বৃষ্টির ঘাটতিতে আমন আবাদ সংকটে আউশের আবাদ ও উৎপাদনেও ঘাটতি বৃষ্টির ঘাটতিতে আমন আবাদ সংকটে আউশের আবাদ ও উৎপাদনেও ঘাটতি - ajkerparibartan.com
বৃষ্টির ঘাটতিতে আমন আবাদ সংকটে আউশের আবাদ ও উৎপাদনেও ঘাটতি

3:40 pm , September 7, 2022

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ আষাঢ়Ñশ্রাবনের ভরা বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিপাতের ব্যাপক ঘাটতিতে বরিশাল কৃষি অঞ্চলের প্রধান দানাদার খাদ্য ফসল আমন নিয়ে মারাত্মক সংকট তৈরী হয়েছে। একই কারণে আউশ আবাদ এবং উৎপাদনেও লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। ভাদ্র মাস শেষ হতে চললেও ৮০ ভাগ জমিতেও আমনের আবাদ সম্পন্ন হয়নি। একদিকে বৃষ্টি অভাবে এবার কৃষকরা সময়মত বীজতলা তৈরী করতে পারেনি, আবার শ্রাবনের শেষ পূর্ণিমায় লঘুচাপে ভর করে ফুসে ওঠা সাগরের পানির সাথে কয়েক দিনের অতি বর্ষণে এ অঞ্চলের আমন বীজতলার প্রায় পুরোটাই প্লাবনের শিকার হওয়ায় তা বিনষ্ট হয়েছে। ফলে বুধবার পর্যন্ত বীজ সংকটে দক্ষিণাঞ্চলের বিশাল আবাদী জমিতেই আমন রোপন সম্ভব হয়নি।
অথচ চলতি খরিপ-২ মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় ৭ লাখ হেক্টরে জমিতে প্রধান দানাদার খাদ্য ফসল আমন আবাদের মাধ্যমে প্রায় সাড়ে ১৫ লাখ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্য রয়েছে কৃষি মন্ত্রনালয়ের। এমনকি বৃষ্টির অভাবে সদ্য সমাপ্ত খরিপÑ১ মৌসুমেও দক্ষিণাঞ্চলে আউশের আবাদ ও উৎপাদনে বিপর্যয় নেমে আসে। আউশ আবাদে লক্ষ্যমাত্রার অনেক পেছনে এবার খাদ্য উদ্বৃত্ত দক্ষিণাঞ্চল। বরিশাল কৃষি অঞ্চলের ১১ জেলায় এবার ২ লাখ ৪ হাজার ৬৭০ হেক্টরে আউশের আবাদ হলেও তা লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ২৪ হাজার হেক্টর পেছনে।
এবার বৃষ্টির অভাবেই আউশ আবদের পরিমান সারা দেশেই প্রায় ১২Ñ১৫% পর্যন্ত হ্রাস পায় বলে ডিএই সূত্র জানিয়েছে। দক্ষিনাঞ্চলেও ২ লাখ হেক্টর থেকে আবাদ ১ লাখ ৭৬ হাজারে হ্রাস পেয়েছে। যা সম্প্রতিককালের সর্বনি¤œ বলে জানা গেছে। ফলে বরিশাল কৃষি অঞ্চলে ৬.১৬ লাখ টন আউশ চাল প্রাপ্তির সম্ভাবনা যথেষ্ট ক্ষীন হয়ে এসেছে। বৃষ্টির অভাবে আবাদ লক্ষ্য অর্জিত না হওয়ায় কাঙ্খিত উৎপাদন লক্ষ্যও পিছিয়ে গেছে বলে মনে করছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদগন।
গত এপ্রিলে বরিশালে স্বাভাবিক ১৩২ মিলিমিটরের স্থলে মাত্র ১৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। যা ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে ৮৫.৬% কম। মে মাসেও আবহাওয়া বিভাগ থেকে বরিশালে স্বাভাবিক ২৬০ মিলিমিটারের স্থলে ২৪৫ থেকে ৩১০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেয়া হলেও বাস্তবে বৃষ্টি হয়েছে স্বাভাবিকের চেয়ে ৫.৬% কম । অথচ ঐ মাসেই ঘূর্ণিঝড় অশনিতে ভর করে ৭ থেকে ১১ মে পর্যন্ত কয়েকদিনের অতি বর্ষণে তরমুজ সহ বিভিন্ন রবি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জুনে স্বাভাবিক ৪৮৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের স্থলে আবহাওয়া বিভাগের পূর্বাভাস ছিল ৪৬০ থেকে ৫১০ মিলি। কিন্তু ঐ মাসে প্রকৃত বৃষ্টিপাতের পরিমান ছিল মাত্র ২৬৮.৫ মিলিমিটার। যা ছিল স্বাভাবিকেরও ৪৪.৪৫% কম। জুলাই মাসেও বরিশালে স্বাভাবিকের প্রায় ৬৫% কম। আর সদ্য বিদায়ী আগষ্টে বরিশালে ৪৩৩ মিলিমিটারের স্থলে বৃষ্টি হয়েছে ৩৬২ মিলি। যা ছিল স্বাভাবিকের ১৬.৪% কম।
অপরদিকে বিগত দুটি বছর ভাদ্রের অমাবশ্যায় প্রবল বর্ষণের সাথে ফুসে ওঠা সাগরের জোয়ারে ব্যাপক প্লাবনের সৃৃষ্টি হলেও এবার আগষ্টের শেষে সে সময় অতিবাহিত হলেও বৃষ্টি আর প্লাবন কিছুই হয়নি। আর পুরো মাস যুড়ে বৃষ্টির আকাল ছিল জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ সহ কৃষির জন্য বিপর্যস্তকর। তবে চলতি সেপ্টেম্বরেও স্বাভাবিক ৩১৬ মিলিমিটারের স্থলে আবহাওয়া বিভাগ থেকে বরিশালে ২৮৫-৩৫০মিলি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেয়া হলেও মাসের প্রথম সপ্তাহে ১০ মিলিমিটারও বৃষ্টি হয়নি। দক্ষিণাঞ্চলের কৃষক সহ স্বাভাবিক বৃষ্টির অপেক্ষার প্রহন গুনছেন এখনো।
কারণ আমন রোপনের সময় শেষ পর্যায়ে। কিন্তু বীজ সংকটে দক্ষিণাঞ্চলের ২০ ভাগ জমিই এখনো অনাবাদী। বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা ও বরগুনার অনেক এলাকাতেই আমন বীজ সংকটে কৃষকের হাহাকার চলছে। এর মূল কারণও বৃষ্টির অভাবে বীজতলা তৈরী করতে না পারা সহ গত মাসে সেসব বীজতলা ও রোপা আমন প্লাবনের শিকার হওয়া। বরিশালের সদর উপজেলার চরমোনাই ইাউনিয়নের গ্রামের পর গ্রামের জমি খা খা করছে। একদিকে বৃষ্টির অভাবে জমি তৈরী হয়নি, অপরদিকে বীজ নেই। ফলে আছে শুধু কৃষকের হাহাকার।
তবে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের বরিশাল অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, কৃষকরা চেষ্টা করে যাচ্ছে আমন রোপনের চুড়ান্ত লক্ষ্যে পৌছতে। আবহাওয়া কিছুটা অনুকুল থাকলে, বীজ সংগ্রহ করে রোপন সম্ভব হতে পারে বলেও আশার কথা শোনান অতিরিক্ত পরিচালক।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT