3:26 pm , January 15, 2023

প্রতিমন্ত্রীর আশ্বাসে বিশ্বাস রাখতে চান বাসিন্দারা
আরিফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিবেদক ॥ গত ২০২১ সালের মার্চে সদর উপজেলার চরকাউয়া, চাঁদপুরা ও টুঙ্গিবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের সড়ক ও ব্রীজের উন্নয়ন নিয়ে পত্রপত্রিকায় সংবাদ তুলে ধরে তা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছেও পৌঁছে দেয়া হয়। ঐ সময় সংশ্লিষ্ট প্রশাসন কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছিলেন এই সড়ক ও ব্রীজ তৈরির বিষয়ে। রীতিমতো পরিমাপ হয়েছে সড়কগুলোতে। অথচ দুই বছর অতিবাহিত হওয়ার পর পুনরায় ঐ এলাকাগুলোতে ঘুরে দেখা গেছে একইচিত্র। দুটি মাত্র সড়কের কাজ ধরা হয়েছে এবং ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হয়েছে ব্রীজসহ তিনটিতে। আবার যেসব সড়কের কাজ ধরা হয়েছে তা আংশিক মাত্র। রোববার এমনটাই দেখা গেছে সদর উপজেলার চাঁদপুরা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের বাদশা বাড়ি সড়কে। এখানে চরকাউয়া থেকে গোমা সংযোগ সড়কের মাথায় স্থানীয় সংসদ সদস্য পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্ণেল অব. জাহিদ ফারুকের ভিত্তি প্রস্তর বসানো রয়েছে। বাদশা বাড়ি নামের এই সড়কটির শেষমাথায় প্রায় পৌনে এক কিলোমিটার কাজের অনুমোদন হয়নি আজো। এখানে ঘোপের হাট থেকে তালুকদার হাট সড়কটিতে প্রতিদিন স্কুল কলেজের ছেলেমেয়েরা চলাচল করে, বর্ষা মৌসুমে হাঁটু কাদা পানিতে তাদের চলাচল করতে হয়। অথচ প্রতিশ্রুতির জালে এখনো বন্দী এই সড়ক। এলাকাবাসীর অভিযোগ, সড়কের মাথায় ঘোপের হাট প্রান্তে একটা ইটভাটা থাকায় প্রতিবার মাপজোখ শেষে ভাটা মালিকের সাথে আলোচনায় কাজ আটকে যায়। প্রতিমন্ত্রী আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন এ বছরের মধ্যেই এ সড়কের কাজ শেষ হবে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কাজই শুরু হয়নি। একই অভিযোগ উপজেলার চরকাউয়া ইউনিয়নের কর্ণকাঠী থেকে রাণীরহাট ও চরকারঞ্জী এলাকাবাসীর। আজো হয়নি তাদের‘ ত্রিশ বছরের কষ্টের অবসান। একটি ব্রীজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হয়েছে এখানে কাজও ধরা হয়েছে। কিন্তু পাশেই আরো একটি ব্রীজ একইসড়কে ভেঙে পড়ে আছে। এখনে দুটি সেতুই একইসাথে না হলে একটির কোনো গুরুত্ব নেই বলে জানালেন স্থানীয় চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম ছবি নিজেই। তিনি বলেন, আংশিক বাজেট হচ্ছিল বলেই আমি এই বরাদ্ধ নিতে রাজী হইনি। চাঁদপুরা ইউনিয়নে এখনো অনেকগুলো মাটির সড়ক পড়ে আছে। কিছু কিছু সড়কে কাজ শুরু হলেও তা আধাআধি অনুমোদন হয়েছে বলে জানা গেছে। যে কাজ শেষ হলেও গ্রামবাসীর কোনো উপকার হবে না। টুঙ্গিবাড়িয়ার বেশকিছু সড়ক ব্যক্তিগতভাবে উন্নয়ন হলেও পতাং ও বরাইকাঠী গ্রামের সব সড়ক এখনো মাটির রাস্তা। নেহালগঞ্জের কবরস্থান ও ফেরিঘাটের সমস্যার সমাধান আজো হয়নি। চাঁদপুরা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড তালুকদার হাট ও চাঁদপুরা গ্রামবাসীর অভিযোগ ইটভাটায় আটকে গেছে সদর উপজেলার চাঁদপুরা ইউনিয়নের তালুকদার হাট থেকে ঘোপের হাট হয়ে বৈরাগবাড়ি ও চরকরঞ্জী হাইস্কুল যাতায়াতের পথটি। দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে মাটির সড়কে কাদামাখা পথে চলাচল তালুকদার হাট স্কুল এন্ড কলেজ ও চরকারঞ্জী হাইস্কুলের প্রায় পাঁচ হাজার ছাত্রছাত্রীর। সম্প্রতি স্থানীয় সংসদ সদস্য পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্ণেল অব. জাহিদ ফারুক এই সড়কের উন্নয়নে জরুরী নির্দেশনা দিয়েছেন। তার নির্দেশনা অনুসরণ করে তালুকদার হাট থেকে রচি ব্রিকফিল্ড পর্যন্ত এক কিলোমিটার মাটির সড়ক পাকাকরণের অনুমোদন হয়েছে বলে জানালেন এই সড়কের আশেপাশের বাসিন্দারা। শাহ আলম ও হানিফ হাওলাদার অভিযোগ জানিয়ে বলেন, এখানে ইটভাটার মধ্য দিয়ে চলে গেছে সড়কের মূল নকশা। ইউনিয়ন পরিষদের সাথে যোগসাজসে মূল নকশা থেকে সড়ক ঘুরিয়ে দিয়েছেন ইটভাটার মালিক। এ কারণে এই সড়কের কাজের অনুমোদন হয়, প্রকৌশলী এসে মাপঝোঁক কিন্তু সড়ক আর হয় না। ইতিপূর্বে এ নিয়ে পরিবেশ দপ্তর, সমাজসেবা ও জেলা প্রশাসক বরাবরেও অভিযোগ করেছি আমরা। মূল নকশা ধরে সড়কের কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন করার দাবী গ্রামবাসীর। তবে ইটভাটার মালিক দুলাল হাওলাদারও কিন্তু একই দাবী জানালেন। তিনি বলেন, আমিও চাই মূল নকশা ধরে সড়কটি সম্পূর্ণ হোক। আধাআধি যেন না হয়। তাহলে কারোই কোনো উপকারে আসবেনা এ সড়ক। ইটভাটাকে দোষারোপ করার কোন সুযোগ নেই। নকশা ঘুরিয়ে বিকল্প সড়ক করেছে ইউনিয়ন পরিষদ। আমি বা আমার ইটভাটা করেনি। রচি ব্রিকফিল্ডের মালিক সাইফুল ইসলাম দুলাল হাওলাদার আরো বলেন, এই রাস্তাটি নকশা অনুযায়ী হলেও আমার কোনো ক্ষতি নেই। আমিও চাই স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীদের যেন কষ্ট না হয়। যেভাবে ইচ্ছে প্রশাসনের প্রতি এই সড়ক তৈরি করে দেয়ার অনুরোধ আমারও। তাতে যদি আমার কোনো সাহায্য লাগে আমি তাও করতে প্রস্তুত। চাঁদপুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এইচ এম জাহিদ হোসেন জানান, আমার ইউনিয়নে ১৫টি সড়কের উন্নয়ন প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। ঘোপের হাট থেকে তালুকদার হাট সড়কের বরাদ্দ হয়েছে কিন্তু বাজেট এখনো আসেনি তাই কাজ ধরা যাচ্ছে না। জাহিদ আরো বলেন, সম্প্রতি স্থানীয় সংসদ সদস্য পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্ণেল অব. জাহিদ ফারুক এর নির্দেশনায় স্থানীয় সরকার বিভাগ বরিশাল সদর উপজেলার চরকাউয়া, টুঙ্গিবাড়িয়া, চাঁদপুরা ইউনিয়নের জন্য বেশকিছু সড়ক পাকাকরণের অনুমোদন দিয়েছে। টুঙ্গিবাড়িয়ার চেয়ারম্যান নাদিরা রহমান বলেন, কিছু সড়কের কাজের অনুমোদন হয়েছে তবে বেশিরভাগ সড়কই আধাআধি অনুমোদন হয়েছে। যা আসলে গ্রামবাসীর কোনো উপকারেই আসবে না বলে জানান তিনি। তিনি আরো বলেন, পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্ণেল অব. জাহিদ ফারুক এখানে এসেছিলেন। তিনি সব সড়ক ও ব্রিজ ঘুরে দেখেছেন। আশ্বাস দিয়েছেন দ্রুত একাজ সম্পন্ন করার। স্থানীয় সংসদ সদস্যের আশ্বাসে বিশ্বাস রাখতে চান বরিশাল সদর উপজেলার বাসিন্দারা। গ্রামবাসী রাসেল বলেন, চরকরঞ্জী হাইস্কুলে জাহিদ ফারুক এমপি এসেছিলেন। তিনি কথা দিয়ে গেছেন খালের পুন.খনন, ব্রীজ ও সড়ক হবে। আমরা তার কথায় বিশ্বাস রাখতে চাই। তবে তিনি পূর্ব কর্ণকাঠীর এই পাশটায় কখনো আসেননি বলে দাবী করলেন রাসেলের পাশে এসে দাঁড়ানো আরেক গ্রামবাসী বয়োবৃদ্ধ মূসা খান। তিনি বলেন, এরইমধ্যে খাল খননের কাজ করে দিয়েছেন তিনি। তবে এখন ঐ ব্রীজ দুটির একটির কাজ শুরু হয়েছে। পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী এলাকার মোট তিনটি ব্রীজের ভিত্তি প্রস্তর উদ্বোধন করেছেন। এবার প্রতিমন্ত্রীর কথায় ভরসা রাখতে চাই। একই কথা জানালেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মজিবর রহমান। তিনি বলেন, পূর্ব কর্ণকাঠী এলাকায় তিনটি মাটির সড়ক এখনো রয়েছে। সবমিলিয়ে সাত-আট কিলোমিটার হবে। পূর্ব কর্ণকাঠী ব্রীজের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। রাণীরহাট সড়কের সংস্কার খুব জরুরী বলে জানান মজিবর রহমান। বরিশাল ৫ আসনের সংসদ সদস্য এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কর্ণেল অবঃ জাহিদ ফারুক বলেন, সদর উপজেলায় মোট ১৭৪ টি সড়ক এবং ২৪টি ব্রীজ ও কালভার্ট অনুমোদন হয়েছে। এরমধ্যে চরকাউয়া, চাঁদপুর ও টুঙ্গিবাড়িয়ার জন্য ৭৩ টি সড়ক রয়েছে। বিশ্বের অর্থনৈতিক মন্দার কারণে এই মুহূর্তে সড়কের বাজেট আটকে আছে। খুব শীঘ্রই এখাতে বরাদ্দ শুরু হবে বলে আশাবাদী আমি। জাহিদ ফারুক আরো বলেন, আমরা ইতিপূর্বে ১৬টি ব্রীজ ও কালভার্টের অনুমোদন পেয়েছি। এরমধ্যে পূর্ব কর্ণকাঠীর তিনটি ব্রীজের কাজ প্রায় শেষের দিকে, দুটির কাজ চলমান রয়েছে। চলতি বছরের মধ্যেই অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত হবে বলে জানালেন পানি প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক এমপি।