দুই প্রতিবন্ধী মেয়ের জমকালো বিয়ে দুই প্রতিবন্ধী মেয়ের জমকালো বিয়ে - ajkerparibartan.com
দুই প্রতিবন্ধী মেয়ের জমকালো বিয়ে

2:52 pm , October 29, 2022

রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনীম এর উপস্থিতিতে

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষন ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে জমকালো আয়োজনে দুই সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েকে বিয়ে দেয়া হয়েছে। শনিবার দিনভর দুই কন্যার বিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বরিশাল সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষন ও পুনর্বাসন কেন্দ্র। রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনীম, বিভাগীয় কমিশনার আমিন উল আহসান, জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার, সমাজসেবা অধিদপ্তরসহ নগরীর বিত্তবানদের সহযোগিতায় দুই কন্যাকে পাত্রস্থ করা হয়। দুই কন্যা হলো : তানজিলা ও অপরজন হলেন বাক প্রতিবন্ধী সৃষ্টি আক্তার। তানজিলা শরিয়তপুরের গোসাইর হাট উপজেলার হানিফ ঘরামীর কন্যা। সৃষ্টি আক্তার নগরীর পলাশপুর এলাকার হানিফ মৃধার কন্যা।
কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সাজ্জাদ পারভেজ জানান, বিয়ে মানেই আনন্দ। সামাজিক প্রতিবন্ধী কেন্দ্রের সন্তানতুল্য নিবাসী সৃষ্টি ও তানজিলার বিয়েতে পূর্নতা রাখার লক্ষ্যে পানচিনি, গায়ে হলুদ ও বৌভাতের আয়োজন করা হয়েছিলো। অনুষ্ঠানে রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনীম, বিভাগীয় কমিশনার আমিন উল আহসান, জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার, বরিশাল সদর উপজেলা চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টুস, সমাজসেবক মাহমুদুল হক খান মামুনসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। তিনি জানান, সৃষ্টি বাকপ্রতিবন্ধী। কিন্তু তার স্বামী স্বাভাবিক। তানজিলা কথা বলতে পারলেও তার স্বামী বাকপ্রতিবন্ধী। দুই জনই অটোচালক।
তানজিলার স্বামী মো. রেজাউল সরদার বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার নগরবাড়ী এলাকার মো. মহিউদ্দিন সরদারের ছেলে। এসএসসি পাশ করা রেজাউল পেশায় একজন অটোচালক।
সৃষ্টির স্বামী ওবায়দুল মৃধা বরিশালের উজিরপুর উপজেলার দক্ষিন মোড়াকাঠি এলাকার আব্দুল খালেক মৃধার ছেলে। ওবায়দুল এসএসসি পাশ করেছে। সেও পেশায় অটোচালক।
তানজিলাকে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর থানার পুলিশ উদ্ধার করে দুই বছর পূর্বে বরিশাল সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষন ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠিয়েছিলো। সৃষ্টিকে তিন বছর পূর্বে এ কেন্দ্রে দিয়েছে কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশ।
কেন্দ্রের কর্মচারীরা পাত্র পছন্দ করে। পরে পাত্রের পরিবারের সম্মতিতে বিয়ে হয়েছে। তিন লাখ টাকা কাবিননামায় উভয়ের বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে।
সাজ্জাদ পারভেজ জানান, কেন্দ্র থেকে দুই জন সেলাই ও ব্লক বাটিকের প্রশিক্ষন নিয়েছে। তাই কেন্দ্র থেকে উভয়কে একটি সেলাই মেশিন দেয়া হয়েছে।
দুই পাত্রকে একটি করে অটোরিকশা উপহার দিয়েছেন রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান। এছাড়াও জেলা প্রশাসক ও নগরীর বিত্তবানদের সহযোগিতায় লক্ষাধিক টাকার বিভিন্ন উপহার সামগ্রী দেয়া হয়েছে। দুই কন্যার অভিভাবক ছিলেন জেলা প্রশাসক জসীমউদ্দীন হায়দার।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নগরীর রুপাতলী এলাকায় অবস্থিত কেন্দ্রটি বিয়ে বাড়ীর সাজে সাজানো হয়েছে। একটি প্যান্ডেলে বধূ বেশে রয়েছে দুই তরুনী ও তাদের বর। তাদের ঘিরে কেন্দ্রের আশ্রিতসহ সকলের মাঝে ছিলো উৎসবের আমেজ।
বরিশাল জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার বলেন, কেন্দ্রের সবাই জেলা প্রশাসকের মেয়ে হিসেবে স্বীকৃত। দুই জনকে নিজের মেয়ের মতোই বিয়ে দেয়া হয়েছে। সমাজ থেকে বিচ্যুত দুই জনকে হাতে কলমে শিক্ষা দিয়ে স্বয়ং সম্পূর্ন করা হয়েছে। বিয়ে মানেই তো নতুন জীবন। সেই জীবনে প্রবেশের মাধ্যমে সমাজের মূল ধারায় ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক বলেন, এখানে আরো যারা রয়েছে তাদেরও পর্যায়ক্রমে যোগ্য পাত্রের কাছে তুলে দেয়া হবে। এজন্য সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
এই অনুষ্ঠানে সদর উপজেলার চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সাইদুর রহমান রিন্টু, মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও বিশিষ্ট সমাজ সেবক আলহাজ্ব মাহমুদুল হক খান মামুন, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক আলমগীর হোসেন খান আলোসহ বেশ কয়েকজন স্ব-হৃদয় ব্যক্তি আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছেন।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আল-মামুন তালুকদার জানান, কেন্দ্রে মোট ৩৫ জন কন্যা ছিলো। এর মধ্যে ৪ জনকে বিয়ে দেয়া হয়েছে। বর্তমানে ৩১ জন রয়েছে। তাদেরও বিয়ে দেয়ার জন্য যোগ্য পাত্র সন্ধান করা হচ্ছে।
দুই জনের বিয়েতে যারা সাহায্য সহযোগিতা করেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন তিনি।
তানজিলার মা জয়নব বিবি বলেন, এখানে যে অনুষ্ঠান করে বিয়ে দিয়েছে, এমন অনুষ্ঠান করে আমরা মেয়েকে বিয়ে দিতে পারতাম না। আমি খুশি। এখানের সকলের কাছে কৃতজ্ঞ আমি।
রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা রহমাতুল মুনিম বলেন, এই কেন্দ্রের বাইরে সামাজিক প্রতিবন্ধী নামটা লেখা রয়েছে, আসলেই তারা সামাজিক প্রতিবন্ধী। সমাজ তাদের প্রতিবন্ধী করে রেখেছে, সমাজ তাদের গ্রহণ করতে চায় না। এ জায়গাতে আমি এড্রেস করতে চাই, সমাজ যেন তাদের গ্রহণ করে নেয়। আমি যখন বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার ছিলাম, তখন এই মেয়েদের জন্য কিছু করতে চেয়েছি কিন্তু বেশি কিছু করতে পারিনি। এরপর এখান থেকে চলে গেলেও তাদের কথা আমার মনে ছিলো। আজ এখানকার দুটি মেয়ের বিয়ে হয়েছে। আমি আশা করি সমাজে যারা প্রতিষ্ঠিত রয়েছেন, তারা এভাবে এখানকার মেয়েদের বিয়েতে আমার মতো সবাই এগিয়ে আসবেন। এখানে শেষ নয়, এভাবে সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েরা আসবে আর আমাদের সমাজের লোকদেরই তাদের রেসকিউ করতে হবে। এদিকে কথা না বলতে পারলেও হাত দিয়ে বিয়েতে খুশি হওয়ার কথা বুঝিয়েছেন সৃষ্টি আক্তার। আর তানজিলা বলেন, আমাদের দু বোনের জন্য দোয়া করবেন। আমি কথা বলতে পারছি কিন্তু আমার বোন কথা বলতে পারছে না, আবার আমার সঙ্গে যিনি সংসার করতে যাচ্ছেন তিনি কথা বলতে পারেন না, কিন্তু বাকপ্রতিবন্ধী আমার বোনের স্বামী কথা বলতে পারেন। আমরা দু-বোনই নিজ ইচ্ছায় এ বিয়েতে ?খুশি মনে রাজি হয়েছি। কারণ সবকিছুই তো আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন, কথা বলতে না পারাটা দোষের কিছু নয়। মনের মিল থাকলে সবকিছু ঠিক থাকবে। আমাদের জন্য দোয়া করবেন।
এদিকে দুই বরের বাবা-মা, স্বজনরা বিয়েতে এসেছেন, তারাও এ বিয়েতে বেশ খুশি হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। বিয়ের পর তানজিলাকে নিয়ে আগৈলঝাড়ায় গ্রামের বাড়িতে থাকবেন বাকপ্রতিবন্ধী রেজাউল সরদার, আর সৃষ্টিকে নিয়ে বরিশাল নগরেই থাকবেন অটোরিকশা চালক ওবায়দুল মৃধা।
তিনি বলেন, কোনো কিছু পাওয়ার আসায় বিয়ে করিনি। সৃষ্টিকে ভালো লেগেছে, তাই প্রস্তাবের মাধ্যমেই তাকে বিয়ে করছি। সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন।
এদিকে ওবায়দুলের মা বেবী নাজনীন বলেন, সন্তানের উজ্জল ভবিষ্যৎ কামনা করছি। যেন বিয়ের পর স্ত্রীকে নিয়ে সুখে সংসার করতে পারেন। ছেলের পছন্দই আমাদের পছন্দ। আমরা এ বিয়েতে খুশি।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT