ফেব্রুয়ারী মানেই শহীদ মিনারের ভালোবাসা: অফিস আদালতে আজো চালু হয়নি বাংলা ফেব্রুয়ারী মানেই শহীদ মিনারের ভালোবাসা: অফিস আদালতে আজো চালু হয়নি বাংলা - ajkerparibartan.com
ফেব্রুয়ারী মানেই শহীদ মিনারের ভালোবাসা: অফিস আদালতে আজো চালু হয়নি বাংলা

3:22 pm , February 5, 2023

আরিফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিবেদক ॥ ‘ভাষার মাসে ভাসা ভাসা বেঁচে আছে ভালোবাসা’। কবির কবিতার বাস্তব প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায় বরিশাল তথা বাংলাদেশের আনাচ কানাচে শহীদ মিণারের প্রতি দৃষ্টি দিলেই। প্রতিটি স্থানে, প্রতিটি জেলায় একইচিত্র সর্বত্র। ফেব্রুয়ারী এলেই মাসের-পর-মাস অযতেœ পড়ে থাকা শহীদ মিনার গুলোর কদর বাড়ে। রং চং করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভিযান চালানো হয় শহীদ মিণারের গায়ে, পাদদেশে। কেউ কেউ আবার তাড়াহুড়ো করে নতুন শহীদ মিণার তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে ওঠে। যার ফলে, বছর যেতে না যেতেই আবার প্রয়োজন হয় নতুন মিণার তৈরির। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক থাকাকালীন সময়ে প্রয়াত রাজনীতিবিদ ও ভাষা সৈনিক কামাল লোহানী বলেছিলেন, আমরাই বিশ্বের একমাত্র জাতি, যারা ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছি এবং ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে শ্রদ্ধা বেদী নির্মাণ করেছি। অথচ সেই আমরাই আজো সর্বত্র বাংলা ভাষা চালু করতে পারিনি।
তাঁর এই আফসোসের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সেই সময় হাইকোর্ট অফিস আদালতে ইংরেজীর পাশাপাশি বাংলা ভাষা ব্যবহারের নির্দেশ দেয়। পরবর্তীতে সরকারি অফিস আদালতে ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা প্রচলন শুরু হয়। যতদূর জানা যায়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ১৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তার দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্যে সুপ্রিমকোর্টের বিচারকদের কাল-বিলম্ব না করে বাংলায় রায় লেখার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি সর্বস্তরে বাংলা প্রচলনের আরও নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে ১৯৭৩ সালে তদানীন্তন সংস্থাপন মন্ত্রণালয় থেকে সরকারি দাপ্তরিক কাজে বাংলা ব্যবহারের নির্দেশনা জারী করে। চলতি বছর ফেব্রুয়ারীর প্রথমদিন হাইকোর্ট নিজেই বাংলায় রায় প্রকাশ করে ভাষার প্রতি গভীর ভালোবাসা দেখিয়েছে। কিন্তু দেশের সব আইন কি বাংলায় প্রকাশ হয়েছে এ প্রশ্ন তোলেন সমাজ চিন্তাবিদ ও বরিশাল সাহিত্য সংসদের সিনিয়র সহ সভাপতি কাজী মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ১৯৭৩ সালে জাতির জনকের হাতে ভিত্তি প্রস্তুত হবার পরও দীর্ঘদিন পরে ছিলো বরিশাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিণারের নির্মাণ।
তিনি বলেন, শহীদ মিণারের নির্মাণই প্রধান কথা নয়, এর প্রতি যতœশীল, শ্রদ্ধা ভালোবাসা দেখানো আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বছরের এই একটি মাত্র দিনে যতœ নিলেন আর বাকী সময়টাতে পাখি, গরু ছাগলের চারণভূমি হলো এটাতো শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা হয়না। সবচেয়ে বড় হচ্ছে,  সর্বত্র বাংলা ভাষা চালু করতে হবে। সেটাই হবে শহীদের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা নিবেদন।
বরিশাল জেলায় প্রায় দু’হাজারের মতো শহীদ মিণার রয়েছে। এগুলোর বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ঘীরে ও কিছু রয়েছে ইউনিয়ন বা উপজেলা উদ্যোগে। যা বেশিরভাগ সময় অযতœ অবহেলায় পরে থাকে। শুধুমাত্র জেলা সদরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিণারটিকে ঘীরে থাকে সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দের বিভিন্ন আয়োজন। তাই এটি যতœ নেয়াটা মোটামুটি চোখে পড়ে সবখানে, সব জেলায়। সেই বিবেচনায় দেশের মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম শহীদ মিনার হচ্ছে বরিশাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। আর এ শহীদ মিনারের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকালে বঙ্গবন্ধু ঘোষনা দিয়েছিলেন এখানে পাঠাগার ও মিলনায়তন নির্মানের। সিটি কর্পোরেশনের তৃতীয় পরিষদের আমলে সেখানে বঙ্গবন্ধু অডিটরিয়ামের নির্মান কাজ শুরু হলেও আজ পর্যন্ত তা শেষ হয়নি।
এদিকে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন (বিসিসি) থেকে শুরু হয়েছে শহীদ মিনারের বিউটিফিকেশনের কাজ। এতে করে শহীদ মিনারের সামনে থেকে গাড়ি পার্কিং দূর হয়ে একটি দর্শনীয় স্থানে পরিনত হবে বলে দাবি করছেন সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা। তৎকালীন শহীদ মিনার সংরক্ষণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক বীরমুক্তিযোদ্ধা এনায়েত হোসেন চৌধুরী জানিয়েছেন, ১৯৭২ সালের ডিসেম্বরে বরিশাল সার্কিট হাউজ সংলগ্ন জমিতে শহীদ মিনারের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শহীদ মিনারের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনকালে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা দিয়েছিলেন ওই স্থানে পাঠাগার ও মিলনায়তন নির্মাণের।
তিনি আরো জানান, স্বাধীনতার পরপর শহীদ মিনার নির্মাণ করার জন্য তৎকালীণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম মঞ্জুর উদ্যোগে ৫২ হাজার ১ শত ১৫ টাকা গণচাঁদা তোলা হয়। গণচাঁদা এবং বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান ও দাতা ব্যক্তিদের কাছ থেকে প্রায় ৬ লাখ টাকা উত্তোলন করে শহীদ মিনার নির্মাণ শুরু হয়। প্রায় ৬০ শতাংশ জমিতে শহীদ মিনার চত্বরের বেদীর পরিসর সাড়ে ৩ হাজার স্কয়ার ফুট। যা দেশের মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম শহীদ মিনার বলে দাবি করেন তিনি। এনায়েত হোসেন চৌধুরী আরো বলেন, বরিশাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিণারের সৌন্দর্য বর্ধন করা হচ্ছে এটা খুবই আশার কথা। তবে এরসাথে সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দকে সংযুক্ত করে নিলে এটি হয়তো আরো সুখকর অনুভূতি হতো। কেননা, আমি শহীদ মিণারের সাধারণ সম্পাদক হয়ে এ বিষয়ে কিছু জানিনা।
বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সভাপতি নজমুল হোসেন আকাশ বলেন, ১৯৮৫ সালে একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপনের জন্য ১২ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসন সম্মেলন কক্ষে প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৮৬ সালে ২৭টি সংস্কৃতিক সংগঠনের জোট বরিশাল সংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের আয়োজনে ১৭-২১ ফেব্রুয়ারি ৫ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার মধ্যদিয়ে বরিশাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার উন্মুক্ত করা হয়।
বর্তমানে শহীদ মিণারের সৌন্দর্য কাজ প্রায় শেষের দিকে দাবী করে, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশলী আবুল বাশার জানিয়েছেন, শহীদ মিনারের চারিদিকে বাউন্ডারী ওয়াল, শিল্পিদের পোশাক পরিবর্তনের জন্য গ্রিন রুম, জাতীয় অনুষ্ঠানগুলোর প্রচার প্রচারণার জন্য পৃথক কক্ষ, পুরুষ ও মহিলাদের জন্য পৃথক ওয়াশ রুম এবং শহীদ মিনারের পিছনের সূর্য কাপড়ের পরিবর্তে স্টিল দিয়ে তৈরী করে তার উপর লাল রং দেয়া হবে। এছাড়া শহীদ মিনারের সামনের জায়গা উন্নত মানের ইট দিয়ে সাজানো হচ্ছে। এর সাথে থাকবে বিউটিফিকেশনের জন্য লাইটিং। কাজ শেষ হওয়ার পর দিনরাত উভয় সময়ই শহীদ মিনারটি দেখার মতো হবে বলে জানান তিনি।
বরিশালের প্রবীণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ দুলাল বলেন, এটি আমাদের দাবী ছিল। শহীদ মিণারের চারপাশে দেয়াল হোক, সাংস্কৃতিক চর্চার উপযোগী হোক। বর্তমান মেয়র তা করার উদ্যোগ নিয়েছেন এজন্য আমরা তার কাছে কৃতজ্ঞ।

এই বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT