3:08 pm , December 3, 2022

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ স্বাধীন বাংলায় বরিশালের প্রথম ব্যান্ড ক্রিডেন্স এর ভোকালিস্ট কুদরত এলাহী টুটুল (৬৭) ইন্তেকাল করেছেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট ঢাকার মিন্টো রোডে শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের বাসভবনে হত্যাকান্ডের চাক্ষুস সাক্ষী ছিলেন। এছাড়াও তিনি বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও ১৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন।
শনিবার সকালে নগরীর মুসলিম গোরস্থান রোড এলাকার বাসায় ইন্তেকাল করেন তিনি। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী ও দুই ছেলে সন্তানসহ অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন। তার মৃত্যুতে বরিশালের ব্যান্ড শিল্পীসহ সুশীল সমাজের মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। মৃতের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া চেয়েছেন স্বজনসহ সহশিল্পীরা।
কুদরত এলাহীর বড় ছেলে তৌসিফ এলাহী জানান, বাবা বাধ্যর্কজনিত বেশকিছু রোগে আক্রান্ত ছিলেন। সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হন পরিবারের সদস্যরা।
মৃতের বন্ধু ও ক্রিডেন্স ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য জিল্লুর রহমান বলেন, ৫৫ বছর অধিক সময় ধরে একসাথে পথ চলা আমার ও টুটুলের। কত স্মৃতিই না আজ হাতরে বেড়াতে হচ্ছে। চলতি বছরের আমার দুই ভাই আমাকে ছেড়ে গেছে, এখন সবথেকে কাছের বন্ধুটিও ছেড়ে গেলো। সবাই ওর জন্য দোয়া করবেন।
তিনি বলেন, এসএসসি পরীক্ষা শেষে টুটুল ঢাকায় গিয়েছিলো পড়াশুনা করার জন্য, তবে সে কিছুদিন পরে বরিশালে ফিরে আসে এবং আমাদের ব্যান্ডে ভোকালিস্ট হিসেবে যোগ দেয়।
তিনি বলেন, ১৯৭৪ সালে আমাদের ব্যান্ডের যাত্রা শুরু হয়। তখন ব্যান্ড বলা হতো না, পপ গ্রুপ বলা হতো। আজম খান ও ফেরদৌস ওয়াহিদ পপ গ্রুপ ছিলো ঢাকায়, আর সেই সমসাময়িক সময়ে রিন্টু, রফিক, কাওসার, জন মাইকেল চৌধুরী পিন্টু ও আমি ক্রিডেন্স ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য। এরপর টুটুল এসে যোগ দিলে আমাদের ব্যান্ড আরও চাঙ্গা হয়। তখনকার যুব সমাজের মাঝে টুটুল বেশ জনপ্রিয় ছিলো, স্টেজে গান গাইতে উঠলেই ওয়ান মোড় শব্দটি শোনা যেতো, এককথায় মানুষজন পাগল ছিলো ওর প্রতি। আর আমি ও টুটুল একসাথে গান গাইলে তো কথাই ছিলো না।
তিনি বলেন, আমার একটি গান বিটিভিতে রেকর্ডিং হয়েছিলো আর ওর স্বর্ণালী স্বপ্নিল আজ রাতে নামক একটি গানও রেকর্ডিং হয়েছিলো। যে দুটি গানই প্রচারও হয়েছিলো।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালো রাতে ব্যান্ডের সবাই আমরা শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের বাসভবনে থেকে ভয়ানক সেই রাতের সাক্ষী হয়েছিলাম।
এই ব্যান্ডের সাথে নব্বই দশক থেকে পথ চলতে থাকা মিন্টু চৌধুরী, সবীর প্যাট্রিক মধু ও সমরেশ রায় পলাশ বলেন, টুটুল ভাইসহ এই ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাকালীন সবাই বন্ধুসুলভ ছিলেন, সবাই একসাথে হলে আড্ডায় মেতে উঠতেন জীবনের এই বয়সে এসেও। তাদের কাছ থেকে কতকিছুই শিখেছি। কিন্তু এভাবে চলে যাবেন ভাবতে পারিনি। বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ আজ টুটুল ভাইকে শেষ বিদায় জানাতে আসছেন, তবে সে আমাদের মনের ভেতরে চিরদিন বেঁচে থাকবেন।