3:03 pm , October 25, 2022
বিশেষ প্রতিবেদক ॥ ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংএ ভর করে রোববার শেষ রাত থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩শ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতে বরিশাল মহানগরীর ৯০ ভাগ এলাকাই প্লাবিত হয়েছে। প্লাবিত হবার ২৪ ঘন্টা পরেও বেশীরভাগ এলাকা পানির তলায়। চরম দূর্ভোগে ৫ লক্ষাধিক নগরবাসী। এমনকি অনেক পরিবারেই মানবিক বিপর্যয় পর্যন্ত সৃষ্টি হয়েছে। বস্তিবাসীদের দুর্ভোগ সব বর্ণনার বাইরে চলে গেছে। রোববার রাতে নগরীর বিভিন্ন এলাকার মানুষ হোটেলসহ কিছুটা নিরাপদ আত্মীয় স্বজনের বাড়ীতে পর্যন্ত আশ্রয় নিয়েছেন। নগরীর নবগ্রাম রোডের করিম কুটির এলাকা থেকে একটি পরিবার সাড়ে ১২শ টাকা দিয়ে গাড়ী ভাড়া করে সদর রোডের আরেকটি আবাসিক হোটেলে পৌঁছে সেখানে রাত্রীযাপন করেন। নগরীর প্রায় দেড়শ কিলোমিটার ড্রেনের পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা অনেক আগে থেকেই ভঙ্গুর। এর সাথে নিয়মিত রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে সামান্য বেশী বৃষ্টি হলেই নগরীর বিভিন্ন এলাকা পানির তলায় চলে যাচ্ছে। সেখানে সিত্রাং-এ ভর করে দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত গোটা নগরীকে আরেক দফা ডুবিয়ে দিয়েছে। দুর্যোগ কেটে যাবার ১২ ঘন্টা পরেও গোটা নগরী ভয়াবহ জলাবদ্ধতার কবলে। সোমবার দুপুরের পরেও অনেকের ঘরে চুলা জ¦লেনি। ঘরের শৌচাগারগুলো পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারছেন না বেশীরভাগ পরিবার। তবে ২১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ সাঈদ আহমেদ মান্না এবং পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর পক্ষে মাহমুদুল হক খান মামুন নগরীতে খিচুরী ও বিরানী বিতরণ করেছেন।
নগরভবন থেকে অবশ্য রোববার দিনভরই চেষ্টা করা হয়েছে নিষ্কাশন ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার করতে। সোমবার সকাল থেকে সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মীরা কাজ করলেও দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত সমস্যা সরিয়ে ড্রেনেজ ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার সম্ভব হয়নি। তবে পানি কিছুটা সরতে শুরু করলেও এ নগরী সম্পূর্ণ প্লাবনমূক্ত হতে আরো অন্তত দুই দিন সময় লাগতে পারে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
এ নগরীর পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়নে গত কয়েক বছরে বরাদ্দ না পাওয়ায় নগরভবন থেকে কোন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়নি। তবে নগরীর ২৪টি খাল খননে প্রায় ২২শ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা মন্ত্রনালয়ে পেশ করা হলেও এখনো তাতে সবুজ সংকেত মেলেনি। অপরদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড নগরীতে তাদের ১০টি খাল খননসহ সৌন্দর্য বর্ধনে ১০ কোটি ৭৪ লাখ টাকার একটি প্রকল্প বাস্তবায়নে দরপত্র গ্রহণ ও মূল্যায়ন শেষ করলেও নগর ভবনের আপত্তির কারণে ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দিতে পারছে না বলে জানা গেছে।
নগর ভবনের পরিচ্ছন্ন বিভাগের জনবলের কিছুটা ঘাটতির পাশাপাশি কর্মরতদের কাজের প্রতি আন্তরিকতার ঘাটতিরও অভিযোগ রয়েছে। অনেক পরিচ্ছন্ন কর্মী নগর ভবনের দিক নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ করে না বলেও অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন বিবেচনায় চাকুরী পাওয়া এসব পরিচ্ছন্ন কর্মীর অনেক ওয়ার্ডের সুপারভাইজারদের নির্দেশনা পালনেও অনীহা প্রকাশ করে বলে অভিযোগ রয়েছে।
নগরীর সরকারী হাতেম আলী কলেজের লেকটির পয়ঃনিষ্কাশনে নবগ্রাম রোড ও রাজকুমার ঘোষ রোডের সংযোগ স্থলে মাত্র ৬৫ ফুট দৈর্ঘ্য ড্রেনটি নিয়মিত পরিস্কার না করায় লেকের পানি সরছে না। রোববার সিত্রাং-এর বয়ে আনা প্রবল বর্ষণে লেকটির পানি উপচে আশপাশের বাড়ি ঘরকে প্লাবিত করে। অথচ বিষয়টি রোববার দুপুরেই নগরভবনের পরিচ্ছন্ন বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাকে অবহিত করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কিন্তু সোমবার দুপুরের আগে ওই ড্রেনের বর্জ্য অপসারন করে লেকের পানি অপসারণ শুরু হয়নি। ফলে কলেজের লেকের পানি অসারণে আরো অন্তত দুই দিন সময় লাগবে। এছাড়া নবগ্রাম রোডের খালটি ড্রেনে পরিনত করায় এখানে প্রায়ই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে।
এ নগরীর পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা জনকল্যানে আসছে না বলে অভিযোগ সাধারন মানুষের।
নগরীর সুশীল সমাজ, সচেতন নাগরিক সমাজসহ নাগরিক অধিকার সংরক্ষনে কাজ করা সংগঠনের নেতৃবৃন্দ নগরীর পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা তাদারকি আরো জোরদার করার দাবী জানিয়েছেন।