টেক্সটাইল শ্রমিকদের ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ টেক্সটাইল শ্রমিকদের ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ - ajkerparibartan.com
টেক্সটাইল শ্রমিকদের ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ

3:49 pm , October 27, 2022

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ নগরীর সোনারগাঁও টেক্সটাইল মিলের শ্রমিকদের পিটিয়ে আহত করার প্রতিবাদে এক ঘন্টা বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে বিক্ষুব্ধ সহকর্মীরা। বৃহস্পতিবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। তবে এ নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য পাওয়া গেছে।
শ্রমিক আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) বরিশাল জেলা সদস্য সচিব ডা. মনিষা চক্রবর্তীর দাবি, সোনারগাঁও টেক্সটাইল মিলের মালিক ও তাদের গুন্ডা শ্রমিক বাহিনীর হামলায় দুইজন নারী এবং তিন জন পুরুষ আহত হয়ে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তিনি বলেন, ঘটনায় জড়িতদের বিচার করা না হলে আন্দোলন করাসহ আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সোনারগাঁও টেক্সটাইল মিলের উপ মহাব্যবস্থাপক খায়রুল আলম বলেন, সকালে ১০/১২ জন শ্রমিক প্রবেশ করার জন্য গেটে আসে। এ সময় একজন শ্রমিকের পূর্বের অনুপস্থিতি নিয়ে সমস্যা তৈরী হয়। তাকে ঢুকতে নিষেধ করায় অন্যান্যরা ঢোকেনি। পরে তারা অটো চালক শ্রমিকদের খবর দেয়। তারা এসে গেট ভাঙ্গার চেষ্টা করাসহ ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। তার উপর (ডিজিএম) হামলা করা হয়েছে জানিয়ে বলেন, তার একটি আঙ্গুল ও মোবাইল সেট ভেঙ্গে গেছে। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের নিক্ষিপ্ত ইটপাটকেলে মিলের গ্লাস ভেঙ্গে গেছে বলে জানান ডিজিএম।
পরে শ্রমিক নেতৃবৃন্দদের নিয়ে সড়ক অবরোধ করা হয়। এক পর্যায়ে মনীষা চক্রবর্তী প্রশাসনের লোকজনকে সাথে নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। প্রশাসন পরিস্থিতি সামাল দিতে বিক্ষুব্ধদের দাবী মেনে নিতে বলেন। তাই তাৎক্ষনিক ৬ জনকে মিল থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। এতে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। দুপুর আড়াইটার পর থেকে মিলে উৎপাদন শুরু হয়েছে।
ডিজিএম আরো জানান, পরিস্থিতি শান্ত করতে ৬ জনকে তাৎক্ষনিক বের করে দেয়া হয়েছে। একজন চাইলে তো চাকুরিচ্যুত করা যায়। যাদের বের করে দেয়া হয়েছে তারা শ্রমিকলীগ করে। তাই ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করা হবে। কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শ্রমিক সিরাজ জানান, দুপুরে টেক্সটাইল মিলে যাওয়ার সময় পূর্বে অনুপস্থিত থাকায় একজনকে ভেতরে ঢুকতে বাঁধা দেয় গেটের নিরাপত্তা কর্মীরা। পরে অন্যান্য শ্রমিকরা এই ঘটনার প্রতিবাদ করলে, মিলের ভিতরে মালিকদের নিজস্ব লোকজন হামলা করে। পরে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেন। কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেয়ার পর অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়েছে।
হামলায় আহত শ্রমিক খুকু মনি সাংবাদিকদের জানান, মালিকদের শ্রমিক হাফিজ ও মনিরের নেতৃত্বে অন্তত দশজন তাদের উপরে লাঠি সোটা নিয়ে হামলা করে। এতে তিনিসহ ৬/৭ জন আহত হয়েছেন।
কোতোয়ালী থানার ওসি আজিমুল করিম জানান, শ্রমিকদের অনুপস্থিতি নিয়ে সমস্যা হয়। এর ফলে কিছু শ্রমিক বিক্ষোভ করে এবং ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করে। পরে শ্রমিকদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। এখন যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক আছে।
এদিকে, সোনারগাঁও টেক্সটাইল শ্রমিক-কর্মচারীদের উপর সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে ও হামলাকারীদের শাস্তির দাবিতে বিকেলে নগরীর অশ্বিনী কুমার হল চত্বরে সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে।
বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট বরিশাল জেলা শাখার সহ-সভাপতি দুলাল মল্লিক। বক্তব্য রাখেন বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য জনার্দ্দন দত্ত নান্টু, বাসদ বরিশাল জেলা শাখার সদস্য সচিব ডা. মনীষা চক্রবর্তী,  সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারন সম্পাদক ইমাম হোসেন খোকন, প্রস্তাবিত সোনারগাঁও টেক্সটাইল শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সহ-সভাপতি হারুন শরীফ, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন বরিশাল জেলা শাখার সভাপতি জাকির হোসেন, সোনারগাঁও টেক্সটাইল ইউনিয়নের মামলার আইনজীবী এ্যাড. আবু আল রায়হান, দর্জি শ্রমিক ইউনিয়ন বরিশাল মহানগর শাখার সভাপতি তুষার সেন, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট বরিশাল জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মানিক হাওলাদার প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, আজ সকালে ডফার সেকশনের দুইজন নিয়মিত শ্রমিক হাসান এবং মুরাদকে মালিক কর্তৃপক্ষ আকস্মিকভাবে ঢুকতে বাধা দেয়। তখন সব শ্রমিক একত্র হয়ে তাদের ঢুকতে দিতে বলে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মালিকপক্ষের শ্রমিক শাহীন শেখ, মনির মোল্লা, মোঃ জাকির হোসেন, মোঃ গনি, মনির (বিদ্যুৎ বিভাগ), হাফিজ, বজলুসহ ১০-১২ জন লাঠিসোটা সহকারে শ্রমিকদের উপর হামলা চালায়। হামলায় ৭ জন নারীসহ ১৫ জন শ্রমিক আহত হয়। যাদের মধ্যে ৭ জন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এর প্রতিবাদে শ্রমিকরা এক ঘন্টা সোনারগাঁও টেক্সটাইলের সামনে মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। পরে মালিক সন্ত্রাসীদের কারখানা থেকে বের করে বহিষ্কার করার আশ্বাস দেন এবং শ্রমিকদের উপর ছাটাই-নির্যাতন বন্ধ করার আশ্বাস দিলে প্রশাসনের মধ্যস্থতায় শ্রমিকরা সড়ক ছেড়ে দেন।
বক্তারা বলেন, সোনারগাঁও টেক্সটাইলের শ্রমিকরা সাম্প্রতিক সময়ে বেতনস্কেল ও ৮ ঘন্টা কর্মঘণ্টার দাবিদাওয়া পেশ করার জন্য ইউনিয়ন গঠন করার আবেদন করেছে। এরপর থেকে মালিক শ্রমিকদের উপর হয়রানি-নির্যাতন করে আসছে। বক্তারা অধিকারের দাবিতে সংগঠিত হওয়ায় শ্রমিকদের উপর মালিকের এই হামলার তীব্র নিন্দা জানান ও অবিলম্বে হামলাকারী সন্ত্রাসীদের কারখানা থেকে স্থায়ী বহিষ্কার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। একইসাথে বক্তারা শ্রমিকদের উপর হয়রানি-নির্যাতন বন্ধ করে শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া মেনে নেয়ার দাবি জানান। শ্রমিকদের দাবি মানা না হলে বক্তারা সর্বস্তরের মানুষকে নিয়ে সোনারগাঁও টেক্সটাইলের শ্রমিকদের পক্ষে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলার হুঁশিয়ারি দেন।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT