3:11 pm , December 27, 2022

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ প্রয়োজনীয় ফেরির অভাবে চট্টগ্রাম-বরিশাল-মোংলা/খুলনা মহাসড়কের ভোলা ও লক্ষ্মীপুরের মধ্যবর্তী ভাটি মেঘনায় যানবাহন পারাপার নির্বিঘœ হচ্ছেনা। ফলে বরিশাল, খুলনা ও চট্টগাম বিভাগসহ দেশের ৩টি সমুদ্র বন্দরে সরাসরি সড়ক পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতি এখনো অনেক দূরে। এমনকি দেশের প্রধান স্থলবন্দর বেনাপোল ও ভোমড়া ছাড়াও দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার সাথে চট্টগ্রাম অঞ্চলের সংক্ষিপ্ত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থাও এ মহাসড়কের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু শুধুমাত্র বরিশাল-ভোলা এবং ভোলা-লক্ষ্মীপুরের মধ্যবর্তী দুর্বল ফেরি সার্ভিসের কারণে পরিস্থিতির উন্নতি ব্যাহত হচ্ছে। তবে রাষ্ট্রীয় নৌ-বানিজ্য প্রতিষ্ঠান বিআইডব্লিউটিসি’র কাছে ফেরির কোন সংকট নেই। ২০০১ সালে দুটি ‘ইউটিলিটি টাইপ-১’ ফেরির সাহায্যে সড়ক অধিদপ্তর দেশের বিচ্ছিন্ন ব-দ্বীপ জেলা ভোলাকে বরিশালসহ সারাদেশের সাথে সংযুক্ত করে। ২০০৫ সালে রাষ্ট্রীয় নৌ বানিজ্য প্রতিষ্ঠান-বিআইডব্লিউটিসি এ রুটে ফেরি সার্ভিস প্রবর্তন করে। ২০০৮ সালে দুটি কে-টাইপ ফেরির সাহায্যে ভোলা ও লক্ষ্মীপুরের মধ্যে যানবাহন পারাপার শুরুর মাধ্যমে সংস্থাটি সুদূর চট্টগ্রাম থেকে বরিশাল হয়ে খুলনা/মোংলা পর্যন্ত সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে।
সে সময়ে কারিগরি কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী আন্ত:মন্ত্রনালয় সভায় ভোলা ও লক্ষ্মীপুরের মধ্যে ‘বিশেষ ধরনের উপকূলীয় ফেরি’ সার্ভিস প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু বিগত ১৫ বছরে সংস্থাটি সরকারী অর্থে অন্তত ২৫টি নতুন ফেরি সংগ্রহ করলেও উপ মহাদেশের সর্বাধিক দৈর্ঘ্যরে উপকূলীয় ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ এ রুটের জন্য আর কোন বিশেষ ফেরি তৈরীর উদ্যোগ নেয়নি। বর্তমানে আরো অন্তত ৫টি ফেরি নির্মানাধীন থাকলেও ভোলা ও লক্ষ্মীপুরের মধ্যবর্তী বিক্ষুব্ধ ভাটি মেঘনার উপকূলীয় নৌপথের জন্য কোন ফেরি তৈরী হচ্ছে না।
ফলে মধ্য মার্চ থেকে অক্টোবরের মধ্যভাগ পর্যন্ত দুর্যোগকালীন সময়ে প্রায়শই এরুটে ফেরি সার্ভিস বন্ধ থাকছে। পাশাপাশি লক্ষ্মীপুর প্রান্তের মজু চৌধুরীর হাট ঘাটটি যে রহমতখালী চ্যানেলের অভ্যন্তরে, সেখানে প্রতিবছরই অন্তত ছয়মাস নাব্যতা সংকট থাকছে। মূলত মেঘনার সাথে সংযুক্ত চ্যানেলটির মুখে পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি অচল রেগুলেটরের কারণে প্রবাহ রুদ্ধ থাকায় এ সংকট তৈরী হলেও তা থেকে উত্তরণে বিআইডব্লিউটিএ এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের মধ্যে কোন সমন্বয় নেই। ফলে শুষ্ক মৌসুমে প্রায়শই ভোলা ও লক্ষ্মীপুরের মধ্যে ফেরি সার্ভিসটি জোয়ার-ভাটার ওপর নির্বরশীল হয়ে পড়ছে।
এসব সমস্যার সাথে পর্যাপ্ত ফেরির অভাবেও ২৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এ ফেরি সার্ভিসটির প্রতি আস্থা রাখতে পারছেন না পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সহ সাধারন যাত্রীরা। অথচ এ রুটটি ব্যবহার করেই বরিশাল ও খুলনা বিভাগ সহ ফরিদপুর অঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ অতি অল্প সময়ে স্বল্প দূরত্ব অতিক্রম করে চট্টগ্রামে যাতায়াত করতে পারতেন।
বর্তমানে এ রুটে বিআইডব্লিউটিসি’র ৫টি কে-টাইপ ফেরি থাকলেও সেখান থেকে ১টি অন্যত্র স্থানন্তর করা হচ্ছে। ফলে মাত্র ৪টি কে-টাইপ ফেরির সাহায্যে যানবাহন পারাপার কঠিন হয়ে পড়ছে। মঙ্গলবার সকাল ৬টার পূর্র্ববর্তী ২৪ ঘন্টায় এ রুটে মাত্র ২৪১টি যানবাহন পারাপার সম্ভব হয়েছে। বিআইডব্লিউটিসি’র দায়িত্বশীল সূত্রের মতে, এ রুটে যানবাহনের সংখ্যা আগের চেয়ে কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। আর পরিবহন মালিকÑশ্রমিকরা এ বক্তব্যের সাথে দ্বিমত পোষন করে জানিয়েছেন, ‘বছরের পর বছর ধরে এ ফেরি রুটের নানামুখি ভোগান্তির কারণে তারা এখন খুব সহজে ওই পথ ধরেন না।
আর বরিশাল ও ভোলার মধ্যবর্তী লাহারহাটÑভেদুরিয়া রুটে ৪টি ‘ইউটিলিটি টাইপ-১’ ফেরির সাহায্যে প্রতিদিন গড় ৪শর মত যানবাহন পারাপার সম্ভব হচ্ছে। তবে ফেরির সংখ্যা বাড়লে যানবাহন পারাপার বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের ৩টি উপকূলীয় বিভাগ সহ সবগুলো সমুদ্র বন্দরের মধ্যে সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা আরো নির্বিঘœ হবে বলে মনে করছেন পরিবহন বিশেষজ্ঞরা।
এ ব্যাপারে মঙ্গলবার বিআইডব্লিউটিসি’র পরিচালক (বানিজ্য) আশিকুজ্জামানের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি জানান, ভোলাÑ লক্ষ্মীপুর সেক্টর থেকে একটি ফেরি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হলেও আগামী সপ্তাহেই সেখানে আরেকটি ফেরি মোতায়েন করা হচ্ছে। পাশাপাশি অগামী মার্চÑএপ্রিল নাগাদ সংস্থার হাতে আরো কয়েকটি নতুন মিডিয়াম ফেরি আসছে। সেখান থেকে অন্তত ৪টি ভোলাÑলক্ষ্মীপুর সেক্টরে যানবাহন পারাপারে মোতায়েনের কথাও জানান তিনি। ফলে ওই সেক্টরের সমস্যা ও সংকট থেকে অনেকটা উত্তরণ ঘটবে বলেও জানান তিনি।