নৌ পরিবহন ব্যবসায় মন্দার মধ্যেই দক্ষিনাঞ্চলে যাত্রী পরিবহনে আসছে আরো ৩টি নৌযান নৌ পরিবহন ব্যবসায় মন্দার মধ্যেই দক্ষিনাঞ্চলে যাত্রী পরিবহনে আসছে আরো ৩টি নৌযান - ajkerparibartan.com
নৌ পরিবহন ব্যবসায় মন্দার মধ্যেই দক্ষিনাঞ্চলে যাত্রী পরিবহনে আসছে আরো ৩টি নৌযান

3:39 pm , October 1, 2022

বিনিয়োগ প্রায় শত কোটি টাকা

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ নৌ-পরিবহন খাতে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসার মধ্যেই রাজধানীর সাথে দক্ষিণাঞ্চলের দুটি রুটে আরো দুটি বিলাসবহুল যাত্রীবাহী নৌযান চালু হচ্ছে। নির্মানাধীন রয়েছে আরো একাধিক। এরমধ্যে ‘এমভি এম খানÑ৭’ দেশের সর্ববৃহৎ যাত্রীবাহী নৌযান। এসব নৌযানের পেছনে উদ্যোক্তা ও বিভিন্ন ব্যাংকের শতাধিক কোটি টাকা বিনিয়োগ থাকলেও তার ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে সংশ্লিষ্ট মহলের।
পদ্মা সেতুর দ্বার খুলে যাবার পরে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেকটাই একমুখী হতে শুরু করেছে। যার সবচেয়ে ভয়াবহ বিরূপ প্রভাব পড়েছে দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগের নৌ পরিবহন সেক্টরে। এ খাতে উদ্যোক্তা ও বিভিন্ন বানিজ্যিক ব্যাংকের প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ব ও বেসরকারী ব্যাংকগুলোর পরিমানই প্রায় দু হাজার কোটি টাকার মত।
দক্ষিণাঞ্চলের রমরমা নৌ-বানিজ্য এখন নিকট অতীত। এ অঞ্চলের সাথে রাজধানীর অন্তত ৫০টি রুটে যে প্রায় দেড়শ যাত্রীবাহী বেসরকারী নৌযান চলাচল করত, তা গত ৩ মাসে সীমিত হয়ে ১শর নিচে নেমেছে। রাষ্ট্রীয় বিআইডব্লিউটিসি’র একমাত্র অভ্যন্তরীন স্টিমার সার্ভিসটিও ইতোমধ্যে অনানুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে। শুধু বরিশালÑঢাকা নৌ পথে রুট পারমিটধারী ২৫টির বেশী বেসরকারী নৌযানের মধ্যে চলাচলরত ১৮টি নৌযানকে ৩টি ভাগে ভাগ করে রোটেশন পদ্ধতি প্রবর্তন করেছে মালিক সমিতি। ফলে উভয় প্রান্ত থেকে প্রতিদিন ৩টি করে নৌযান পরিচালনের সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছে মালিক সমিতি। প্রতিটি নৌযান ৩দিন পরে একটি ট্রিপ চালাবার সুযোগ পাচ্ছে। বিআইডব্লিউটিএ’র রাজস্ব আয় হ্রাস পেয়েছে অর্ধেকেরও বেশী।
গত ২৬ জুন পদ্মা সেতু যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করার পর থেকে ধারাবাহিকভাবে নৌযান যাত্রী হারাতে থাকে। ফলে ইতোমধ্যে একমাত্র ভোলাÑঢাকা রুট ছাড়া দক্ষিণাঞ্চলের সবগুলো জেলা সদরের সাথে রাজধানীর নৌ পথে যাত্রী সংখ্যা প্রায় ৬০ ভাগ হ্রাস পেয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় কয়েকটি জেলা ও উপজেলার সাথে ঢাকার নৌপথে যাত্রী পরিবহন বন্ধও হয়ে গেছে। অথচ নৌ-বানিজ্যই এতদিন দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি ছিল। এমনকি যাত্রীবাহী নৌযান নির্মান, মেরামত ও রক্ষনাবেক্ষন সহ পরিচালন ব্যবস্থায় ইতোমধ্যে প্রায় ১০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান করেছে।
কিন্তু পুরো নৌ পরিবহন সেক্টরেই এখন বিষাদের সুর। সরকারীÑবেসরকারী ব্যাংকগুলো যেমনি চিন্তিত তাদের লগ্নিকৃত অর্থ ফেরত আসা নিয়ে। তেমনি ঋন গ্রহীতাদের প্রায় সবারই রাতে ঘুম হারাম হয়ে গেছে এতবড় বিনিয়োগের ভবিষ্যত নিয়ে। তবে কয়েকজন নৌযান মালিক এতদিন নৌ পথের রমরমা ব্যবসার মধ্যেও ব্যাংকের টাকা ফেরৎ দেননি। তাদের টাকা ফেরৎ পাওয়া নিয়ে ব্যাংকগুলোর উদ্বেগ আরো বেশী। এসব ঋন খেলাপীদের বিরুদ্ধে খুব সহসাই চূড়ান্ত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের কথা জানিয়েছেন বানিজ্যিক ব্যাংকের দায়িত্বশীল মহল।
তবে এর পরেও ইতোমধ্যে নির্মিত দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ নৌ বানিজ্য প্রতিষ্ঠান ‘সুন্দরবন নেভিগেশন’এর আরো দুটি যাত্রীবাহী নৌযান যাত্রী পরিবহনে আসছে। ‘সুন্দরবন-১৫’ ও ‘সুন্দরবন-১৬’ নামের এদুটি নৌযান যথাক্রমে পটুয়াখালীÑঢাকা এবং বরিশালÑঢাকা নৌপথে যাত্রী পরিবহন শুরু করবে শীঘ্রই। ইতোমধ্যে দুটি নৌযানেরই চূড়ান্ত পরীক্ষামূলক পরিচালনও সম্পন্ন হয়েছে। এ দুটি নৌযানই এ যাবৎকালের সবচেয়ে বিলাসবহুল ও নিরাপদ বলে দাবী করেছেন সুন্দরবন নেভিগেশনের কর্ণধার সাইদুর রহমান রিন্টু। তার মতে, ‘নৌ পরিবহন ব্যবসার চূড়ান্ত মন্দার মধ্যেও তারা বড় ধরণের একটি ঝুঁকি নিয়েছেন। যাত্রীরা নৌ পথে চলাচল থেকে সম্পূর্ণভাবে মুখ ফিরিয়ে নেবে না বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ ভ্রমনের জন্য যাত্রীরা নৌপথেই ভ্রমন করবেন’।
তবে এরচেয়ও বড় ঝুঁকি নিতে যাচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলে নৌ ব্যবসায় নবাগত প্রতিষ্ঠান ‘এম খান লিমিটেড’এর মাহফুজ খান। যেখানে চলমান নৌযান নিয়ে মালিকগরা উদ্বিগ্ন, সেখানে ‘এম খান-৭’ নামের দেশের সর্ববৃহৎ যাত্রীবাহী নৌযানের নির্মান কাজ শুরু করেছেন মাহফুজ খান। আগামী এক বছরের মধ্যে তার বিলাসবহুল এ নৌযানটি বরিশালÑঢাকা নৌপথে যাত্রী পরিবহন শুরু করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি। সর্বোচ্চ নিরাপত্তা এবং আরামদায়ক যাত্রী সেবার জন্য দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ আবার নৌ পথকেই প্রথম যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে বেছে নেবে বলেও তার আশা।
ইতোমধ্যে এম খানÑ৭’এর মূল খোল এবং প্রথম তলার নির্মান কাজ শেষ হয়েছে। এর মূল ইঞ্জিনসহ জেনারেটর সমূহের আমাদানীও সম্পন্ন হয়েছে। দেশের খ্যাতনামা নৌ স্থপতিদের নকশায় নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের প্যানেল প্রকৌশলীদের নিবিড় তত্ত্বাবধানে নৌযানটির নির্মান কাজ চলছে। বরিশালের কীর্তনখোলা নদী তীরের এম খান শিপ বিল্ডার্সেই পুরো নৌযানটির নির্মান কাজ আগামী ১ বছরের মধ্যে সম্পন্ন করতে আশাবাদী মাহফুজ খান।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT