শৈত্য প্রবাহ আর ঘন কুয়াশায় বীজতলা কোল্ড ইনজুরির কবলে শৈত্য প্রবাহ আর ঘন কুয়াশায় বীজতলা কোল্ড ইনজুরির কবলে - ajkerparibartan.com
শৈত্য প্রবাহ আর ঘন কুয়াশায় বীজতলা কোল্ড ইনজুরির কবলে

3:55 pm , January 21, 2023

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥  দক্ষিণাঞ্চলে ৩ লাখ ৭০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদে বীজতলা তৈরীর লক্ষ্য অতিক্রম করলেও পৌষের শুরু থেকে তাপমাত্রা অব্যাহতভাবে স্বাভাবিকের নিচে থাকা এবং ঘন কুয়াশায় ‘কোল্ড ইনজুরি’ নিয়ে শংকিত কৃষিবিদরা। চলতি রবি মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলের ১১ জেলায় বোরো ধান থেকে প্রায় ১৭ লাখ টন চাল পাবার লক্ষ্য স্থির করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। সদ্য সমাপ্ত খরিপ-২ মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলে ৮ লাখ ৫৭ হাজার ১৩৮ হেক্টরে আমন আবাদ লক্ষ্য অতিক্রম করে প্রায় ২০ লাখ ৫৬ হাজার টন চাল উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছে বলে মনে করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর-ডিএই’র দায়িত্বশীল মহল। কিন্তু মৌসুমের শুরু থেকে তাপমাত্রার পারদ অব্যাহতভাবে স্বাভাবিকের নিচে থাকায় জনস্বাস্থ্যের সাথে রবি আবাদ ও উৎপাদনে যথেষ্ট বিরূপ প্রভাব পড়ছে। অথচ বিগত খরিপÑ১ ও খরিপ-২ মৌসুমের পরে চলতি রবি মৌসুম মিলিয়ে দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় ৫০ লাখ টন দানাদার খাদ্য উৎপাদনের কথা। এমনিক তাপমাত্রা স্বাভাবিকের নিচে নামার সাথে কুয়াশায় দক্ষিণাঞ্চলে শীতকলীন সবজির উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে গুনগত মানও। চলতি রবি মৌসুমে বরিশাল কৃষি অঞ্চলের ১১ জেলায় প্রায় ৭০ হাজার হেক্টরে শীতকালীন সবজির আবাদ হচ্ছে। উৎপাদন লক্ষ্য প্রায় ১৫ লাখ টন। এবার ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’এ ভর করে কার্ত্তিকের নজিরবিহীন প্রবল বর্ষণে দক্ষিণাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকার আগাম শীতকালীন সবজিসহ অন্যান্য ফসলের ব্যাপক ক্ষতির পরেও কৃষি যোদ্ধারা পুনরায় রবি ফসল আবাদে মাঠে।ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াশ’,‘অশণি’ ও ‘সিত্রাং’এর মত ভয়াবহ প্রকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে অব্যাহত লড়াই করছে দক্ষিণাঞ্চলের কৃষিযোদ্ধারা।  বরিশাল কৃষি অঞ্চলের ১১ জেলায় একের এপর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ কৃষকদের দু:শ্চিন্তা বৃদ্ধি করছে। এবার শীত মৌসুম শুরুর আগেই তাপমাত্রার পারদ স্বাভাবিকের নিচে নামতে থাকে। বরিশালে তাপমাত্রা ইতোমধ্যে প্রায় ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াসে নেমে গেছে। যা স্বাভাবিকের প্রায় ৪ ডিগ্রি নিচে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলমান মৃদু থেকে মাঝারী শৈত্য প্রবাহের কবলে পড়েছে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি জেলা। মাঘের শুরুতেই তাপমাত্রা স্বাভাবিকের ২-৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস নিচে নেমে যাবার সাথে উত্তর-পশ্চিমের হিমেল হাওয়ায় বোরো বীজতলা ক্রমাগত ‘কোল্ড ইনজুরির’ কবলে পড়তে যাচ্ছে। পাশাপাশি হাড় কাঁপানো শীতে কৃষক ও কৃষি শ্রমিকরা মাঠে নামতে পারছেন না। অথচ সপ্তাহ দুয়েক আগেও সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের মাঠে মাঠে আমন কাটার ধুম চলেছে।তবে চলমান শৈত্যপ্রবাহ গম উৎপাদনে যথেষ্ট ইতিবাচক ফল দেবে বলে আশাবাদী কৃষিবীদরা। চলতি রবি মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে ১ লাখ ৫৫ হাজার টন গম উৎপাদনের লক্ষ্যে কৃষিযোদ্ধারা কাজ শুরু করেছেন। প্রকৃতির বিরুদ্ধে লড়াই করে আউশ ও আমনের সফলতার পরে বরিশাল কৃষি অঞ্চলের ১১ জেলায় আরো প্রায় সাড়ে ১৭ লাখ টন বোরো চাল পাবার লক্ষ্যে বীজতলা তৈরী সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু অব্যাহত শৈত্যপ্রবাহ আবাদ লক্ষ্য অর্জনে ঝুঁকি বৃদ্ধি করছে। ইতোমধ্যে প্রায় ১ লাখ হেক্টরে বোরো আবাদ সম্পন্ন হলেও বীজ নিয়ে কৃষকের দুঃশ্চিন্তা বাড়ছে। তবে ভাটি এলাকার বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের অনেক এলাকায় আমন কর্তন সম্পন্ন হবার পরে কিছুটা বিলম্বে বীজতলা তৈরী হওয়ায় ফেব্রুয়ারীর শুরু থেকে মার্চের মধ্যভাগ পর্যন্ত বোরো আবাদ চলবে বলে মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীরা জনিয়েছেন। বিগত প্রায় ৩টি বছরের করোনা মহামারী সংকটে কৃষি যোদ্ধারাই সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে মূখ্য ভূমিকা পালন করছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। তাদের মতে, একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর করোনা মহামারী সারা দেশের মত দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতিতে যে বিরূপ পরিস্থিতি তৈরী করে, তা থেকে উত্তরণে কৃষক ও কৃষির ভূমিকা ছিল অপরিসীম। আর কৃষিনির্ভর দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতিকে সচল রাখতে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন কৃষিযোদ্ধারা। বিগত খরিপ-১ ও ২ মৌসুম সহ চলতি রবি মৌসুমে আউশ,আমন,বোরো, গম, ডাল,তেলবীজ ও তরমুজ সহ বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি উৎপাদনে প্রকৃতির বিরুদ্ধে লড়াই করেছে দক্ষিণাঞ্চলের কৃষিযোদ্ধারা। খাদ্য উদ্বৃত্ত দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি অর্থনীতি এখনো যথেষ্ট শক্ত অবস্থানে থাকলেও তার প্রায় পুরোটাই প্রকতি নির্ভর বলে মনে করছেন কৃষিবীরা।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT