নিপা ভাইরাস : রেড জোনে বরিশাল, বিভাগে বিশেষ সর্তক বার্তা জারি নিপা ভাইরাস : রেড জোনে বরিশাল, বিভাগে বিশেষ সর্তক বার্তা জারি - ajkerparibartan.com
নিপা ভাইরাস : রেড জোনে বরিশাল, বিভাগে বিশেষ সর্তক বার্তা জারি

3:43 pm , February 6, 2023

পিপিই পরিধান না করে জ¦রের রোগীর চিকিৎসা প্রদান না করতে নির্দেশ
হেলাল উদ্দিন ॥ করোনার আতংক থাকলেও এবার শীতে দেশে করোনার সংক্রমন ছিলো না বললেই চলে। ফলে এক ধরণের স্বস্তির মধ্যেই ছিলো মানুষ। কিন্তু হঠাৎ এই স্বস্তির মধ্যে অস্বস্তি নিয়ে এসেছে নিপা ভাইরাস। পরিস্থিতি বিবেচনায় দেশের সকল জেলাকে ঝুঁকিপূর্ন ঘোষণা করেছে আইডিসিআর।
আইডিসিআর এর এমন ঘোষণার পর নিপা ভাইরাস ইস্যুতে বৃহত্তর বরিশালে বিশেষ সর্তক বার্তা জারি করেছে বরিশাল স্বাস্থ্য বিভাগ। গতকালই বিভাগের সকল জেলা ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কাছে চিঠির মাধ্যমে নিপা ভাইরাসের বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে। বরিশাল স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে যেহেতু নিপা ভাইরাস খেজুরের রস ও বাঁদুরের মাধ্যমে ছড়ায় তাই বরিশালে এর ঝুঁকিটা অনেক বেশী। কারণ বরিশালের অধিকাংশ এলাকায় পর্যাপ্ত খেজুরের রস হয় ফলে বাঁদুড়ের উপদ্রব থাকাটাই স্বাভাবিক। এ কারণে খেজুর রসের মৌসুম শেষ না হওয়া পর্যন্ত মানুষ কে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করে চলার পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের  উপ পরিচালক ডাঃ শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, আমরা বিভাগে সমস্ত স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে সতর্ক বার্তা পৌঁছে দিয়েছি। বিশেষ করে জ¦রের রোগীদের চিকিৎসা প্রদানের ক্ষেত্রে ডাক্তারদের পিপিই পরিধান করতে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। তিনি বলেন, দক্ষিণাঞ্চলে পর্যাপ্ত খেজুরের রস উৎপাদিত হয়। যার মৌসুম চলছে এখন। সুতরাং ঝুঁকির দিক থেকে বরিশাল অনেক বেশী এগিয়ে। তাই কাঁচা খেজুরের রস খেতে সম্পূর্ন নিষেধ করা হয়েছে। এছাড়া যে কোন ধরণের ফলে যদি পাখির কামড়ের মত দেখা যায় তাহলে সেসব ফল খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। তিনি আরো বলেন, স্বস্তির খবর হচ্ছে বরিশালে এখনো নিপা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হয়নি। তারপরও আমরা পুরো বিভাগকে বিশেষ সতর্কতার আওতায় রেখেছি। খেজুরের রস উৎপাদন বন্ধ হলে ঝুঁকি কিছুটা কমলেও শতভাগ শেষ হবে না। কারণ রস উৎপাদন বন্ধ হবার পরেও যদি বাঁদুড়ের অবস্থান বা উপস্থিতি থাকে তাহলে নিপা ভাইরাসের ঝুঁকি থেকে যাবে। কারণ বাঁদুড় ভাইরাস বহন করে। সুতরাং শতভাগ ঝুঁকিমুক্ত তখনই হবে যখন খেজুরের রসের পাশাপাশি বাঁদুড়ও চলে যাবে।
আইডিসিআর এর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ৩ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত দেশের সাত জেলায় ১০ জনের শরীরে বাঁদুড়ের মাধ্যমে নিপা ভাইরাস ধরা পড়েছে। যাদের মধ্যে সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৩৫ জন। যাদের মধ্যে ২৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। আইইডিসিআর বলছে, দেশের সবগুলো জেলাই এখন নিপা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকিতে আছে। তবে ২০০১ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত দেশের ৩৩টি জেলায় নিপা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশে বাঁদুড়ের মাধ্যমে নিপা ভাইরাস মানুষের শরীরে ছড়ায়। কাঁচা খেজুরের রস খাওয়ার মাধ্যমেই মূলত এটি ছড়িয়ে পড়ে। টিকা না থাকায় এ রোগ থেকে দূরে থাকার একমাত্র উপায় হিসেবে কাঁচা খেজুরের রস পান না করা। পাখি বা বাঁদুড়ে খাওয়া ফল না খাওয়ার পরামর্শ চিকিৎসকদের।
আইইডিসিআরের তথ্য বলছে, ২০০১ সালে পশ্চিমের মেহেরপুর জেলায় প্রথম নিপা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়। ওই বছর এ জেলায় ১৩ জন মানুষ নিপা ভাইরাস রোগে আক্রান্ত হন। যাদের মধ্যে মৃত্যু হয় ৯ জনের। এরপর ২০০২, ২০০৬ ও ২০১৬ সাল বাদে প্রতিবছরই বিভিন্ন জেলায় নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।   এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ৬৭ জন আক্রান্ত হয়েছিলো ২০০৪ সালে। মারা যান ৫০ জন। এছাড়া ২০১১ সালে ৪৩ জন আক্রান্তের মধ্যে মৃত্যু হয় ৩৭ জনের। ২০১৪ সালে ৩৭ জন আক্রান্ত হয় এবং মৃত্যু হয় ১৬ জনের।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT