চরফ্যাশন ঢালচরের বনের গাছ প্রকাশ্যে কেটে ফেলা হচ্ছে ॥ যাচ্ছে ইট ভাটায় চরফ্যাশন ঢালচরের বনের গাছ প্রকাশ্যে কেটে ফেলা হচ্ছে ॥ যাচ্ছে ইট ভাটায় - ajkerparibartan.com
চরফ্যাশন ঢালচরের বনের গাছ প্রকাশ্যে কেটে ফেলা হচ্ছে ॥ যাচ্ছে ইট ভাটায়

3:36 pm , February 3, 2023

মো. আফজাল হোসেন, ভোলা ॥ সরকার চরাঞ্চলের বনায়ন রক্ষায় জোরালো ভূমিকা রাখলেও প্রতিদিনই এসব সংরক্ষিত বনের গাছ কেটে উজার করা হচ্ছে। তেমনি ভোলার চরফ্যাশনের ঢালচর বনের গাছ প্রকাশ্যে কেটে ফেলছে অসাধু ব্যক্তিরা। সেখান থেকে প্রতিদিন একাধিক ট্রলার বোঝাই কাঠ যাচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটা গুলোতে। তবে এসব গাছ কাটার সাথে স্থানীয় বন বিভাগের কর্মকর্তারা জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। আর বন বিভাগ কর্মকর্তাদের দাবী স্থানীয় প্রশাসন এবং ইউপি চেয়ারম্যান জড়িত।  দ্বীপ জেলা ভোলার সর্ব দক্ষিণে চরফ্যাশন উপজেলার সাগর মোহনায় অবস্থিত ঢালচর ইউনিয়নটি। মেঘনার মাঝে জেগে উঠা চর আর বন দেখে মন জুড়িয়ে যায় আগত পযর্টকদের। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে শত শত পর্যটকরা আসে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখার জন্য। এসব বনে হরিন, শিয়াল, বিভিন্ন প্রজাতির পাখিসহ নানা ধরনের পশু পাখির অভায়াশ্রম রয়েছে। একাধিক চরে বনায়ন থাকায় ঝড় আর জলোচ্ছাস থেকেও রক্ষা পাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ আর গৃহপালিত পশু। সেই বনায়ন উজার করে ফেলছে স্থানীয় ঢালচর রেঞ্জ কর্মকর্তা চন্দ্র শেখর দাস এবং স্থানীয় নিরব চৌকিদার, কাওসার ফরাজী, শরীফ সওদাগর, এলাহী, সবুজ, জসিম ও রহিমসহ একাধিক অসাধু ব্যক্তিরা। গত ৫/৬ মাস ধরে প্রতিদিন ১২ থেকে ২০ জন মিলে এই বনের গাছ কাটার কাজ করছে। বনের গাছ কাটার কাজ করায় শ্রমিকদের ১ হাজার টাকা করে মজুরী দেয়া হচ্ছে। যার প্রমান মিলেছে ঢালচর বন বিভাগের অফিস সংলগ্ন বিশাল বনে ঢুকেই। স্প্রীডবোটের শব্দ আর বনদস্যুদের সোর্সরা বলে দেয়ায় তারা দ্রুত বনের গভীরে ঢুকে যায়। তবে যাবার সময় তারা গাছ কাটার করাত, জামা, জুতা আর খাবার পানি ফেলে যায়। বনের ভিতর ঢুকতেই নজরে আসে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকে কেটে ফেলে রাখা গাছের টুকরো গুলো। বন জুড়েই কেটে ফেলে রাখা গাছ আর গাছের মুড়ি। যা দেখার পরে যে কেউ বুঝতে পারবে কিভাবে গাছ কেটে উজার করা হচ্ছে বন। এসব কেটে ফেলে রাখা গাছের ভিডিও করার এক পর্যায় বনদস্যুরা বিভিন্ন ধরনের শব্দ আর গাছে ঢাল ভেঙ্গে হামলার প্রস্ততি নিচ্ছে এমন আভাস পেয়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করতে হয়। তবে বনে শ্রমিক হিসেবে কাজ করা ব্যক্তিদের মুখে উঠে আসে জড়িতদের কথা। একই সাথে ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে এসব গাছ।
নিরাপত্তার জন্য নাম না প্রকাশ করার শর্তে বনের গাছ কাটায় অংশ নেয়া দুইজন শ্রমিক জানান,অভিযুক্ত ব্যক্তিরা তাদেরকে মজুরী হিসেবে ১হাজার করে প্রতিদিন টাকা দিচ্ছে। গত ৫/৬মাস ধরেই বনের গাছ কাটা হচ্ছে। এর সাথে অসাধু ঢালচরের ব্যক্তির সাথে স্থানীয় রেঞ্জ কর্মকর্তা চন্দ্র শেখর দাস জড়িত বলেও তারা জানান। বন বিভাগ জড়িত বলেই আমরা নিরাপদে গাছ কাটতে পারছি কারন বন বিভাগের অফিসের পাশেই এইসব বন। বনের গাছ কাটার পর ট্রলারে বোঝাই করে চরফ্যাশনের বিভিন্ন ইটভাটায় যাচ্ছে বলেও তারা জানান। আর স্থানীয় বাসিন্দারা চায় যারা এসব বনায়ন ধ্বংস করার সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার।
এদিকে ঢালচর রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা চন্দ্র শেখর দাসের কাছে ঢালচর বসেই ফোনে জানতে চাইলে তিনি ‘বন কাটার সাথে জড়িতদের জানিয়ে দেন। পরবর্তীতে নিরাপত্তার স্বার্থে সেই স্থান ত্যাগ করা হয়। চন্দ্র শেখর দাস মুঠো ফোনে এই প্রতিবেদকের কাছে সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য বিভিন্নভাবে অনুনয় বিনয় করেন। এছাড়া সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য একাধিক ব্যক্তি নানাভাবে অনুরোধ এবং হুমকি প্রদান করেন।
ঢালচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম হাওলাদার বলেন, নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা হওয়ায় বেশ কিছুদিন ধরে এলাকার বাইরে। এসব ঘটনা আমার জানা নেই। এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকার বিষয় অস্বীকার করে বলেন, প্রশাসন তদন্ত করলে আমি তাদেরকে সার্বিক সহযোগীতা করবো।
অপরদিকে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এসএম কায়ছার বলেন,বন কাটছে তারা কাদের লোক ? এরা সালামের লোক (চেয়ারম্যান) স্থানীয় প্রশাসনের লোক। বন কাটার সাথে তার রেঞ্জ কর্মকর্তা চন্দ্র শেখর দাস জড়িত আছেন এমন অভিযোগের কথা বলতেই তিনি রেগে যান। তিনি বলেন, বন কাটা হচ্ছে আমি জানি,সব জানি। ব্যবস্থা নিচ্ছেন না কেন এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে জানিয়েছি কোন লাভ হচ্ছে না।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT