দক্ষিণাঞ্চলে মিষ্টি আলুর উৎপাদন পৌনে ৩ লাখ টনে পৌঁছানোর আশাবাদ কৃষিবিদদের দক্ষিণাঞ্চলে মিষ্টি আলুর উৎপাদন পৌনে ৩ লাখ টনে পৌঁছানোর আশাবাদ কৃষিবিদদের - ajkerparibartan.com
দক্ষিণাঞ্চলে মিষ্টি আলুর উৎপাদন পৌনে ৩ লাখ টনে পৌঁছানোর আশাবাদ কৃষিবিদদের

3:26 pm , February 4, 2023

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ বরিশাল কৃষি অঞ্চলের ১১ জেলায় এবারো অধিক ক্যালরি উৎপন্নকারী ‘গরীবের খাদ্য’ মিষ্টি আলু উৎপাদন প্রায় পৌনে ৩ লাখ টনে পৌঁছবে বলে আশাবাদী কৃষিবীদরা। অনগ্রসর মানুষের স্বল্প ব্যয়ে উৎপন্ন এ খাবার সাধারন মানুষের জন্য সারাদিনের পুষ্টির যোগানদাতা। কৃষি এবং পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, হলুদ ও রঙিন শাসযুক্ত মাত্র ১৩ গ্রাম মিষ্টি আলু একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের প্রতিদিনের ভিটামিন-এর চাহিদা পূরণে সক্ষম। যা শিশুদের রাতকানা রোগসহ যেকোন বয়সী মানুষের দৃষ্টিশক্তি স্বল্পতারআশংকা থেকেও নিরাপদ রাখতে সহায়ক। চলতি রবি মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে পৌনে ৩ লাখ টন মিষ্টি আলু উৎপাদনের লক্ষ্য অর্জিত হবে বলে কৃষি সম্প্রসারণ  অধিদপ্তর-ডিএই’র দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে। দেশে প্রতি বছর প্রায় ৬০ হাজার থেকে ৬৫ হাজার হেক্টরে আবাদের মাধ্যমে সাড়ে ৮ লাখ থেকে ১০ লাখ টন  মিষ্টি আলু উৎপাদন হয়ে থাকে। যার প্রায় একÑতৃতীয়াংশই বরিশাল কৃষি অঞ্চলের ১১ জেলাতে আবাদ ও উৎপাদন হয়ে থাকে বলে ডিএই’র হিসেবে বলা হয়েছে। তবে উচ্চ ফলনশীল বীজসহ মাঠ পর্যায়ে উন্নত আবাদ প্রযুক্তি হস্তান্তর করতে পারলে দক্ষিণাঞ্চলে এর উৎপাদন প্রায় দ্বিগুন করা সম্ভব বলে মনে করছেন কৃষিবিদরা। বরিশাল,ভোলা, পটুয়াখালী ও বরগুনাসহ দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি জেলার চরাঞ্চলে মিষ্টি আলুর আবাদ হয়ে আসছে সুদূর অতীতকাল থেকে। ‘কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা ইতোমধ্যে অন্তত ১০টি উচ্চফনশীল ও পুষ্টি সমৃদ্ধ মিষ্টি আলুর উন্নত জাত উদ্ভাবন করেছেন। যার উৎপাদনও আমাদের সনাতন জাতগুলোর প্রায় তিন থেকে ৪ গুন। এমনকি এসব মিষ্টি আলু থেকে জেলি, জাম, মিষ্টি, চিপস, হালুয়া ছাড়াও পুষ্টি সমৃদ্ধ ও উন্নত মানের সস তৈরী করা সম্ভব। মিষ্টি আলুর দেশী জাতগুলো থেকে হেক্টর প্রতি ১০ টনের মত উৎপাদন সম্ভব হলেও ‘বারি’ উদ্ভাবিত ‘বারি মিষ্টিআলু-১ (তৃপ্তি), বারি মিষ্টিআলু-২ (কমলা), বারি মিষ্টিআলু-৩ (দৌলতপুরী), বারি মিষ্টিআলু-৪, বারি মিষ্টিআলু-৫, বারি মিষ্টিআলু-৬, বারি মিষ্টিআলু-৭, বারি মিষ্টি আলু-৮ ও বারি-মিষ্টি আলু-৯’ জাতগুলোর হেক্টর প্রতি উৎপাদন ২০-৪০ টন পর্যন্ত। বরিশাল কৃষি অঞ্চলে এবার হেক্টর প্রতি ২০.২৩ টন মিষ্টি আলুর উৎপাদন আশা করছে ডিএই। উৎপাদনের দিক থেকে দেশে খাদ্য ফসলের মধ্যে মিষ্টি আলুর অবস্থান এখন প্রায় চতুর্থ। তবে সুদূর অতীতকালের জনপ্রিয় এ খাদ্য ফসলের বহুমুখী ব্যবহার এখনো সম্প্রসারণ ঘটেনি। এমনকি উৎপাদন এলাকার বাইরেও এ ফসলের তেমন প্রচলন নেই। এখনো ‘বারি’ উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল মিষ্টি আলুর আবাদ কৃষক পর্যায়ে ছাড়িয়ে দেয়া সম্ভব হয়নি। ‘বারি’ উদ্ভাবিত এসব উন্নতজাতের মিষ্টি আলুর জাতের লতা বা বীজগাছ সহ আবাদ প্রযুক্তি মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের কাছে পৌঁছে দিতে ডিএই ও তার মাঠ কর্মীদের খুব একটা ভূমিকা নেই বলেও অভিযোগ রয়েছে। অথচ দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে যে পরিমান জমিতে সনাতন জাতের মিষ্টি আলুর আবাদ হচ্ছে সেখানে উন্নত প্রযুক্তিতে উচ্চ ফলনশীল মিষ্টি আলুর আবাদ নিশ্চিত করতে পারলে এ অঞ্চলেই উৎপাদন দ্বিগুণ করা সম্ভব বলে মনে করছেন কৃষি বিজ্ঞানীরা। ‘বারি’ ফিলিপাইন থেকে ১৯৮১ সালে ‘টিনিরিনিং’ নামের একটি লাইন সংগ্রহ করে অন্যান্য জার্মপ্লাজামের সাথে উপযোগিতা যাচাইয়ের মাধ্যমে গবেষণা শেষে ১৯৮৫ সালে ‘বারি মিষ্টি আলু-১ (তৃপ্তি)’ নামে অনুমোদন প্রদান করে মাঠ পর্যায়ে আবাদের জন্য ছাড় করে। এ জাতে মিষ্টি আলুর কান্ড ২শ’ থেকে আড়াইশ গ্রাম। তবে কোন কোন সময়ে একটি মূল দেড় কেজি পর্যন্ত হতে পারে। এ আলুর একশ’ গ্রাম শাসে প্রায় সাড়ে ৪শ’ আই ইউ ভিটামিন এ থাকে। স্বাভাবিক অবস্থায় এর উৎপাদন হেক্টর প্রতি ৪০-৪৫ টন পর্যন্ত। তাইওয়ানের এশীয় সবজি গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে ১৯৮০ সালে একটি লাইন সংগ্রহ করে জার্ম প্লাজামের সাথে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ১৯৮৫ সালে ‘কমলা সুন্দরী বা বারি মিষ্টি আলু-২’ নামের জাতটি অনুমোদনের মাধ্যমে আবাদের জন্য উম্মুক্ত করা হয়। এ মিষ্টি আলুর একশ’ গ্রাম শাষে সাড়ে ৭ হাজার আই ইউ ভিটামিন-এ রয়েছে। এসব উচ্চ ফলনশীল মিষ্টি আলু আবাদের ১৩৫ থেকে ১৪৫ দিনের মধ্যেই ফসল ঘরে তোলা সম্ভব। মধ্য অক্টোবর থেকে নভেম্বরের মধ্যভাগ পর্যন্ত দোআঁশ ও বেলে মাটিতে মিষ্টি আলু আবাদের উপযুক্ত সময়। পরিমিত পরিমাণ গোবর, টিএসপি, ইউরিয়া ও এমপি সার প্রয়োগের মাধ্যমে মিষ্টি আলুর অত্যান্ত ভাল ফলন পাওয়া যায়। জমির আর্দ্রতার ওপর নির্ভর করে প্রয়োজনে ২-৩টি সেচ প্রদান করতে হয়। দক্ষিণাঞ্চলের চরাঞ্চলের বেলে দোআঁশ মাটি মিষ্টি আলু আবাদের অনুকুল। তবে চরাঞ্চলে নভেম্বরের শেষভাগ পর্যন্ত এ আলুর আবাদ সম্ভব। বারি উদ্ভাবিত কমলা সুন্দরী, বারি মিষ্টি আলু-৪ ও ৫’এ প্রচুর পরিমানে ক্যারোটিন রয়েছে। যা ভিটামিন-এ’র একটি ভাল উৎস। এসব জাতের মিষ্টি আলু দিয়ে অতি সহজেই সস পর্যন্ত তৈরী করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন বারি’র বিজ্ঞানীরা। যা গ্রামের মেয়েদের ঘরে বসে একটি বিকল্প আয়ের অন্যতম উৎস হতে পারে। মার্চের শেষ থেকেই বাজারে নতুন মিষ্টি আলু উঠতে শুরু করবে। মৌসুমে প্রতি কেজি ৩০-৩৫ টাকা কেজি দরে মিষ্টি আলু বিক্রি হলেও মাঠ পর্যায়ে কৃষকরা গড়ে ১৫ টাকার বেশী দাম পায় না। গোল আলুর চেয়ে মিষ্টি আলুতে কৃষকরা কিছুটা ভাল দাম পেলেও এখনো লতা-বীজ সংকটই দক্ষিণাঞ্চলে এ অর্থকরি ফসল আবাদে প্রধান অন্তরায়। চলতি রবি মৌসুমে মাঠ পর্যায়ে কৃষকরা প্রতি কেজি গোল আলু বিক্রি করেছেন মাত্র ৭-১০ টাকা কেজি দরে।

এই বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT