3:19 pm , October 29, 2022
নগরীর প্রতিদিনের ৩শ টন বর্জ্য ফেলার স্থান খালি নেই
বিশেষ প্রতিবেদক ॥ মহানগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ক্রমশ চরম সংকটের সম্মুখীন হচ্ছে। দীর্ঘদিনেও এ নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আধুনিক ও মানসম্মত দূরের কথা, লাগসইÑটেকসই ব্যবস্থায় নেয়ার লক্ষ্যে কোন কর্ম পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয়নি। এখনো দীর্ঘদিনের পুরনো ‘ময়লা খোলা’ এলাকায় প্রতিদিন ৩ শতাধিক টন বর্জ্য অপসারণ করা হলেও তা ‘মোটেই স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বান্ধব নয়’ বলে পরিবেশ অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল সূত্রে বলা হয়েছে। এমনকি গোটা নগরীর বর্জ্য সংগ্রহ থেকে শুরু করে পুরো ব্যবস্থাপনাই অস্বাস্থ্যকর ও পরিবেশ অনুকূল নয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। তবে নগর ভবন থেকে ‘আধুনিক ও মানসম্মত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য নতুন প্রকল্প গ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে’ বলে জানা গেছে। তবে পুরো বিষয়টি সরকারী অর্থ বরাদ্দের উপর নির্ভরশীল।
প্রায় ৬০ বর্গ কিলোমিটার নগরীর কম বেশী ৪৫ হাজার আবাসিক, অনাবাসিক ও বানিজ্যিক হোল্ডিং থেকে প্রতিদিন গড়ে ৩শ টনেরও বেশী বর্জ্য এ নগরীর রাস্তাঘাটে জমা হচ্ছে। তবে এ নগরীতে এখন আর কোন ডাষ্টবিনের অস্তিত্ব নেই। এমনকি গোটা নগরীতে সেকেন্ডারী ডাষ্টবিন আছে মাত্র দুটি। ফলে বিভিন্ন বাসাবাড়ীর লোকজন নগরীর রাস্তার ধারে উম্মুক্তস্থানে ময়লা আবর্জনা ফেলে রাখছে। নগর ভবনের পরিচ্ছন্ন কর্মীরা দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নগরীর কিছু বাড়ীঘর থেকে ময়লা আবর্জনা সংগ্রহ করে রাস্তাঘাটের নির্দিষ্টস্থানে ফেলে রাখার পরে সেখান থেকে সিটি করপোরেশনের গার্বেজ ট্রাকগুলো এসব বর্জ্য সংগ্রহ করে কাউনিয়া এলাকার ময়লাখোলা বা গার্বেজ স্টেশনে নিয়ে তা অপসারণ করছে।
কিন্তু একদিকে গার্বেজ স্টেশন যেমন স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্মত নয়, অপরদিকে বছরের পর বছর ধরে সেখানে এ নগরীর জঞ্জাল জমা করতে গিয়ে এখন আর তা সম্ভবও হচ্ছে না। ফলে খুব দ্রুত নতুন গার্বেজ স্টেশন চালু না করলে এ নগরীতে বর্র্জ্য অপসারণের কোন জায়গা খুঁজে পাওয়া যাবে না। এমনকি এ নগরীতে ভয়াবহ পরিবেশ ও স্বাস্থ্য বিপর্যয় ঘটার আশংকাও করছেন পরিবেশবীদ সহ পরিবেশ অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল মহল।
এসব বিষয়ে বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা ডা. রবিউল ইসলাম এর সাথে আলাপ করা হলে তিনি নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে বিভিন্ন মহলের উদ্বেগের বিষয়ে কোন মন্তব্য না করে জানান, জঞ্জাল নিয়ে নগর ভবনও যথেষ্ট সচেতন। পুরনো গার্বেজ ইয়ার্ডটির সর্বোচ্চ ব্যবহারের পাশাপাশি তা যতটা সম্ভব স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্মতভাবে ব্যবহারের চেষ্টা করছে। পাশাপাশি নগরীর চরবাড়িয়া এলাকায় বর্জ্য অপসারণে নতুন ডাম্পিং স্টেশন স্থাপনের পদক্ষেপ গ্রহণের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এ লক্ষ্যে ৭ একর জমি হুকুম দখল সহ ভূমি উন্নয়ন ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণে ২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রনালয়ে একটি ‘প্রকল্প-প্রস্তাবনা’ প্রেরণ করা হয়েছে। মন্ত্রনালয় থেকে টাকা পেলে পরবর্তীতে এখানে অত্যাধুনিক একটি বর্জ্য অপসারণ কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার কথাও জানান তিনি।
তবে নতুন এ গার্বেজ স্টেশন স্থাপনে কত সময় লাগতে পারে সে সম্পর্কে তিনি কিছু বলতে না পারলেও তহবিলের সংস্থানের উপরই অনেক কিছু নির্ভর করছে বলে জানান তিনি।
এদিকে নগর ভবনের পরিচ্ছন্ন বিভাগ সহ নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে প্রায় সাড়ে ৯শ পরিচ্ছন্ন কর্মীর কাজ সহ তার তত্ত্বাবধান নিয়েও নগরবাসীর মনে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। অতি সম্প্রতি ঘূর্নিঝড় সিত্রাং-এর প্রভাবে ৩৬ ঘন্টায় এ নগরীতে ৩৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের পরে গোটা মহানগরী ৩ ফুট থেকে ৫ ফুট পর্যন্ত পানির তলায় চলে যায়। নগরীর পাশে প্রবাহমান কীর্তনখোলা নদীর পানি বিপদ সীমার নিচে নেমে যাবার ৪৮ ঘন্টা পরেও জলাবদ্ধতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি এ নগরী । নগরীর ১৬১ কিলোমিটার পাকা ড্রেনের বেশীরভাগেরই তিন-চতুর্থাংশ পর্যন্ত ভরাট হয়ে গেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এমনকি এসব ভরাট ড্রেনগুলো বছরের পর বছর ধরে একই অবস্থায় থাকলেও পরিস্থিতির তেমন কোন পরিবর্তন হচ্ছে না। নগরীর নবগ্রাম রোডের বটতলা বাজারের পশ্চিম থেকে হাতেম আলী কলেজ পর্যন্ত সড়কটি ঘন্টায় ৫ মিলি বৃষ্টিতেই প্লাবিত হচ্ছে। এমনকি সারা বছরই ঐ সড়কের পাশের ড্রেনটির পানি মূল সড়কে ছুঁয়ে থাকলেও তা থেকে উত্তরণের কোন পদক্ষেপ নেই। আরো খারাপ অবস্থা নগরীর কাঁচা ড্রেনগুলোর।