উঠে গেলো ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলো ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা - ajkerparibartan.com
উঠে গেলো ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা

3:35 pm , October 28, 2022

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ নির্বিঘœ প্রজনন নিশ্চিত করতে ২২ দিনের ইলিশ আহরণ,পরিবহন ও বিপণনে নিষেধাজ্ঞা উঠে গেছে শুক্রবার মধ্য রাতে। আশি^নের ভরা পূর্ণিমার আগে পরে সাগর থেকে ঝাকে ঝাকে ইলিশ উপকূলে ছুটে এসে ডিম ছেড়ে আবার সাগরে ফিরে যায়। মৎস্য বিজ্ঞানীরা ভোলার পশ্চিম আউলিয়া পয়েন্টÑতজুমদ্দিন, মনপুরা দ্বীপ,  পটুয়াখালীর কলাপাড়ার লতাচাপলি পয়েন্ট এর ধলচর দ্বীপ, মৌলভীরচর দ্বীপ, কালিরচর দ্বীপ এবং মায়ানী পয়েন্টÑমীরসরাই ছাড়াও কুতুবদিয়া পয়েন্ট এলাকায় মা ইলিশের অত্যাধীক প্রাচুর্য লক্ষ্য করে ওই ৭ হাজার বর্গ কিলোমিটারকে ‘ইলিশের প্রধান প্রজননস্থল’ হিসেবে চিহিৃত করেছেন। এ বিবেচনায় গত ৬ অক্টোবর রাতের প্রথম প্রহর থেকে ২৮ অক্টোবর মধ্যরাত পর্যন্ত ২২ দিন মূল প্রজনন এলকায় সব ধরনের মৎস্য আহরণ সহ সারাদেশেই ইলিশ আহরণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিলো।
২২ দিনের এ নিষেধাজ্ঞার সময় দক্ষিণাঞ্চলের জেলে পল্লীগুলোতে নিস্তব্দতা নেমে এলেও গত কয়েক দিন ধরে বেকার জেলেদের মধ্য আবার প্রাণস্পন্দন লক্ষ্য করা গেছে। আড়ৎসহ মাছের মোকামগুলো আবার জেগে উঠেছে। এবারো ইলিশ আহরণে নির্ভরশীল জেলেদের খাদ্য নিরাপত্তায়সরকার ১৩ হাজার ৮৭২ টন চাল বিনামূল্যে বিতরণ করেছে। দেশের ৩৭টি জেলার ১৫৫টি উপজেলার ৫ লাখ ৫৪ হাজার ৮৮৭ জেলে পরিবারের মধ্যে ২৫ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে। এরমধ্যে বরিশাল বিভাগের ৬ জেলার ৪২ উপজেলার ৩ লাখ ৬ হাজার ১২০ জেলে পরিবারের মাধ্যে ৯ হাজার ১৮২ টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। দেশে উৎপাদিত ইলিশের ৬৮Ñ৭০ ভাগই দক্ষিণাঞ্চলের অভ্যন্তরীণ নদ-নদী ও উপকূলীয় এলাকায় আহরিত হচ্ছে।
এবারের আহরণ নিষিদ্ধকালীন সময়ে নৌ বাহিনী, কোষ্টগার্ড, র‌্যাব এবং পুলিশ জেলা-উপজেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে টাস্ক ফোর্স দক্ষিণাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অত্যান্ত কঠোর নজরদারী করেছে। তবে জেলেদের মধ্যে এবার আইন ভঙ্গের প্রবনতা বেশী লক্ষ্য করা গেছে। মৎস্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের মতে, গত ২২ দিনে দক্ষিণাঞ্চল সহ উপকূলীয় এলাকায় ইলিশ আহরণ বিরোধী প্রায় সাড়ে ১০ হাজার অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় প্রায় দুই হাজার মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ৪৫ লাখ টাকা জরিমানা আদায় ছাড়াও আটককৃত ৩০ টন ইলিশ বাজেয়াপ্ত করে বিভিন্ন এতিমখানা ও লিল্লাহ বোর্ডিং-এ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি প্রায় ২ হাজার ১শ জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ডাদেশ প্রদান করেছে ভ্রাম্যমান আদালত।  এসব অভিযানে প্রায় ৯ কোটি ৫ লাখ ঘন মিটার অবৈধ জাল আটক করে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় পৌনে ৩ কোটি টাকা। ইলিশ আহরণ বিরোধী অভিযানকালে ভ্রাম্যমান আদালত জাল ও নৌকাসহ মৎস্য আহরণ সরঞ্জামসমূহ বাজেয়াপ্ত করে নিলামে বিক্রীর মাধ্যমে সরকারী কোষাগারে প্রায় ১৫ লাখ টাকা জমা করেছে বলে জানিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর।
এদিকে মা ইলিশ রক্ষায় এসব কার্যক্রমের মধ্যে দক্ষিণাঞ্চলেই প্রায় ১০ হাজার টন ইলিশ আটক ও বাজেয়াপ্ত করা হয়। এছাড়া ৫৫ লাখ ঘন মিটার অবৈধ জাল আটক করে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। এসময় অবৈধভাবে ইলিশ আহরণের দায়ে দক্ষিণাঞ্চলে ৭১৬ জন জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে জেল ছাড়াও প্রায় সাড়ে ১৩ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে বলে বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য দপ্তর জানিয়েছে।
মৎস্য অধিদপ্তরের মতে, ২০১৮ সালে ৭Ñ২৮ অক্টোবর আহরণ বন্ধকালে উপকূলের প্রজননস্থল সহ অভ্যন্তরীন মুক্ত জলাশয়ে ৪৮% মা ইলিশ ডিম ছাড়ার সুযোগ পায়। মৎস্য গবেষনা ইনস্টিটিউট-এর মতে প্রজননক্ষম মা ইলিশের হার ২০১৭ সালে ৭৩% থেকে ’১৮ সালে ৯৩%-এ উন্নীত হয়। পাশাপাশি এসময়ে প্রজনন সাফল্য ৮০%-উন্নীত হয়। ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধের ফলে ওই সময়ে দেশে ৭ লাখ ৬ হাজার কেজি উৎপাদিত ডিমের ৫০%-এর সাফল্যজনক পরিস্ফূটনসহ তার ১০% বেঁচে থাকলেও ইলিশ পরিবারে নতুন ৩ হাজার কোটি জাটকাযুক্ত হয়। ২০১৯ সালে মূল প্রজনকালীন সময়ে দেশের প্রধান ইলিশ প্রজনন ক্ষেত্র সমূহে পরীক্ষামূলক নমুনায়নে ৮৩% ইলিশের রেনুর পাশাপাশি ১৭% অন্যান্য মাছেরও রেনু পোনা পাওয়া যায়। ফলে ইলিশ আহরণ নিষদ্ধকালীন সময়ে উপকূলে অন্যান্য মাছেরও নিরাপদ প্রজনন সাফল্যজনক ভাবে স¤পন্ন হচ্ছে বলে মৎস্য বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হয়েছেন ।
‘হিলসা ফিশারিজ ম্যানেজমেন্ট অ্যাকশন প্লান’এর আওতায় ২০০৫ সালে প্রথম প্রধান প্রজনন মৌসুমে দেশে ১০দিন ইলিশ আহরণ বন্ধ রাখা হয়। পরবর্তীতে মৎস্য বিজ্ঞানীদের সুপারিশে ২০১১ সালে তা ১১ দিন এবং ২০১৫ সালে ১৫ দিনে ও ২০১৬ সাল থেকে ২২ দিনে উন্নীত করা হয়। এমনকি ইলিশের প্রজনন ক্ষেত্র এবং মাইগ্রেশন পথ নির্বিঘœ রাখাসহ সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের মজুত ও জীব বৈচিত্রকে সমৃদ্ধ করতে হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপ সংলগ্ন ৩ হাজার ১৮৮ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় দেশের প্রথম ‘সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা’ বা ‘মেরিন রিজার্ভ এরিয়া’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
প্রজনন মৌসুমে ২২দিন, জাটকা আহরণে ৮ মাস এবং সাগরে ৬৫ দিনের আহরণ  নিষেধাজ্ঞার ফলে দেশে গত দুই দশকে ইলিশের উৎপাদন ২ লাখ টন থেকে গত অর্থ বছরে প্রায় ৫.৬৫ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে বলে মৎস্য অধিদপ্তর জানিয়েছে। যা চলতি অর্থ বছরে আরো ১০ হাজার টন বৃদ্ধির ব্যাপারে আশাবাদী মৎস্য দপ্তর।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT