ভোলায় ১১২টি তালিকার মধ্যে ৩৪টি ইটভাটা অবৈধ ভোলায় ১১২টি তালিকার মধ্যে ৩৪টি ইটভাটা অবৈধ - ajkerparibartan.com
ভোলায় ১১২টি তালিকার মধ্যে ৩৪টি ইটভাটা অবৈধ

3:34 pm , February 10, 2023

ইটভাটায় সরকারি সংরক্ষিত বনের গাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছে
মো: আফজাল হোসেন, ভোলা ॥ ভোলার ইটভাটা গুলোতে কয়লার পরিবর্তে কাঠ পোড়ানোর যেন প্রতিযোগীতা শুরু হয়েছে। এসব ইটভাটায় সরকারি সংরক্ষিত বনের গাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছে। এজন্য ইটভাটায় স্বমিল বসিয়ে গাছ কাটার ব্যবস্থা করেছে। আর সবই হচ্ছে প্রশাসনের নাকের ডগায়। এর বাইরেও অনেক অবৈধ ইটভাটা রয়েছে। ভোলা সদর থেকে প্রায় ৭০কিলোমিটার দূরে চরফ্যাশন উপজেলা। যেখানে গড়ে উঠেছে সবচেয়ে বেশি বৈধ আর অবৈধ ইটভাটা। এসব ভাটায় জ্বালানী হিসেবে কাঠ পোড়ানোর প্রতিযোগীতা শুরু হয়েছে। সবকিছুই যেন ম্যানেজ করেই হচ্ছে। অথচ এসব বনের গাছ ঝড় আর জলোচ্ছ্বাসের  সময় ঢাল হিসেবে ভোলাবাসীর পাশে দাঁড়ায়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি ভোলা। জেলাটিতে পরিবেশ দূষণের কল কারখানা খুব একটা না থাকলেও বিষফোড়ার মত হয়েছে কাঠ জ্বালানো এসব ইটভাটা।
এসব ইটভাটার আশপাশে বসবাস করা অসহায় সাধারণ মানুষ অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন। অত্যাচার জুলুম সহ্য করে নিশ্বাসের সাথে বিষ গ্রহণ করছে এসব মানুষ। শুধু তাই নয় অভিযোগ রয়েছে ভেকু দিয়ে ভেঙ্গে দিয়েছে ঘর-বাড়ি আর মিথ্যা মামলা দিয়ে উচ্ছেদ করা হচ্ছে ইটভাটার আশপাশের পরিবার গুলোকে।
চরফ্যাশনের চর মায়ার শানিমা-২ নামক ইটভাটার আশপাশের পরিবার গুলো রয়েছে বেশি অত্যাচারে। তাদের একাধিক ঘর-বাড়ি দখলে নিয়ে ভেকু দিয়ে ভেঙ্গে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। শুধু তাই নয় বর্তমানে যারা রয়েছে তাদের বিভিন্ন ধরণের মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করার অভিযোগ করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার।
শানিমার মালিকদের একজন মো: শাহীন মহাজন মুঠোফোনে বলেন,আসলে বাংলা আর ছোট চিমনি থাকায় লাইসেন্স পাচ্ছি না। আরেকটার কাগজ আছে তাই দিয়ে এটা চালাচ্ছি। আমরা প্রশাসন, পরিবেশ, সাংবাদিক সবাইকে ম্যানেজ করেই চালাচ্ছি। এজন্য অপর মালিক মামুনই সব করছে। গত বছর আমাদের চিমনি ফেলে দিয়েছে প্রশাসন এসে। জমির প্রসঙ্গে বলেন,স্থানীয় চেয়ারম্যাসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরাই সমাধান করে দিয়েছে। কাঠ জ্বালাচ্ছি সব ম্যানেজ করেই।
এদিকে অবৈধভাবে পরিচালিত আব্দুল্লাহপুর ইউনিয়নের ফকিরহাটে অবস্থিত মাইশা ইটভাটা। ওই ভাটায় ভিডিও এবং সংবাদ সংগ্রহে গেলেই ঘিরে ফেলে ইটভাটার লোকজন। ইট ভাটার ভিডিও করতে দেখেই অফিস থেকে ছুটে আসেন ইটভাটার ম্যানেজার মো: ইউসুফ। ভিডিও না করা এবং ছবি না করার জন্য ক্যামেরা ধরে টানাটানি করে। এক পর্যায় ইটভাটার মালিককে ফোন দেয় ও ভিডিও করা এবং ইটভাটা ঢোকার জন্য হুমকি প্রদান করে। শুধু তাই নয় এমন বহু ইটভাটা রয়েছে যে গুলোতে চিমনির ব্যবহার, জ্বালানী হিসেব কাঠ পোড়ানোর যেন প্রতিযোগীতা শুরু হয়েছে। মাইশার ম্যানেজার মো: ইউসুফ বলেন, প্রশাসন থেকে শুরু করে সব ম্যানেজ করা। কেউ আসার সাহস করে না, তুই আসলি কেন ?
সাইসার মালিক মো: সায়েম মুঠোফোনে কেন ইটভাটায় গেলাম জানতে চান এবং চরফ্যাশন বাজারে এসে তার সাথে দেখা করার জন্য বলেন। এছাড়াও একজন ইউপি চেয়ারম্যান দিয়ে ফোন করান যাতে কোন সংবাদ প্রকাশিত না হয়।
এদিকে বিভিন্ন সরকারী বন থেকে গাছ কেটে  ইটভাটায় পাঠানোর কথা স্বীকার করেন চরফ্যাশনের ঢালচর বনের দুই শ্রমিক। তারা বলেন, প্রতিদিন বন কর্মকর্তাদের সাথে মিলেমিশে এসব বনের গাছ কেটে একাধিক ট্রলারে বোঝাই করে ইট ভাটায় পাঠানো হচ্ছে।
ইটভাটায় জ্বালানী হিসেবে কাঠ ব্যবহার করার কথা স্বীকার করেন আব্দুল্লাহপুর ফকিরহাট এলাকার অপর ইটভাটা ফাহিম ব্রিকস এর ম্যানেজার মো: জাহাঙ্গীর আলম। ওই ভাটায় গিয়ে দেখা যায় ইঞ্জিনচালিত নৌকা থেকে কাঠ নামাচ্ছে। পাশেই স্ব-মিল। তার মতে বেশির ভাগ ইটভাটায় কয়লার পরিবর্তে জ্বালানী হিসেবে কাঠ ব্যবহার করা হচ্ছে। তাতে খরচ অর্ধেকের চেয়েও কম। একলাখ ইট পুড়তে কয়লায় খরচ হবে ৪ লাখ ৪২হাজার টাকা আর কাঠ দিয়ে পুড়তে দরকার ২ লাখ ৩২হাজার টাকা। ১৭টন কয়লার বিপরীতে কাঠ দরকার ১৫শ মণ। একটি ইটভাটায় ৭০লাখ ইট পুড়তে ১লাখ ৫হাজার মণ কাঠ পুড়তে হচ্ছে একটি ইটভাটায়। সরকারী হিসাবে জেলায় ১১২টি ইটভাটার তালিকা রয়েছে। এর মধ্যে ৭৮টি বৈধ আর ৩৪টি অবৈধ।  বৈধতার মধ্যে আবার বহু ইটভাটা রয়েছে যাদের ২০১৫ ও ১৬ সালের নবায়ন হলেও এর পরে আর নবায়ন করা হয়নি। তবে পরিবেশ অধিদপ্তর এর তালিকায় রয়েছে ৯৮টি।
পরিবেশ অধিদপ্তর ভোলা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো: তোতা মিয়া বলেন, ৯৮টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে ১০টি অবৈধ। অবৈধ ইটভাটা এবং কাঠ ব্যবহার করা ইটভাটা গুলোতে অভিযান চালানো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এধারা অব্যাহত থাকবে। তবে নিজস্ব ম্যাজিস্ট্রেট না থাকায় অভিযান চালাতে সমস্যা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT