2:51 pm , January 3, 2023

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ করোনা মহামারী সংকট অতিক্রম করে গত অর্থ বছরে দক্ষিণাঞ্চলে আয়কর আদায়ে সর্বকালের রেকর্ড গড়েছে। বিভাগে মোট আয়কর আদায় হয়েছে প্রায় সাড়ে ৬শ কোটি টাকা। যা পূর্ববর্তী অর্থ বছরের চেয়ে প্রায় ৫৫ কোটি টাকা বেশী। চলতি অর্থ বছরে দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলা থেকে সাড়ে ৭শ কোটি টাকা আয়কর আদায়ের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে বরিশাল কর অঞ্চল। আয়কর আদায়ের পরিমান বিগত বছরগুলোর তুলনায় যথেষ্ট ভাল এবং আশাব্যঞ্জক বলে জানিয়েছেন বরিশাল কর অঞ্চলের কমিশনার কাজী লতিফুর রহমান। ২০০১Ñ০২ অর্থ বছরে মাত্র ২৩ কোটি টাকা আয়কর আদায়ের মধ্যে দিয়ে বরিশাল কর অঞ্চলের যাত্রা শুরু হলেও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নজরদারী সহ করদাতাদের ইতিবাচক মনোভাবে বিগত ২০ বছরে তা সাড়ে ৬শ কোটিতে উন্নীত হয়েছে। পাশাপাশি করদাতার সংখ্যাও মাত্র ২০ হাজার থেকে চলতি অর্থ বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৯৩ হাজারে উন্নীত হয়েছে বলে জানাগেছে। যা এর আগের অর্থ বছরে ছিলো ৭৮ হাজারের কিছু বেশী। চলতি অর্থ বছরে দক্ষিণাঞ্চলে করদাতার সংখ্যা লাখের অংকে পৌঁছবে বলে আশাবাদী কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে টিআইএনধারীর সংখ্যাও প্রায় ৩ লাখ ৩০ হাজারে উন্নীত হয়েছে।
কৃষি নির্ভর দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের প্রধান জীবিকার পাশাপশি কৃষিÑঅর্থনীতিই এখনো মূল চালিকা শক্তি। তবে গত দুই দশকে অন্যান্য ব্যবসা ধীরে ধীরে সম্প্রসারিত হলেও করোনা সংকটের কারণে বিগত ৩টি অর্থ বছরে সারাদেশের ন্যায় এ অঞ্চলেও অর্থনীতিতে যথেষ্ট নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। কিন্তু এর পরেও কর দাতাদের ইতিবাচক মনোভাবের ফলে বরিশাল কর অঞ্চলে প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন বরিশাল কর অঞ্চলের কমিশনার।
এখনো দক্ষিণাঞ্চলের বেশীরভাগ মাঝারী এবং বৃহৎ শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সহ বড় মাপের ব্যসায়ীরা আয়কর রিটার্ন ঢাকাতে জমা দিচ্ছেন। ফলে বরিশাল কর অঞ্চলের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি কিছুটা হলেও ব্যাহত হচ্ছে বলে জানা গেছে।
আয়করের প্রতি ভীতি দূর করাসহ কর প্রদানে নৈতিক দায়িত্বের বিষয়টি মানুষের মধ্যে ক্রমে প্রতিষ্ঠিত হবার ফলে দক্ষিণাঞ্চলে আয়কর আহরণ বাড়ছে বলে মনে করছেন কর বিভাগের দায়িত্বশীল মহল। তবে একই সাথে করদাতাদের সাথে আরো সৌজন্যমূলক আচরনসহ কর প্রশাসনকে ‘পরিপূর্ণ হয়রানী বিহীন জনবান্ধব প্রতিষ্ঠান’ হিসেবে গড়ে তোলারও তাগিদ দিয়েছেন করদাতারা। পাশাপাশি যেকোন অসৎ উদ্দেশ্যে করদাতাদের ওপর ন্যূনতম বাড়তি চাপ প্রয়োগসহ হয়রানির বিষয়টি পরিহারের আহবান জানানো হয়েছে সাধারন করদাতাদের তরফ থেকে। এক্ষেত্রে করদাতাদের প্রতি ন্যায়বিচার সহ তাদের সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়টির প্রতি গুরুত্ব প্রদানের আহবান জানিয়েছেন করদাতারা।
এদিকে দক্ষিণাঞ্চল জুড়েই কর প্রশাসন চলছে জনবল সংকটসহ নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যে। বরিশাল কর অঞ্চলের ২২টি সার্কেলে মঞ্জুরীকৃত প্রায় ২৬৫ জনবলের মধ্যে ১৩৯ টি গুরুত্বপূর্ণ পদই শূন্য। ২২টি সার্কেলের উপ-কমিশনারের পদে আছেন ৮জন। ফলে একজন উপ-কমিশনারকে একাধিক সার্কেলের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সংকট তৈরী হচ্ছে। দীর্ঘ দিন ধরেই উপ-কর কমিশনার থেকে যুগ্ম কর কমিশনার পর্যন্ত সব পদেই জনবল সংকট চলছে। এমনকি ৩জন যুগ্ম কর কমিশনার পদের বিপরীতে আছেন মাত্র একজন। ২৯ পরিদর্শকের ৮টি পদে কোন জনবল নেই।
এদিকে বরিশালে কর কমিশনারেট-এর জন্য একটি বহুতল ভবন নির্মানের বিষয়টি গত প্রায় দেড় যুগ ধরে নানা টেবিলে ঘুরপাক খেয়ে সর্বশেষ ‘সরকারী ব্যয় কৃচ্ছতা সাধনের অংশ হিসেবে’ প্রকল্পটির চূড়ান্ত অনুমোদন স্থগিত করা হয়েছে। প্রায় ৮০ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ের ওই ভবন নির্মান প্রকল্পটি কবে আলোর মুখ দেখবে তা এখন কর্তৃপক্ষের কাছে অজ্ঞাত। ফলে বরিশাল মহানগরীর নিজস্ব ও ভাড়া বাড়ীতে ছড়িয়ে ছিটেয়ে থাকা কর কমিশনার সহ বিভিন্ন সার্কেলের দপ্তরগুলোতে অনেক সময়ই কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে। এতে করে কারদাতারা কিছুটা ভোগান্তির সম্মুখিন হচ্ছেন।
সার্বিক বিষয়ে বরিশাল কর অঞ্চলের কমিশনার কাজী লতিফুর রহমানের সাথে আলাপ করা হলে তিনি দক্ষিণাঞ্চলে কর আহরণ প্রবৃদ্ধিকে যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক বলে মন্তব্য করেন। পাশাপাশি এ অঞ্চলের মানুষের মধ্যে কর প্রদানে ইতিবাচক সাড়ার কথাও জানান তিনি। কর দাতাদের ওপর কোন অনৈতিক চাপ প্রয়োগ থেকে বিরত থাকতে সব কর্মকর্তাকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে বলে জানিয়ে যেকোন অনিয়মের ক্ষেত্রে সব সময়ই ‘জিরো টলারেন্স’ নিয়ে কাজ করার কথাও জানান কর কমিশনার। জনবল সংকটের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি এনবিআর সহ অর্থ মন্ত্রনালয় অবহিত আছে। ভবিষ্যতে এ সমস্যা সমাধানে নিশ্চই ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ’।