2:56 pm , October 25, 2022
চরফ্যাসন প্রতিবেদক ॥ ঘুর্ণিঝড় সিত্রাং চলে গেলেও দ্বীপজেলা ভোলায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ের আঘাতে ঘর ও গাছচাপা পড়ে মারা গেছে ৪ জন। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সহ¯্রাধিক ঘরবাড়ি। এর মধ্যে ২ শতাধিক সম্পূর্ণ ও বাকীগুলো আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব পরিবারগুলো অসহায় মানবের জীবন যাপন করছে। ক্ষতিগ্রস্থ অধিকাংশই চরাঞ্চল ও বেড়ি বাধের বাইরের বাসিন্দা। অস্বাভিক জোয়ারে ভেসে গেছে চরাঞ্চলের কয়েক হাজার গরু মহিষ ও হাঁস মুরগি। ঢেউয়ের আঘাতে অর্ধশতাধিক ট্রলার ভেঙ্গে গেছে। জালসহ ভেসে গেছে অর্ধশতাধিক ট্রলার। এতে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে দরিদ্র মানুষরা। এদিকে দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্তদের খাদ্য সহায়তা দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
ঝড়ের আঘাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত সাগরকূলের উপজেলা চরফ্যাসন। সরেজমিনে দেখা যায়, তীব্র গতিতে আঘাত হানা ঝড়ে মুহুর্তে লন্ডভন্ড হয়ে যায় চরফ্যাসন উপজেলার হাজিরগঞ্জ ইউনিয়নের চর ফকিরা গ্রামের বেরিবাধ এলাকা। স্থানীয় ইউপি সদস্য ইউসুফ সিকদার জানান, খেজুর গাছিয়া এলাকায় ঝড়ে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয় ৩০টি বসত ঘর। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরও অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি। ঝড়ের আঁধার রাত বেড়িবাধে কাটানো এসব পরিবারের লোকজনদের মঙ্গলবার সকালে ভিটির উপর থাকা ভেঙে চুরমার হওয়া ঘরের মালামাল সরিয়ে নিতে দেখা গেছে। বেড়িবাধে আশ্রিত জেলে নাঈম জানান, সোমবার রাতের ঝড়ের আঘাতে তার ঘরটি ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়। চাল বেড়া সব ধুমড়ে যায়। স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে বাধের উপর রাত কাটিয়েছেন। ঝড়ের রাতে একই অবস্থা হয়েছে ঘরহারা সকল পরিবারের। ঘরবাড়ি হারিয়ে নতুন করে শংকায় পড়েছে এসব পরিবার।
চরফ্যাসন উপজেলা নির্বাহী অফিসার আল নোমান জানিয়েছেন, উপজেলায় প্রায় আড়াইশ ঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। আংশিক ক্ষতি হয়েছে আরও প্রায় ১ হাজার ঘরবাড়ি।
চর ফকিরার মতোই চরফ্যাসনের ঢালচর, চর নিজাম, চর পাতিলাসহ বিভিন্ন এলাকার ২শ’ ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ও সহ¯্রাধিক আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া বিছিন্ন মনপুরার ব্যবসায়ী আমির সোহেল জানান, সোমবার রাতের ঝড়ের সাথে জোয়ারের সময় বাধের উপর দিয়ে মূল ভূখন্ডে প্রবেশ করেছে। এতে উপজেলা সদর হাজিরহাটসহ বিভিন্ন এলাকায় ৫ থেকে ৭ ফুট পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে বহু ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১৯৭০ সালের পর এতো পানি আর মনপুরার মানুষ দেখেনি বলে প্রবীণদের কাছ থেকে জানা গেছে। এছাড়া মেঘনার মধ্যবর্তী কলাতলির চর, চর মোজাম্মেল, চর জহির উদ্দিন সহ বিভিন্ন চরে বিপুল সংখ্যক ঘরবাড়ি বিধস্ত হয়েছে। স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ৭ ফুট উচ্চতার পানিতে প্লাবিত মনপুরা উপজেলাও ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। ভেসে গেছে বহু গরু, ছাগল মহিষ ও শত শত ঘেরের মাছ। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকার কাজ চলছে। ক্ষতিগ্রস্ত এসব মানুষ ঘুরে দাঁড়াতে সরকারি সহায়তার দাবি জানিয়েছেন।
জেলা সদরের সামান্য এলাকা ছাড়া পুরো জেলা গত ৩দিন বিদ্যুৎ বিহীন রয়েছে। এতে মোবাইল নেটওয়ার্ক সম্পূর্ণ ভেঙ্গে পড়েছে। ঝড়ের দিন সকাল থেকেই মোবাইল যোগাযোগ প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। ঝড়ের পরও বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক না হওয়ায় দুর্ভোগে রয়েছে জেলাবাসী।
চরফ্যাসনের খাজুর গাছিয়া মাছঘাটের মাকসুদ জানান, জাল, ইঞ্জিনসহ ওই এলাকার ৩টি ট্রলার ভেসে গেছে। এতে তারা বড় ধরণের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। এছাড়া বিভিন্ন ঘাট থেকে আরও শতাধিক ট্রলার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বড় ধনের ক্ষতির মুখে পড়েছে জেলেরা।
ঘরবাড়ি হারা পরিবারগুলোর পুর্নবাসনে সরকারি সহায়তার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। চর কুকরী মুকরীর চেয়ারম্যান আবুল হাসেম মহাজন, ঢালচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুস সালাম হাওলাদার জানান, প্রতিটি ঝড়েই ওইসব এলাকার বাসিন্দারা ক্ষতির মুখে পড়েন। এসব ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন সরকারী সহায়তা প্রয়োজন।
এদিকে মঙ্গলবার দুপুরে সদর উপজেলার দুর্গত এলাকায় খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন জেলা প্রশাসক মো. তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরী। এ সময় তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সহায়তার আশ্বাস দেন। জেলা ও উপজেলা কন্ট্রোল থেকে জানা গেছে সরেজমিন থেকে ক্ষয় ক্ষতির তালিকা এখনো পাওয়া যায়নি। ক্ষতিগ্রস্ত বাধের পরিমাপ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন, পল্লী বিদ্যুৎ ও ওজোপাডিকো।
ঘুর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের আঘাতে ভোলায় চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে সদর উপজেলার ধনিয়ায় মফিজল (৬০), দৌলতখান পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের ৮০ বছরের বৃদ্ধা বিবি খাদিজা ঘরচাপায়, লালমোহনের ফাতেমাবাদ গ্রামের আয়েশা পানিতে ডুবে, চরফ্যাসনের হাজিরগঞ্জের মনির স্বর্ণকার গাছ চাপায় মারা যান।