এ আন্দোলন সমগ্র জাতিকে রক্ষা করার জন্য -মীর্জা ফখরুল এ আন্দোলন সমগ্র জাতিকে রক্ষা করার জন্য -মীর্জা ফখরুল - ajkerparibartan.com
এ আন্দোলন সমগ্র জাতিকে রক্ষা করার জন্য -মীর্জা ফখরুল

3:29 pm , November 5, 2022

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বিএনপি মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে আমাদের এই দেশকে মুক্ত করার জন্য যুদ্ধের সূচনা করেছিলেন। ৭ নভেম্বরের সিপাহী জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে নতুন একটা বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর আওয়ামী লীগ কি করেছে, সেই স্বপ্নকে ধ্বংস করে দিয়েছে। আমাদের সকল আশা আকাঙ্খাকে তারা চুরমার করে দিয়েছে। শনিবার বিএনপির বরিশাল বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। মীর্জা ফখরুল বলেন, এখানে মুক্তিযোদ্ধারা আছেন, শাহাজাহান ওমর বীর উত্তম আছেন, মেজর হাফিজ উদ্দীন আহম্মেদ বীর বিক্রম আছেন, সকলেই জানেন কি ছিলো স্বপ্ন, স্বপ্ন ছিলো আমাদের একটি গনতান্ত্রিক রাষ্ট্র, একটা মুক্ত চিন্তার দেশ। একটা সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন ছিলো। কিন্তু এ আওয়ামী লীগ সব ধ্বংস করে দিয়েছে। আওয়ামী লীগ একে একে আমাদের সমস্ত অর্জনগুলো ধ্বংস করেছে। তারা অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে, রাজনীতিকে ধ্বংস করেছে। রাজনীতিকে ধ্বংস করেছে কিভাবে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা জানেন আমরা একটা বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী, সংবিধানে তাই ছিলো। কিন্তু তারা কি করলো ১৯৭৫ সালে এক দলীয় সরকার ব্যবস্থা কায়েম করলো। আবার এখন এই ১৫ বছর ধরে একই স্বপ্ন তারা দেখছে। তারা এখানে এক দলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করতে চায়। শুধু একটা খোলস, একটা মোড়ক রাখতে চায় গণতন্ত্রের। আজকে ১৪ বছর ধরে সারা বাংলাদেশে যে অত্যাচার নির্যাতন চালিয়েছে, তার সাক্ষী আপনারা। হামলা আর মামলা এ দুটোই তাদের বড় অস্ত্র। তারা হামলা করবে, আবার যাদের উপর হামলা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা করবে। ভোলায় একটি লঞ্চে হামলা ও মামলা করার ঘটনা তুলে ধরে বলেন, সেখানে তারাই হামলা করেছে, আবার মামলা করেছে।
নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানে অনুষ্ঠিত গণ সমাবেশে তিনি আরো বলেন, আন্দোলনে নিহত ৫ নেতাকর্মী ও তাদের পরিবারের অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরে বলেন, আজ নিজেকে বড় অপরাধী মনে হয়। মনে হয়, আমরা যে আন্দোলন করছি, তার বলি হয়েছে ওরা। আমরা তো এ বাংলাদেশ চাইনি।
আমাদের দেশের আলেমদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে, তাদেরকেও আটক রাখা হচ্ছে। কেউ নিরাপদ নাই।
মীর্জা ফখরুল বলেন, আর কি করছে, আমরা বারবার বলতে চাই না। সমস্ত টাকা পাচার করে বিদেশে নিয়ে যাচ্ছে। কত টাকা পাচার হয়েছে। পরে আমি কি করবো, বৈশ্বিক সংকট, ডলারের সংকট। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। তখন মনে ছিলো না। যখন এই টাকাগুলি চুরি করে পাচার করছিলেন, বিদেশ পাঠাচ্ছিলেন। কানাডা, মালয়েশিয়া আর নিউইয়র্কে বাড়ি বানাচ্ছিলেন। তখন মনে ছিলো না। আপনাদের হিসেব দিয়েছেন আমাদের নেতারা, কত টাকা বিদেশে পাঠানো হয়েছে বর্তমান আমলে।
লোডশেডিং ও বিদ্যুত সংকট নিয়ে মীর্জা ফখরুল বলেন, বিদ্যুৎ নিয়ে খুব ঢাকঢোল পিটিয়ে ছিলেন, তাই না।  এমনভাবে ঢাক ঢোল পেটালো যে বিদ্যুতে স্বয়ং সম্পূর্ন হয়ে গেছি। ওই যে হাতির ঝিল আছে না, সেখানে আতশবাজি ফুটিয়েছিলেন। সেই বিদ্যুৎ এখন নাই।
বরিশালে যে হোটেলে অবস্থান করেছেন, সেই হোটেলে কমপক্ষে দশবার বিদ্যুৎ গিয়েছে জানিয়ে মীর্জা ফখরুল বলেন, এর আগে ৯৬ সালে ঘটনাটা ঘটেছিলো। বিদ্যুৎ গেলে সবাই বলতো, এই হাসিনা গেলো, বিদ্যুৎ এলে বলতো হাসিনা এসেছে। আজকে আমাদেরও সেই একই অবস্থা হয়েছে। এই হাসিনা গেল, হাসিনা এলো।
এরা এই বিদ্যুৎ চুরি করেছে। হাজার হাজার কোটি টাকা চুরি করেছে। কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্লান্ট করে, যে সব ক্যাপাসিটির দরকার নাই, সেইসব চার্জ দিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে। একটা জায়গা নেই, একটা ক্ষেত্র নেই যেখানে তারা চুরি করে নাই। প্রত্যেক জায়গায় চুরি আর ঘুষ ছাড়া কিছু নেই।
চালের দাম বাড়ার বিষয়ে মীর্জা ফখরুল বলেন, মনে পড়ে নির্বাচনের সময় মাথায় হেজাব দিয়ে বলেছিলো ১০ টাকায় চাল খাওয়াবো, তাই না। কত টাকা খাওয়াচ্ছে এখন। ঘরে ঘরে চাকুরি দেবে বলেছিলো। একটা ছেলেকেও চাকুরি দিয়েছে। দিয়েছে দিয়েছে দিয়েছে আওয়ামী লীগের ছেলেদের চাকুরি দিয়েছে। ২০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে চাকুরি দিয়েছে। বিনা পয়সায় সার দেবে বলেছিলো। কিন্তু সেই আমাদের সময়ের চেয়ে এখন তিন গুন বেশি।
আজকে এ আওয়ামী লীগ বর্গীদের মতো। আপানাদের মনে আছে নিশ্চয়, ছোট বেলা মা আমাদের ঘুম পাড়াতো বর্গীদের গান শুনিয়ে, তাই না। বর্গীরা ছিলো এমন ভয়ানক দস্যু, তারা সব কিছু লুট করে নিয়ে  যেতো।  ক্ষেতের ধান লুট করতো। সব লুট করতো। তাদের ভয় পেতো। আজকে এ আওয়ামী লীগ বর্গীর রুপ নিয়েছে।
একটু আগে বলতে শুনেছি, ভোট চোর, ভোট চোর। ভোট তো একবার চুরি করেনি। ওরা যখনই আসে, তখনই চুরি করে। সব সময়, আওয়ামী লীগের চরিত্রের মধ্যে দুইটা জিনিস আছে। তারা সন্ত্রাস করবে, চুরি করবে এটা হয় না। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে ভোট চুরি করছে। এখন আবার নতুন করে ভোট চুরি করে ক্ষমতায় যাওয়ার চিন্তা করছে। নতুন সব বুদ্ধি এঁটে নতুন কমিশন দিয়ে এমন সব ধারণা দেয়া হচ্ছে এটা বোধ হয় নিরপেক্ষ হবে। ইভিএম কৌশল দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। কিন্ত আমাদের কথা পরিষ্কার, পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিচ্ছি এই হাসিনা সরকারের অধীনে আর কোন নির্বাচন হবে না। আপনাকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ ভেঙ্গে দিতে হবে। নিরপেক্ষ বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দিতে হবে।  সেই সরকার নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবে। সেই নির্বাচন কমিশন নির্বাচন করবে, জনগন তার সরকার নির্বাচন করবে।
তারা ক্ষমতায় থাকাকালীন বরিশালে অনেক উন্নয়ন করেছেন জানিয়ে মীর্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়া বিভাগ দিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয় দিয়েছেন,  এ সরকার নতুন কি দিয়েছে “দুর্ভিক্ষ”।
এখন উন্নয়ন ছাড়া কিছুই দেখা যায় না! এমন উন্নয়ন যে দেশের ৪২ ভাগ লোক দারিদ্রসীমার নিচে বাস করে। খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ন দেশের ৩০ ভাগের খাদ্য সংকট রয়েছে।
এ থেকে আমরা মুক্তি চাই, পরিত্রাণ চাই। তাই আমরা চাই টেকসই বাংলাদেশ। আমাদের এই আন্দোলন বিএনপির জন্য নয়; খালেদা জিয়ার জন্য নয়; তারেক রহমানের জন্য নয় কিংবা আমাদের নেতাদের জন্য নয়। এ আন্দোলন জাতি ও দেশের প্রয়োজনে সমগ্র জাতিকে রক্ষা করার জন্য। বরিশাল মহানগর বিএনপির আহবায়ক মনিরুজ্জামান খান ফারুকের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান বক্তা হিসাবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ড. মঈন খান, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান এ্যাড. জয়নাল আবেদীন, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, আবদুল আউয়াল মিন্টু, আলতাফ হাসেন চৌধুরী, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম, শাহজাহান ওমর বীরোত্তম, যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিবুন নবী খান সোহেল।
আরো বক্তব্য রাখেন, বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাড. বিলকিস জাহান শিরীন, জহির উদ্দিন স্বপন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান ও মাহবুবুল হক নান্নু, কলাপাড়ার এবিএম মোশারেফ হোসেন প্রমুখ। সভা সঞ্চালনা করেন মহানগর সদস্য সচিব এ্যাড. মীর জাহিদুল কবির জাহিদ ও ও দক্ষিন জেলা সদস্য সচিব এ্যাড. আক্তার হোসেন মেবুল। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মহানগরের যুগ্ম আহ্বায়ক আলতাফ মাহমুদ সিকদার, জিয়াউদ্দিন সিকদার, হাবিবুর রহমান টিপু, আলহাজ্ব কেএম শহিদুল্লাহ প্রমূখ।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT