3:23 pm , January 27, 2023

সাইফুল ইসলাম, বাবুগঞ্জ ॥ বাবুগঞ্জ উপজেলায় শয়ন কক্ষ থেকে দাদি ও নাতবউয়ের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় সন্দেভাজন হিসেবে নাতবউ রিপার স্বামীকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। বাবুগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) অলিউল ইসলাম জানান, নিহত রিপার বাবা মো. শাহজাহান খান বাদী হয়ে অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে বৃহস্পতিবার রাতে এ হত্যা মামলা দায়ের করেন। তাছাড়া হত্যাকান্ডে জড়িত থাকাতে পারে এমন সন্দেহভাজনদের নামও উল্লেখ করেছে তিনি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে রিপার স্বামী সোলায়মান হোসেন সোহাগকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বাবুগঞ্জ উপজেলায় কেদারপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য দেলোয়ার হোসেনের দক্ষিণ ভূতেরদিয়া গ্রামের বাড়ি থেকে বৃহস্পতিবার ভোরে তার ১০২ বছর বয়সী মা লালমুন্নেছা, ছেলে সোলায়মান হোসেন সোহাগের স্ত্রী রিপা আক্তার ও ৫৫ বছর বয়সী স্ত্রী মিনারা বেগমকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়।
সেখানে চিকিৎসক দাদি ও নাতবউকে মৃত ঘোষণা করেন। অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন মিনারা বেগম। ঘটনার পর পুলিশ জানায়, খাবারের সঙ্গে কেউ বিষ মিশিয়ে দেওয়ার কারণে ‘বিষক্রিয়ায়’ ওই দুই নারীর মৃত্যু হতে পারে বলে তারা সন্দেহ করছেন।
তবে শুক্রবার বরিশাল জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বাকেরগঞ্জ সার্কেল) ফরহাদ সরদার ঘটনাটিকে পূর্ব পরিকল্পিত হত্যাকান্ড বলে দাবি করছেন। তিনি বলেন, চুরি করতে এসে এ ধরনের ঘটনা ঘটানো হয়নি। পারিবারিক বিরোধে এ ঘটনা ঘটেছে। বাইরে থেকেও দুই একজন ঢুকে পড়েছে কিনা সেই বিষয়টিও নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাই নাতবউ রিপার স্বামীকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। আর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রিপার শাশুড়িকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে রহস্য অনেকটা বের হবে বলে আমরা আশাবাদী।
এদিকে মিনারার শারীরিক অবস্থা আশঙ্কামুক্ত বলে বাবুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার আতিক জানিয়েছেন। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, মিনারা বর্তমানে ‘স্বাভাবিকভাবে’ কথা বলতে পারছেন।
কেদারপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. ইব্রাহিম বিশ্বাস জানান, দাদি ও নাতবউয়ের লাশ এখনও বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। শুক্রবার দুপুরের পর তা পরিবারের কাছে হস্তান্তর করতে পারে পুলিশ।
রিপার ভাই তারিকুল ইসলাম শাওনের বরাতে ইউপি সদস্য বলেন, তিন বছর আগে রিপার সঙ্গে সোহাগের বিয়ে হয়। এক বছর সুখে কাটলেও এরপর থেকে তাদের মধ্যে পারিবারিক বিরোধ শুরু হয়। এর জেরে দুজনের তালাকও হয়ে যায়। পরে আবারও তাদের বিয়ে দেওয়া হয়। প্রথমবার বিয়ের সময় কাবিন ৫০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়। আর দ্বিতীয়বার ৫ লাখ টাকা ধার্য করা হয় বলে জানান তিনি। রিপার ভাই তারিকুল ইসলাম শাওন বলেন, সোহাগের পরিবার দাবি করছে, চোর এ কাজ করেছে। এ জন্য নিহত লালমুন্নেছার খাটের নিচে বাহির থেকে সিঁধ কাটা হয়। কিন্তু সেখান থেকে একটি মানুষ কোনভাবেই প্রবেশ করতে পারবে না। আর প্রবেশ করলেও খাটের নিচে যে মাকড়সার বাসা ছিল সেটা নষ্ট হতো। এতেই বোঝা যায় ঘরের ভেতর থেকেই এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। রিপাকে সোহাগ পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। রিপার বোন মাহিনুর আক্তার শিখা বলেন, ঘটনার রাতে রিপা মায়ের সঙ্গে কথাও বলেছিলো। আমার বোন তো শারীরিকভাবে অসুস্থ ছিল না। তাহলে কি কারণে সে মারা যাবে। রিপার চাচা নুর হোসেন বলেন, পুলিশের সঙ্গে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখলাম ঘরের সিঁধ কাটা হয়েছে। কিন্তু সেখান দিয়ে কোনো লোক আসা যাওয়ার মতো আলামত নাই। ঘরের ভেতরে ও বাইরে মাকড়সার জাল রয়েছে। কেউ আসা যাওয়া করলে জাল থাকতো না। আসলে পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এ ঘটনায় রিপার দাদি শাশুড়িও তো মারা গেছেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে নুর হোসেন বলেন, “এডা তো আমরা জানি না। তবে সোহাগের মা যে অসুস্থ এইডা একটা নাটক।”
বাবুগঞ্জ থানার ওসি মো. মাহাবুবুর রহমান বলেন, সন্দেহভাজনদের বিশেষ নজরদারীতে রাখা হয়েছে। রহস্যজনক দুই নারী হত্যার ঘটনা উদঘাটনে পুলিশের একাধিক বিশেষ টিম অভিযান চালাচ্ছে।