বরিশালে বাড়ছে আত্মহত্যা বরিশালে বাড়ছে আত্মহত্যা - ajkerparibartan.com
বরিশালে বাড়ছে আত্মহত্যা

3:52 pm , September 30, 2022

মুরাদ আহমেদ, অতিথি প্রতিবেদক ॥ সন্তান থাকছে একা একা। বাবা মা সংসার পরিচালনায় ব্যস্ত। পরিবার ছোট। মন খুলে কথা বলার সীমানাও সংকুচিত। সন্তানের অবলম্বন একমাত্র মোবাইল। যার সাথে কথা হয় চ্যাটিং হয় তার সাথে বনিবনা না হবার সম্ভাবনা পদে পদে। আয়ের চেয়ে ঢের গুন বেশি ব্যয়। সব ইচ্ছা সংসার থেকে পূরন হচ্ছে না। অসম বন্ধুত্ব। নেশার সহজ প্রাপ্যতা। পরিবারিক বন্ধনহীনতা। ধর্মীয় অনুশাসন না থাকা। আকাশ সংস্কৃতির অপব্যবহার। পারিবারিক উদাসীনতায় রাত জেগে কাটানো। অতঃপর জীবনের প্রতি উদাসীনতার কারনেই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঘটে যাচ্ছে আত্মহত্যার মতো অঘটন। দুঃসংবাদ হলো বরিশালেও আত্মহত্যার প্রবনতা বেড়ে চলেছে। প্রায় প্রমানিত সত্য হলো বরিশালের তারুণ্যের পাশে দাঁড়ানোর মতো কোন কিছুর বড় একটা অভাব রয়েছে বলেই এমন অঘটন ঘটছে। বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের তথ্য অনুযায়ী  ২০২০ সালে বরিশাল মেট্রো এলাকায় মোট ১৫১টি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ১০২টি বিষপানে আর ৪৯টি গলায় ফাঁস দিয়ে। একই এলাকায় ২০২১ সালে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে ১৯৯টি। যার মধ্যে ১৩৮টি বিষপানে আর ৬১টি গলায় ফাঁস দিয়ে। এই দুই বছরের যোগফল বলছে এ সময়ে মোট ৩৫০টি আত্মহত্যার ঘটনাঘটেছে যার মধ্যে ২৪০ টি বিষপানে আর ১১০টি গলায় ফাঁস দিয়ে।
আরো ভয়াবহ চিত্র এসেছে এ বছর প্রথম ৮ মাসেই অর্থাৎ ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত চার থানায় ১৫০টি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ১৪০টি ঘটনা ঘটেছে কোতয়ালী থানা এলাকাতেই। বাকি ১২টির মধ্যে বন্দর থানায় ৪টি, কাউনিয়া থানায় ৫টি এবং এয়ারপোর্ট থানায় ৩টি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে।
এক কথায় ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ৪৫২টি আত্মহত্যার ঘটনা এখানে ঘটেছে যার মধ্যে ৩৫৬টি বিষপানে এবং ১৪৫টি গলায় ফাঁস লাগিয়ে। এ ক্ষেত্র বিষপানে আত্মহত্যা জন্য বিষের সহজ লভ্যতাকেও দায়ী করা হচ্ছে। এটি বন্ধে সন্ধান চালাতে হবে।
আত্মহত্যাকারীদের মধ্যে হতাশাগ্রস্ত তারুণ্যের সংখ্যা বেশি। এর পরে কিছু রয়েছে সংসারে অতৃপ্ত দম্পতি, দাম্পত্য কলহ, পরকীয়ায় আসক্তি। পরিসংখ্যান সুস্পষ্টভাবেই বলে দিচ্ছে বরিশাল মেট্রো এলাকায় আত্মহত্যার লাগামহীন অশুভ শক্তির রশি টেনে ধরার সময় এসেছে। সম্প্রতি একাধিক এমন অনেক আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে যা মেনে নেয়া ছিলো কষ্টকর।
এ ক্ষেত্রে শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা: মনিরুজ্জামান শাহীন, একই কলেজের  ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা: মোঃ রেফায়েতুল হায়দার এবং বরিশালের পুলিশ কমিশনার মোঃ সাইফুল ইসলাম নিজ নিজ অবস্থান থেকে যে কথাগুলো বলেছেন তা ছিলো অভিন্ন। সবার দাবী পারিবারিক বন্ধন  ফিরিয়ে আনার। এরা বলছেন সন্তানের মাথা থেকে একাকিত্ব দূর করতেই হবে। এদের সাথে পরিবারের আলাপন বাড়াতে হবে। আকাঙ্খা আর উচ্চাকাঙ্খার ব্যবধান পরিষ্কার করতে হবে। সংসারের আয় ব্যয়ের সীমাবদ্ধতার চর্চা করতে হবে। এতে করে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরিয়ে  আনা সম্ভব। অপরদিকে সমাজ বিজ্ঞানীদের মতে পাড়া মহল্লায় নিয়মিত ক্রিড়ার প্রসার ঘটাতে হবে। সাংস্কৃতিক বলয়ে নিয়মিত সমাজ সংস্কার নিয়ে বাস্তবধর্মী মোটিভেশন চালু রাখতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা হলো যে সীমানার বাইরে পদচারনা ভুল আর যোগ্যতার বেশি দাবী করা অন্যায় এমন সত্য সামনে তুলে ধরতে হবে। তাদের মতে ছোট পরিবারের একাকিত্ব দূর করতে সামাজিক ও পারিবারিক বন্ধন গড়ে তুলতে হবে। এসবের ব্যত্যয় হলে আত্মহত্যার উর্ধ্বগতি এড়ানো যাবে না। সবার আগে ঘর থেকে শুরু করতে হবে সন্তানকে বেঁচে থাকার মতো পরিবেশ সৃষ্টির প্রক্রিয়া। সব সন্তান বুয়েট, মেডিকেল আর বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেলেই সে সুসন্তান হবে এমন ধারনা পাল্টে  সন্তান যেখানেই পড়াশুনা করছে সেখানটায় তাকে উৎসাহিত করে তার মধ্যকার সুপ্ত প্রতিভা খুঁজে বের করে লালন পালনে যতœবান হতে হবে। এতে কমতে পারে তারুন্যের হতাশা, বন্ধ হতে পারে আত্মহত্যার দুয়ার।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT