পায়রা বন্দরের উন্নয়নে ১১ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন আজ পায়রা বন্দরের উন্নয়নে ১১ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন আজ - ajkerparibartan.com
পায়রা বন্দরের উন্নয়নে ১১ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন আজ

3:39 pm , October 26, 2022

উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণাঞ্চলসহ সারাদেশের আর্থ-সামাজিক খাতে বিপুল সম্ভাবনার পায়রা সমুদ্র বন্দরের উন্নয়নে ১১ হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর করবেন আজ। গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী সকালে ভার্চুয়ালী পায়রা বন্দর এলাকার অনুষ্ঠানে যুক্ত হবেন। এ উপলক্ষ্যে পায়রা বন্দরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এবং সচিব সহ মন্ত্রনালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার এবং পায়রা বন্দরের চেয়ারম্যান উপস্থিত থাকবেন। ২০১৩ সালের ১৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পটুয়াখালীর খেপুপাড়ার টিয়াখালী ইউনিয়নের ‘রাবনাবাদ চ্যানেল’এর চারিপাড়া এলাকায় পায়রা সমুদ্র বন্দরের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছিলেন। সেই সময় ১৬ একর জমি অধিগ্রহণ করে চট্টগ্রাম বন্দরের তত্ত্বাবধানে দেশের তৃতীয় এ সমুদ্র বন্দরের কার্যক্রম শুরু হয়। ওই বছরের ৫ আগষ্ট মন্ত্রী সভায় ‘পায়রা বন্দর কতৃপক্ষ অর্ডিন্যান্স-২০১৩’এর অনুমোদনের পরে একই বছরের ৫ নভেম্বর এ সংক্রান্ত বিল জাতীয় সংসদে পাস হয়। পরবর্তীতে এ বন্দর কর্তৃপক্ষ গঠিত হয়।
পায়রা সমুদ্র বন্দরের সঠিক পরিকল্পনা ও পরিপূর্ণ মাষ্টার প্লান প্রণয়নের লক্ষ্যে নেদারল্যান্ডের রয়েল হাসকনিং ডিএইচভি এবং বুয়েটের গবেষনা, পরীক্ষা ও পরামর্শক ব্যুরো-বিআরটিসি’কে ২০১৯ সালে পরার্মশক নিয়োগ করা হয়েছে। সেই আলোকে ইতোমধ্যে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটি বন্দরের পরিপূর্ণ নকশা প্রণয়নসহ সার্বিক কর্ম পরিকল্পনা প্রণয়ন করছে।
বৃহস্পতিবার পায়রা বন্দরের উন্নয়নসহ সুষ্ঠু পরিচালন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বন্দরের জেটি এলাকা থেকে সাগরের মধ্যে ৭৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ১০.৫ মিটার গভীরতা সম্পন্ন ১২৫ মিটার প্রশস্ত ক্যাপিটাল ড্রেজিং কাজের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। ৪০ হাজার টন পণ্য ও ৩ হাজার কন্টেইনারবাহী নৌযান বন্দরের চলাচলে লক্ষ্যে এ ড্রেজিং প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে ৪ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। বেলজিয়ামের ‘জান ডি নুল’ এ ড্রেজিং সম্পন্ন  করছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একই সাথে বন্দরের জন্য ২১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত দুটি পাইলট ভ্যাসেল, ২টি হেভি ডিউটি স্পীড বোট, দুটি টাগ বোট, ১টি বয়া লেয়িং ভ্যাসেল ছাড়াও ১টি সার্ভে ভ্যাসেলের উদ্বোধন করবেন। বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর নিয়ন্ত্রনাধীন খুলনা শিপইয়ার্ড ও নারায়নগঞ্জ ডকইয়ার্ড ছাড়াও দুটি বেসরকারী নৌ নির্মান প্রতিষ্ঠান দেশেই এসব বিশেষায়িত নৌযান নির্মাণ করেছে।
অপর এক প্রকল্পের আওতায় পায়রা বন্দরের জন্য প্রথম টার্মিনাল, ৬.৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ৬ লেন  সংযোগ সড়ক ও আন্ধারমানিক নদের ওপর ১ হাজার ১৮০ মিটার দীর্ঘ একটি সেতু নির্মানে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পেরও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বন্দরের প্রথম টার্মিনালের আওতায় ৩টি জেটি নির্মিত হলে একই সাথে ২শ মিটার দীর্ঘ ৪০ হাজার টন বহন ক্ষমতার ৩টি কন্টেইনার বা বাল্কবাহী কার্গো জাহাজ ভিড়তে পারবে। এ প্রকল্পের মধ্যে ৩টি জেটি নির্মানে প্রায় ৯১৭ কোটি টাকাসহ ইয়ার্ড নির্মানে আরো ১ হাজার ৩৫ কোটি টাকা ব্যয় হবে। নির্মিতব্য ইয়ার্ডে হাই কন্টেইনার স্থাপনের সংস্থান ছাড়াও রাবার টায়ার্ড গ্যান্ট্রি ক্রেন ব্যবহার করে কন্টেইনার স্টেকিং  এবং লোড-আনলোড সম্ভব হবে। এসব ইয়ার্ডে ২০ ফুট দৈর্ঘ্যরে বছরে ৮ লাখ কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হবে বলে পায়রা বন্দরের চেয়ারম্যান  জানিয়েছেন।
একই প্রকল্পের আওতায় পায়রা বন্দর থেকে ৬.৩৫ কিলোমিটার ১টি সংযোগ সড়ক নির্মিত হচ্ছে। নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয়ের অর্থে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর ডিপোজিট ওয়ার্ক হিসেবে  প্রকল্পটির বাস্তবায়ন করছে। স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করছে। বন্দরের পণ্য পরিবহনের লক্ষ্যে প্রায় ৭৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে আন্ধারমানিক নদের ওপর  ১ হাজার ১৮০ মিটার দীর্ঘ একটি সেতুও নির্মান করবে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। নির্মান প্রতিষ্ঠান বাছাই ও চুক্তি সম্পাদন থেকে ৩০ মাসের মধ্যে এ সেতুটি নির্মিত হবার কথা রয়েছে।
নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বশীল সূত্রের মতে, এসব উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে পায়রার বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশের বৈদেশিক  বানিজ্যে নতুন মাত্রা যোগ হবে। গত কয়েক বছরে পায়রা বন্দরে ২৩৬টি পণ্যবাহী সমুদ্রগামী জাহাজ নোঙর ও পণ্য খালাস করায় বন্দরের আয় হয়েছে প্রায় সাড়ে ৫শ কোটি টাকা। অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও দেশের তৃতীয় এ সমুদ্র বন্দরের মাধ্যমে বৈদেশিক বানিজ্য পর্যায়ক্রমে বাড়ছে বলেও জানিয়েছেন বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার এ্যাডমিরাল মোঃ সোহায়েল-এনইউপি, পিপিএম, পিএসসিÑবিএন ।
অর্থনীতিবীদদের মতে, দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে সমুদ্র বন্দরের ভূমিকা অপরিসীম। এখনো দেশের আমদানীÑরপ্তানীর ৯ শতাংশ সমুদ্র বন্দরের মাধ্যমেই সম্পন্ন হচ্ছে। যার ৯২ শতাংশ হচ্ছে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের মাধ্যমে। ফলে চট্টগ্রাম এ উপমহাদেশের একটি অন্যতম ব্যস্ত সমুদ্র বন্দরে পরিনত হয়েছে। দেশের ৭১০কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় অসংখ্য চ্যানেল রয়েছে। কিন্তু এসব চ্যানেলকে আজ পর্যন্ত তেমন কোন উন্নয়নমুখী কাজে ব্যবহার করা যায়নি। চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর ভবিষ্যতের বর্ধিত চাপ অন্য বন্দরে ভাগ করাসহ দক্ষিণাঞ্চলের আর্থÑসমাজিক ব্যবস্থা উন্নয়নে দেশে তৃতীয় সমুদ্র বন্দর প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা ছিলো দীর্ঘ দিনের।
নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় বিআইডব্লিউটিএ ও বাংলাদেশ নৌ বাহিনীসহ বিভিন্ন  সহযোগী প্রতিষ্ঠানের মতামত গ্রহণ করে পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলার সমুদ্র উপকূলবর্তী যেকোন একটি এলাকায় দেশের তৃতীয় সমুদ্র বন্দর স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। চট্টগ্রাম বন্দর কতৃপক্ষ নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন গ্রহণ করে প্রস্তাবিত এ সমুদ্র বন্দরের জন্য ‘পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষাসহ ‘অর্থনৈতিক ও কারিগরি সমীক্ষা’ সম্পন্ন করে। দেশীয় আধা সরকারী নদী বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠান ‘ইনস্টিটিউট অব  ওয়াটার  মডেলিং  এসব সমীক্ষা সম্পন্ন করে পটুয়াখালীর রাবনাবাদ চ্যানেলে  তৃতীয় সমুদ্র বন্দর স্থাপনের সুপারিশ করে।
চ্যানেলটির যে স্থানে বন্দরটি স্থাপন করা হচ্ছে সেখান থেকে সাগর মোহনার দূরত্ব প্রায় ৩৫কিলোমিটার। ন্যূনতম এক কিলোমিটার প্রশস্ত এ চ্যানেলটির অভ্যন্তরভাগে ২৫ থেকে ৩০ফুট নাব্যতা বিদ্যমান রয়েছে। এমনকি মূল বন্দরের  চারিপারা এলাকায় বর্তমান গভীরতা প্রায় ২৫ মিটার। চ্যানেলটির ¯্রােতের প্রবাহ ঘন্টায় ৩ থেকে ৪ নটিক্যাল মাইল হওয়ায় ক্যাপিট্যল ড্রেজিং-এর মাধ্যমে এর নাব্যতা কাঙ্খিত মাত্রায় বৃদ্ধি করা সম্ভব হচ্ছে।  যা দেশের অন্য দুটি সমুদ্র বন্দরের চেয়েও কিছুটা বেশী। ফলে এ চ্যানেলটির নাব্যতা নিয়ে ভবিষ্যতে কোন সমস্যা সৃষ্টির আশংকা নেই বলে মনে করছেন নদী বিশেষজ্ঞরা ।
রাজধানী ঢাকা থেকে পায়রা সমুদ্র বন্দরের দূরত্ব ৩৪০ কিলোমিটার। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৩১৬ কিলোমিটার এবং বরিশাল নদী বন্দর থেকে ১৭২কিলোমিটার। এ সমুদ্র বন্দরের সাথে সারাদেশের পণ্যবাহী নৌযানের চলাচল নির্বিঘœ রাখতে ইতোমধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় সব আঞ্চলিক নৌপথই প্রথম শ্রেণীতে উন্নীত করা হয়েছে। এসব নদ-নদীতে নির্মিত সেতুগুলোও ৬০ ফুট উচ্চতায় নির্মাণ করা হয়েছে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT