ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর প্রভাবে কৃষি, মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ খাতে ব্যাপক ক্ষতি ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর প্রভাবে কৃষি, মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ খাতে ব্যাপক ক্ষতি - ajkerparibartan.com
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর প্রভাবে কৃষি, মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ খাতে ব্যাপক ক্ষতি

3:41 pm , October 26, 2022

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং দুর্বল হয়ে দক্ষিন উপকূল অতিক্রম করলেও তার ক্ষতচিহৃ ক্রমশ স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। সোম ও মঙ্গলবারের এ ঝড়ের প্রভাবে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আরো একটি ঝড় প্রতিহত করতে ক্ষত বিক্ষত হয়েছে উপকূলীয় বনভূমি। দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলার মাঠে থাকা প্রায় ৭ লাখ ১০ হাজার হেক্টর জমির ফসলের মধ্যে প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর ঝড়ের ক্ষতির কবলে পড়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। এরমধ্যে প্লাবনের শিকার শুধু আমন ধানের পরিমানই ১২ হাজার হেক্টর বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে  জানা গেছে। তবে বাস্তবে প্লাবিত জমির পরিমান লক্ষাধিক হেক্টরেরও বেশী বলে মাঠ পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে। আমন ছাড়াও মাঠে থাকা বিভিন্ন ধরণের সবজি, পান, কলা ও পেপে বাগানেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তবে ডিএই ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ তথ্য সংগ্রহের পাশাপাশি পানি সরে যাবার পরে ক্ষতির সঠিক পরিমান নিরুপন করবে বলে জানা গেছে। ফলে এই মুহুর্তে ঠিক কত টাকার ফসলহানী বা ক্ষতি হয়েছে তা জানায়নি ডিএই।
অপরদিকে সিত্রাং এ  ভর করে প্রবল বর্ষণসহ স্বাভাবিকের চেয়ে ২-৩ ফুট উচ্চতার জোয়ারে দক্ষিণাঞ্চলের মৎস্য সেক্টরেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মৎস্য অধিদপ্তরের প্রাথমিক প্রতিবেদনে টাকার অংকে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান প্রায় ২৭ কোটি টাকা বলে জানানো হয়েছে। সিত্রাং এর প্রবল বর্ষণ ও জোয়ারে দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় দেড় হাজার হেক্টরের ১২ হাজারেরও বেশী পুকুর, দিঘি ও মাছের ঘের প্লাবিত হয়ে প্রায় ১৮ টন মাছ, ৭১ লাখ পোনা ভেসে যাওয়া ছাড়াও ৫৫টি মাছধরা নৌকা ও ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া মৎস্য সেক্টরে প্রায় ২.২৭ কোটি টাকা মূল্যের অবকাঠামোর ক্ষতি হয়েছে। তবে এ অঞ্চলে কোন জেলের মৃত্যু বা নিখোঁজের খবর নেই।
বৃষ্টি আর জোয়ারের পানিতে মাছ আর পোনা ভেসে যাওয়ায় এ অঞ্চলের  অনেক মৎস্যজীবী সর্বশান্ত হয়ে গেছেন। মৎস্য সেক্টরে বরিশাল, ভোলা ও পটুয়াখালীতেই সর্বাধিক পরিমান ক্ষতি হয়েছে বলে মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে।
অপরদিকে প্রাণি সম্পদ সেক্টর থেকেও যথেষ্ট দুঃসংবাদ পাওয়া গেছে। সিত্রাং এর তান্ডবে দক্ষিণাঞ্চলের ৪২ উপজেলার ২০৯টি ইউনিয়নে গবাদিপশু এবং হাঁস-মুরগির খামারের যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছে। প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের মতে প্রায় ৩৪ হাজার গরু, ১০ হাজার মহিষ, ২৮ হাজার ছাগল ছাড়াও, ২ হাজার গরু, প্রায় আড়াই লাখ মুরগী এবং ৯০ হাজার হাঁস দুর্যোগের শিকার হয়েছে।
তবে বিপন্ন এসব প্রাণিকুলের  মধ্যে ঝালকাঠী জেলার কোন তথ্য নেই। ঝড়ের  বিপর্যয়ের কবলে পড়া এসব প্রাণির মধ্যে ইতোমধ্যে প্রায় ১৭ হাজার মুরগী ও আড়াই হাজার হাঁস ছাড়াও আড়াইশরও বেশী মহিষ, ৪২টি গরু, ১৩০টি ছাগল, ৮০টি ভেড়ার মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও প্রায় ১০ হাজার হেক্টর চারনভূমি প্লাবিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতির পরিমান ভোলাতেই সর্বাধিক।
সিত্রাং এ ভর করে আসা ঝড় জলোচ্ছ্বাসে দক্ষিণাঞ্চলে প্রাণিসম্পদ সেক্টরে ক্ষতির পরিমান প্রায় সোয়া ৩ কোটি টাকা বলা হলেও বাস্তবে তা অনেক বেশী বলে জানিয়েছেন হাঁস-মুরগী ও গবাদিপশুর খামারীরা। প্রণিসম্পদ অধিদপ্তরের মাঠ কর্মীরা ইতোমধ্যে দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে অসুস্থ প্রাণিকুলের চিকিৎসা কার্যক্রম ছাড়াও ব্যাপকভাবে টিকা প্রদান কার্যক্রম শুরুর কথা জানিয়েছেন বিভাগীয় পরিচালক ডাঃ মোঃ আবদুস সবুর।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং দুর্বল হয়ে ভোলা-হাতিয়া ও সন্দ্বীপ উপকূলে আঘাত হানলেও তাকে প্রথমেই প্রতিহত করতে গিয়ে উপকূলীয় বনাঞ্চলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বন বিভাগের উপকূলীয় বনাঞ্চল থেকে এখনো ক্ষয় ক্ষতির কোন তথ্য দিতে না পারলেও মাঠ পর্যায়ে ক্ষতি পর্যবেক্ষনে তাদের টিম কাজ করছে বলে বন সংরক্ষক মোঃ হারুন জানিয়েছেন।
দেশের ৭১০ কিলোমিটার উপকূলীয় এলাকায় ইতোমধ্যে প্রায় সোয়া ২ লাখ হেক্টর বনভূমি সৃজন করা হয়েছে। বঙ্গোপসাগর থেকে ধেয়ে আসা একের পর এক ঘূর্ণিঝড় প্রতিহত করতে গিয়ে সুন্দরবনসহ উপকূলীয় লবনাম্বুজ বনভূমি বার বারই ক্ষত বিক্ষত হয়েছে। তবে এসব বনভূমি সব প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিহত করতে ‘প্রাকৃতির ঢাল’ বা ‘রক্ষা কবজ’ হিসেবই কাজ করছে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT