3:45 pm , February 2, 2023
আরিফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিবেদক ॥ বেশিরভাগ সময় ফেরি বন্ধ। ইজিবাইক, অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলসহ যাত্রীদের যত চাপ সবটাই খেয়ার উপর। ফেরিতে কেন এগুলো যাচ্ছে না জানতে চাইলে ফেরির কর্মচারীরা বললেন, পর্যাপ্ত যানবাহন না হলেতো তেল খরচও ওঠে না। তাই খুব জরুরী ও বড় গাড়ি না হলে চলে না ফেরি। আর ঘাটে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খেয়ায় মোটরসাইকেল ও অটোরিকশা বহনকারী যাত্রীদের দাবী ঘাট ইজারাদারের সাথে চুক্তি করে ফেরি চলে এখানে। খেয়ায় তাই এসব ছোট ছোট যানবাহন পারাপার হয় যাত্রী বোঝাই ট্রলারে।
সরেজমিনে বুধবার সকালে বরিশাল সদরের বেলতলা খেয়াঘাটে এসে দেখা গেছে যাত্রী বোঝাই ট্রলারের অর্ধেকাংশ প্রস্তুত করা হয়েছে মোটরসাইকেল ও তিনচাকার রিক্সা ভ্যান ও কভারভ্যানের জন্য। মাঝখানে নিচু স্থানে যাত্রীদের ঠাসাঠাসি। এসব যানবাহন চলাচলের জন্য এখানে বেলতলা থেকে চরমোনাই, মেহেন্দিগঞ্জ হয়ে কুমিল্লার লক্ষি¥পুর, নোয়াখালী যাতায়াতের জন্য একটি ফেরি চলাচলের ব্যবস্থা করা হলেও ভিআইপি ও বড় গাড়ি না হলে ফেরি চলেনা কখনোই। এমনটাই জানালেন পারাপাররত যাত্রীদের অনেকেই। নোমোর হাট এলাকার এক নারী যাত্রী বললেন, প্রতিদিন এই পথে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পার হই। এতো বড় নদী, এতো মানুষ, তারপরও এই রিক্সা ভ্যান মোটরসাইকেলের চাপ ট্রলারে। খুব আতঙ্কে থাকি বাবা।
দেখা যায়, দুটি মাত্র ট্রলার এখানে যাত্রী পারাপারে নিয়োজিত আছে। একটি চরমোনাই ঘাট ত্যাগ করলে তবেই অন্যটি বেলতলা খেয়াঘাট থেকে চরমোনাই পথে যাত্রা করে। প্রতি ট্রিপে ২৫/৩০ জন যাত্রীর সাথে ছয়টি মোটরসাইকেল কিংবা ধারণ উপযোগী তিন চাকার যানবাহন তোলা হয় ট্রলারে। এতে করে যাত্রী ওঠা-নামা কষ্টকর হলেও কিছুই আসে যায় না ঘাট ইজারাদারের।
ঘাটের ইজারাদার চরমোনাই এলাকার মোকলেছুর রহমানকে পাওয়া না গেলেও তার প্রতিনিধি টোল আদায়রত ঘাটশ্রমিকরা জানান, যাত্রী প্রতি ৬ টাকা এবং মোটরসাইকেল প্রতি কখনো ৩০ বা ৪০ টাকায় পারাপার হয় এখানে। আর ভ্যান রিকশা ৫০ টাকা ও কভারভ্যান ৭০ টাকায় পার করে দেন।
ইজারাদারের লোকজন জানালেন, এতো বড় ট্রলারে সহজেই এসব যানবাহন পার হতে পারে। এতে কোনো ঝুঁকি নেই। তাছাড়া ঝড় বাদলের সময়তো তারা এতো যাত্রী বহন করেন না।
চরমোনাই ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য হেলাল উদ্দীন বলেন, এখানে যাত্রী পারাপারের নৌকায় যানবাহন পারাপারটাইতো অবৈধ। এরা সিন্ডিকেট করে ঘাট পরিচালনা করছে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের কিছুই করার নেই বলে জানান সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান। তিনি বলেন, এ বিষয়টি জেলা পরিষদের এখতিয়ার।
জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট কেএম জাহাঙ্গীর তিন চাকার যানবাহন খেয়ায় পারাপার শুনে প্রথমে নিজেই বিস্মিত হন। তারপর বলেন, মোটরসাইকেল পারাপার করে এটা এখন সহনীয় হয়ে গেছে। তারপরও যেখানে ফেরী রয়েছে সেখানে একটু অপেক্ষা করলেই ২০/৩০টি মোটরসাইকেল একত্রিত হয়ে ফেরীতে চলাচল করলে ভালো। যাত্রী বহনের পাশাপাশি খেয়ায় মোটরসাইকেল ও তিন চাকার যানবাহন চলাচল খুব অনৈতিক একটি কাজ। এটা আমাদের নৈতিক অধঃপতনের প্রমান বহন করছে। চারিদিকে এখন অনৈতিক কার্যকলাপ বাড়ছে তারই প্রমান এটি। আমি বিষয়টির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করবো।