সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন দক্ষিনাঞ্চল, তবুও গণসমাবেশ সফলের আশা বিএনপির সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন দক্ষিনাঞ্চল, তবুও গণসমাবেশ সফলের আশা বিএনপির - ajkerparibartan.com
সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন দক্ষিনাঞ্চল, তবুও গণসমাবেশ সফলের আশা বিএনপির

3:12 pm , November 4, 2022

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ বরিশালে বিএনপির আজকের (শনিবার) গণ সমাবেশকে সামনে রেখে শুক্রবার সকাল থেকে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলই সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ১০ দিন আগে ৪ ও ৫ নভেম্বর বরিশালে পরিবহন ধর্মঘট আহবান করা হলেও বৃহস্পতিবার রাত থেকে একে একে পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুরেও সড়ক পরিরবহন ধর্মঘটের ডাক দেয় পরিবহন মালিকÑশ্রমিকরা।  শুক্রবার সকাল থেকে ঝালকাঠীতেও একইভাবে ধর্মঘট কার্যকর হয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চল অনেকটাই অবরুদ্ধ হয়ে আছে। বাস টার্মিনালগুলোতে শুনশান নীরবতা। অনেক এলাকার মুমূর্ষু রোগী পর্যন্ত হাসপাতালে যেতে পারছে না। সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে সরকারী স্বাস্থ্য পরিসেবার প্রায় পুরোটাই বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওপর নির্ভরশীল। শুক্রবার দুপুরে ও বিকেলে দুটি উড়ান পূর্ণ লোড নিয়ে বরিশাল বিমান বন্দরে অবতরণ করার পরে যাত্রীরা চরম বিড়ম্বনার শিকার হন যানবাহনের অভাবে। বিমান বন্দর থেকে রিক্সা, ভ্যানেও অনেক নারী ও শিশু যাত্রী ১৫ কিলোমিটার দূরে শহরে পৌঁছেন।
সড়কের পাশাপাশি এ অঞ্চলের নৌ যোগাযোগও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তবে এসব কিছুর পরেও শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বরিশালের বঙ্গবন্ধু উদ্যানে হাজার হাজার নেতাকর্মী সমবেত হয়েছেন।
সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন বরিশাল শুক্রবার সকাল থেকে অনেকটা করোনাকালের লক ডাউনের রূপ নিয়েছে। পরিবহন মালিকদের আগাম ঘোষিত সড়ক পরিবহন ধর্মঘটের সাথে অঘোষিতভাবে নৌ যোগাযোগও বন্ধ করে দেয়ায় সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলই যোগাযোগ শূণ্য। বরিশাল মহানগরী সারাদেশ  থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন। সড়ক ও নৌ পরিবহন ধর্মঘটের পাশাপাশি সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় মহানগরীতে এখন শুনশান নীরবতা। নৌ পরিবহন ধর্মঘটের আনুষ্ঠানিক ঘোষনা না থাকলেও বুধবার রাত থেকে ভোলা ও বরিশালের মধ্যে স্পীডবোট সহ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে যাত্রীবাহী নৌযান চলাচলও বন্ধ করে দেয়া হয়। আর শুক্রবার সকালে বরিশালের ১২টি সহ দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ২৫টি রুটেই নৌযান চলাচল অঘোষিতভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ভোলাতে বরিশালগামী  একটি লঞ্চে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করা হয়েছে।
তবে বৃহস্পতিবার দুপুর থেকেই বরিশাল মহানগরীতে বিপুল সংখ্যক বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থক আসতে শুরু করে। শুক্রবারও দিনরাত শত শত  ট্রলারে  সমগ্র দক্ষিণাঞ্চল থেকে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী এ নগরীতে পৌঁছেছেন। বঙ্গবন্ধু উদ্যানে বৃহস্পতিবার দিনভর প্রায় ৩ হাজার নেতাকর্মীর অবস্থান লক্ষ্য করা গেলেও রাত বাড়ার সাথে সে সংখ্যা বেড়ে ১০ হাজারে উন্নীত হয়। দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে আগত এসব নেতাকর্মী ও সমর্থকরা বেলসপার্কের খোলা আকাশের নিচে রাতযাপন করেন। এদের অনেকেই চুলা ও তৈজসপত্র নিয়ে সভাস্থলে অবস্থান করে রান্না করে খাবার তৈরী করে খাচ্ছেন।
এদিকে শুক্রবার সকাল থেকে সারাদেশের সাথে  বিচ্ছিন্ন বরিশাল মহানগরীতে ইজিবাইক ও গ্যাস চালিত থ্রী-হুইলার সহ সব ধরনের যানবাহনও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এমনকি নগরী জুড়ে হাতে গোনা কিছু রিক্সা চললেও চালকদের মধ্যে যথেষ্ট ভয় ভীতি কাজ করছে। ফলে নিত্য যানজটের এ নগরীতে শুক্রবার সকাল থেকে বেশীরভাগ রাস্তাঘাটই ছিলো প্রায় ফাঁকা। নিত্যকার  যানজটে নাকাল হবার কোন বিড়ম্বনা নেই। থেমে গেছে ট্রাফিক পুলিশের বাঁশিও।
এদিকে বিএনপি’র মিডিয়া সেলের প্রধান সাবেক এমপি জহিরউদ্দিন স্বপন জানিয়েছেন, কোন বাঁধা বিঘœ বরিশালের গণসমাবেশকে রুদ্ধ করতে পারবে না। এ গণ সমাবেশ মহাসমাবেশর রূপ নেবে বলেও দাবী করেন তিনি। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বৃহস্পতিবার বরিশালে এসে গণ সমাবেশ সফল করতে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সাথে সমন্বয় করে জনসংযোগ সহ নানা তৎপরতায় অংশ নিচ্ছেন। কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ডাঃ এবিএম জাহিদ হোসেন পুরো গণসমাবেশ বাস্তবায়নে সমন্বয়কের দায়িত্বে রয়েছেন।
এদিকে ১০ নভেম্বর বরিশালে যুবলীগের কর্মসূচীকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার রাতে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডের অলিগলিতে মিছিল করেছে। তবে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাও নগরীর বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষিপ্তভাবে মিছিল নিয়ে শনিবারের গণ সমাবেশের পক্ষে প্রচারনা চালায়। শুক্রবারও দিনভর বিএনপি’র স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বরিশাল মহানগরীতে লিফলেট বিতরণসহ নানামুখি প্রচারনায় ছিলেন।
নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে শনিবার বরিশালে বিভাগীয় গনসমাবেশ চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা ও রংপুরের মত কতটা সফল হয় তা দেখার অপেক্ষায় আছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল। কারণ বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনো অনেকটাই নৌপথ নির্ভর। সড়ক ও নৌযোগাযোগ বন্ধ করে দেয়ায় দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকরা কোন পথে কিভাবে সমাবেশস্থলে পৌঁছবেন তার ওপরই নির্ভর করছে এ গণ সমাবেশে লোক সমাগমসহ পরিপূর্ণ সফলতা।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT