3:21 pm , November 30, 2022

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ দেশের দক্ষিণাঞ্চলে দেড় সহ¯্রাধিক কোটি টাকার দেশীয় তহবিলে এ যাবতকালের সর্ববৃহৎ নদী ভাঙ্গন রোধ প্রকল্পের কাজ শেষ হচ্ছে চলতি অর্থ বছরেই। এর ফলে খর¯্রােতা পদ্মার ছোবল থেকে শরিয়তপুরের নড়িয়ার বিশাল এলাকা ছাড়াও কীর্তনখোলা নদীর ভাঙ্গন থেকে বরিশাল মহানগর সন্নিহিত এলাকা রক্ষা পাবে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বরিশাল ও ফরিদপুর জোনের প্রধান প্রকৌশলী জানিয়েছেন। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনায় ক্রয় নীতিমালার আলোকে এলটিএম পদ্ধতিতে বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন খুলনা শীপইয়ার্ড নড়িয়াতে প্রায় ১০ কিলিামিটার দীর্ঘ বৃহৎ এ নদী তীর রক্ষা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। দেশে পদ্মা সেতুর নদী শাসনের পরে এটিই বৃহৎ প্রকল্প। ১ হাজার ৩২৬ কোটি টাকার এ প্রকল্পটির পাশাপাশি প্রায় দুই‘শ কোটি টাকা ব্যয়ে বরিশাল মহানগরীর পাশে কীর্তনখোলা নদীর ভাঙ্গন রোধ প্রকল্পটিও জুনের মধ্যেই শেষ হচ্ছে। প্রকল্পটির আওতায় কীর্তনখোলার ভাঙ্গন থেকে নগর পানি শোধনাগারসহ বেলতলা ফেলী ঘাট ও চরবাড়ীয়ার ৩ কিলোমিটার নদী তীর রক্ষা কাজ সমাপ্তির পথে ।
সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনায় ক্রয় নীতিমালা অনুযায়ী ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে খুলনা শীপইয়ার্ডের চুক্তির আওতায় শরিয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকায় পদ্মার ভাঙন রোধে প্রায় ১১শ কোটি টাকার চুক্তি সম্পাদন হয়। পরবর্তীতে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে ১ হাজার ৩২৬ কোটিতে উন্নীত হয়েছে।
প্রকল্পটির আওতায় নড়িয়ার ভাঙ্গন কবলিত প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকায় বিভিন্ন সাইজের ৪১ লাখ ৭৩ হাজার সিসি ব্লকের প্রায় ৩৭ লাখ তৈরী সহ সন্নিবেশ প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া প্রায় ৬৩ লাখ জিও ব্যাগের ৬০ লাখ সন্নিবেশ করা হয়েছে। ভাঙ্গন কবলিত এলাকা থেকে পদ্মার প্রবাহ সরিয়ে নিতে ড্রেজিং এর মাধ্যমে ২ কোটি ৭০ লাখ ঘন মিটার পলি অপসারণ সম্পন্ন করেছে খুলনা শীপইয়ার্ড। ফলে গত প্রায় ৪ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমে নড়িয়ার এলাকায় পদ্মার ভয়াল থাবা ইতিমধ্যে স্থমিত হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের পশ্চিম জোনের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবদুল হান্নান জানান, ইতিমধ্যে দেশের অন্যতম বৃহৎ ও ঝুঁকিপূর্ণ এ নদী শাসন প্রকল্পের কাজ প্রায় ৯০ ভাগ শেষ হয়েছে। পদ্মার মত খর¯্রােতা নদীর ভাঙ্গন রোধ কঠিন হলেও তা ভালভাবেই সম্পন্ন হওয়ায় তিনি মহান আল্লাহর দরবারে শোকরিয়া জানান। ভাঙন রোধ প্রকল্পের আওতায় প্রতিরক্ষা কাজ সম্পন্ন এলাকায় নতুন করে কোন ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়নি বলেও প্রধান প্রকৌশলী জানান। আগামী ৩০ জুনের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ শেষ হচ্ছে বলেও দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
এদিকে বরিশাল মহানগরীর বেলতলা খেয়াঘাট সংলগ্ন সিটি করপোরেশনের ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট থেকে উত্তর ও উত্তরÑপূর্ব দিকে চরবাড়ীয়া হয়ে প্রায় সাড়ে ৩ কিলোমিটার এলাকায় ভাঙ্গন রোধ প্রকল্পের কাজও প্রায় ৮০ ভাগের বেশী সম্পন্ন হয়েছে। ২০১৯ এর জানুয়ারীতে ২০৯ কোটি টাকার এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সরকারী ক্রয় নীতিমালার এলটিএম পদ্ধতির আওতায় খুলনা শীপইয়ার্ডের সাথে চুক্তি সম্পাদন করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। প্রকল্পের আওতায় বরিশালের কীর্তনখোলা নদীর ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় পৌনে ৫ লাখ জিও ব্যাগের প্রায় সোয়া ৪ লাখ সন্নিবেশ করে তার ওপরে ১২ লাখ ২০ হাজার সিসি ব্লকের প্রায় সাড়ে ৯ লাখ ইতিমধ্যে প্রতিস্থাপন সম্পন্ন হয়েছে। ফলে ওই এলাকার ভাঙ্গন রোধসহ নিরাপত্তা জোরদার ও মজবুত হয়েছে।
পাশাপাশি ভাঙ্গন কবলিত এলাকা থেকে কীর্তনখোলা নদীর প্রবাহ নিরাপদ এলাকায় ঘুরিয়ে দিতে ২৫ লাখ ঘনমিটার পলি অপসারণের পুরোটাই ইতোমধ্যে স¤পন্ন হয়েছে। ফলে কীর্তনখোলার ভাঙ্গন থেকে চরবাড়ীয়াসহ মহানগরীর বেলতলা এবং সিটি করপোরেশনের ‘ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট’ ছাড়াও চরবাড়িয়া এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে। প্রকল্পটির আওতায় ট্রিটমেন্ট প্লান্ট এলাকায় প্রায় সাড়ে ৩শ মিটার ‘সীট পাইলিং’ কাজও সম্পন্ন করছে খুলনা শীপইয়ার্ড।
এছাড়া আরো ১৬১ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭টি প্যাকেজে বরিশাল বন্দরের অপর পাড়ের চরকাউয়া থেকে উত্তরে সাহেবের হাট চ্যানেলের মোহনা পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার নদী তীর রক্ষা প্রকল্পের কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়োজিত এসব বেসরকারী নির্মান প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজের আওতায় কোন ড্রেজিং ছিলোনা। মোট ৮টি প্যাকেজের দুটি প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে বরিশাল বন্দরের অপর পাড় সহ মহানগরীর উত্তর ও উত্তর-পূর্ব প্রান্তে কীর্তনখোলা নদীর ভয়াবহ ভাঙ্গন প্রতিরোধ সম্ভব হতে যাচ্ছে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের দক্ষিণ জোনের প্রধান প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম সরকার।