3:07 pm , October 23, 2022
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে দুই কিশোরকে মারধর, নির্যাতন ও আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে মামা-ভাগ্নের বিরুদ্ধে। এরইমধ্যে ওই দুই কিশোরকে মারধরের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ায় বিষয়টি নিয়ে বেশ আলোড়নের সৃষ্টি হয়েছে। যদিও অভিযুক্তরা তাদের বিরুদ্ধ উত্থাপিত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। সেইসাথে এ ঘটনায় উভয় পক্ষই থানায় মামলা দায়ের করার কথা জানিয়েছেন। মারধর ও নির্যাতনের শিকার বরিশাল নগরের কাশিপুরস্থ শাহ পরান সড়কের বাসিন্দা নীরব সরদারের মা রীমা বেগম রোববার (২৩ অক্টোবর) দুপুরে জানান,তার ছেলে নিরব সর্দার (১৪)ও ইসমাম পাটোয়ারি (১২)সহ তাদের বন্ধুদের সাথে পার্শবর্তী এলাকার ১৩-১৪ বছরের কিশোর সামিরের সাথে সিনিয়র-জুনিয়র নিয়ে বিরোধ দেখা দেয়। এ নিয়ে তাদের মধ্যে শনিবার দুপুরের দিকে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। পরে সামিরের মামা সোহাগ ও খালাতো ভাই ফেরদৌস কোন কারন ছাড়াই আমাদের না জানিয়ে নিরব সর্দার ও তার বন্ধু ইসমাম পাটোয়ারিকে বাড়ির পাশ থেকে জোড়পূর্বক তুলে নিয়ে যায়। বাড়ি থেকে প্রায় আধ কিলোমিটার দূরে একটি নির্জন মাঠে নিয়ে নিরব ও ইসমামকে মারধর করে। রীমা বেগম বলেন, এসময় নিরবকে চর থাপ্পর দেয়ার পাশাপাশি অনবরত লাথি মারতে থাকে এবং পরবর্তীতে তাদের বাড়িতে নিয়ে আটকে রাখে। বিষয়টি আমরা জানতাম না। আসিফ নামে অপর এক যুবক এসে আমাদের জানায়, তারপর আমরা ওই বাড়িতে গিয়ে সন্তানদের উদ্ধার করে নিয়ে আসি। নিরবের নানা বাহার আলী হাওলাদার বলেন, ফেরদৌস ও সোহাগ মিলে আমার নাতিকে তুলে নিয়ে গিয়ে বেধম মারধর করে। পরে তাদের আটকে রাখে । বিষয়টি আমরা জানতামই না। খবর পেয়ে তাদের গিয়ে পরবর্তীতে ছাড়িয়ে নিয়ে আসি। কিন্তু বেদম মারধরের বিষয়টি নিরব ভয়ে আমাদের বলেনি। পরে অসুস্থ হয়ে পরলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করি। এদিকে মারধরের একটি ভিডিও দেখে নির্মমতার বিষয়টি সামনে আসে।
তিনি বলেন, ছোট ছেলেদের মাঝে ঝামেলা। বিষয়টি অভিভাবকরা আমাদের না জানিয়ে তারা এভাবে মারতে পারে না। গতকালই বিষয়টি আমরা থানা পুলিশকে জানিয়েছি, তারা ঘটনাস্থলে এসে এর সুষ্ঠু বিচার করবেন বলে জানিয়েছেন।
এদিকে হামলাকারী ফেরদৌস জানান, টিসিবির মালামাল না পেয়ে খালি হাতে কার্ড নিয়ে তার খালোতো ভাই সামির ঘটনাস্থলের পাশ দিয়ে আসছিলো। ওইসময় ঘটনাস্থলে থাকা কয়েকজন কিশোর গাঁজা সেবনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। সামির তা দেখে ফেলায় প্রথমে ওই কিশোররা তার ওপর ক্ষিপ্ত হয় এবং পরে নাম ধরে ডাকা নিয়ে সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে সামিরকে নিরব ও ইসমামসহ কয়েকজন মিলে মারধর করে।
তিনি বলেন, সামির ঘটনার পর কাঁদতে কাঁদতে আমার কাছে আসলে বিষয়টি জানতে পারি। তখন সামিরকে নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে হামলকারী কিশোরদের ধরি এবং রাগের মাথায় দু’ একটি চর-থাপ্পর দেই। তবে বিষয়টি যেভাবে বলা হচ্ছে, সেভাবে কোন ঘটনা নয় এমনকি নির্যাতনের মতো কোন ঘটনাও ঘটেনি।
সামিরের মা রিপা বেগম বলেন,টিসিবির মালামাল না পেয়ে ছেলে বাড়িতে আসছিলো। তখন ওই ছেলেরা আমার সন্তান সামিরকে গাঁজা সেবনের অফার দেয়। যা প্রত্যাখান করতে গিয়ে ‘তুই’ বলাকে কেন্দ্র করে সামিরকে ওরা মারধর করে। মারধরে সামির অসুস্থ হয়ে পরলে বাসায় যেতে না পেরে মামা বাড়িতে এসে বিষয়টি বলেন। তখন মামা ও খালাতো ভাই বিষয়টি সহ্য করতে না পেরে তারা ঘটনাস্থলে যায়। এরপর হামলকারী দুই ছেলে একে অপরের দোষ দিতে থাকলে আমার বোনের ছেলে চর-খাপ্পর দেয়। তবে নির্যাতনের কোন ঘটনা ঘটেনি। এরপর ওই দুই ছেলেকে নিয়ে আমার বাবার বাড়িতে আসে এবং অভিভাবকদের খবর দিয়ে তাদের বিষয়টি জানানো হয়। তারাই এখানে বসে সন্তানদের মারধর করে নিয়ে যায়।
তিনি বলেন, এরপর রাতে আমার বড় বোনের বাসায় অনেক মহিলারা গিয়ে হামলা চালায়। দরজা-জানালা ও দোকানে পিটিয়েছে এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। পরে পুলিশ আসলে পরিস্থিত শান্ত হয়।
বর্তমানে ছেলে সামিরও চিকিৎসাধীন রয়েছে জানিয়ে রিপা বলেন, এ ঘটনায় আমরা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিয়েছি।
তবে এখন পর্যন্ত কোন পক্ষ থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি বলে জানিয়েছেন বরিশাল মেট্রোপলিটনের এয়ারপোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হেলাল উদ্দিন। তিনি বলেন, লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।