে। গরুর গোশতের কেজি সাড়ে ৭শ টাকা হলেও খাশি প্রায় ১১শ টাকা কেজি। ফলে গোশত কেনা এখন নি¤œ-মধ্যবিত্ত থেকে মধ্যবিত্তের জন্য দুঃস্বপ্নের। বেশীরভাগ পরিবারের খাবারের তালিকা থেকে গোশত উঠে যেতে বসেছে। ব্রয়লার মুরগির দাম গত এক বছরে কেজিতে প্রায় ৫০ টাকা বেড়ে এখন ২শ টাকার ওপরে। কর্ক ও সোনালী মুরগির দামও বছরের মাথায় কেজিতে প্রায় ১শ টাকা বেড়েছে।
এদিকে মাত্র দেড় মাসেরও কম সময়ের মধ্যে মাহে রমজান শুরু হচ্ছে। রোজাকে সামনে গত বছর রাষ্ট্রীয় বানিজ্য সংস্থা-টিসিবি সারা দেশের মত দক্ষিণাঞ্চলেও ছোলাবুট, খেজুর, চিনি ও সয়াবিন তেল বিক্রী করলেও এবার আর তা হচ্ছে না। গত বছর ঈদ উল ফিতরের পর থেকেই টিসিবি খোলা বাজার থেকে সরে দাঁড়িয়ে ‘এক কোটি পরিবারকে স্বল্পমূল্যে খাদ্যপণ্য সরবরাহের আওতায় দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় ৬ লাখ পরিবারের মধ্যে এক কেজি করে চিনি, এক লিটার ভোজ্যতেল ও ২ কেজি করে মুসুর ডাল বিক্রী করছে। এ কার্যক্রমকে সকলে সাধুবাদ জানালেও খোলাবাজারে বিক্রী কার্যক্রম বন্ধ থাকায় সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষই সরকারী এ সুবিধা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ সবার। এমনকি গত বছর খোলা বাজারে টিসিবি’র পণ্য বিক্রীর ফলে বাজারে মূল্য বৃদ্ধি রোধে যে নিয়ন্ত্রন ছিল এবার তা অনুপস্থিত। ফলে আসন্ন রমজানে নিত্যপণ্য নিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের সাধারন মানুষের দুর্ভোগ কোথায় যাবে তা নিয়ে শংকা আছে বেশীরভাগ মানুষের। অপরদিকে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের কোথাও এখন সরকার নির্ধারিত মূল্যে রান্নার গ্যাস মিলছে না। সাড়ে ১২ কেজির সিলিন্ডার দেড় হাজার টাকার পরিবর্তে এখন ১৭শ টাকায় বিক্রী হচ্ছে। ডিলারদের দাবী, ‘গ্যাস কোম্পানীগুলোই ডিলারদের কাছে সাড়ে ১২ কেজি গ্যাস বিক্রী করছে ১,৫২০ টাকায়’। পাইকারী ডিলাররা তা ৩০টাকা মুনফায় সাব-ডিলারদের কাছে বিক্রী করলেও সেখান থেকে আর কোন নিয়ন্ত্রন থাকছে না। গত বছর ফেব্রুয়ারী মাসে বরিশাল মহানগরীতে সাড়ে ১২ কেজি এলপি গ্যাস বিক্রী হয়েছে ১২শ টাকায়।