২২ বছরেও কাটেনি বরিশালের পরনির্ভরতা ২২ বছরেও কাটেনি বরিশালের পরনির্ভরতা - ajkerparibartan.com
২২ বছরেও কাটেনি বরিশালের পরনির্ভরতা

3:45 pm , August 23, 2022

আরিফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিবেদক ॥ শ্রম ও পরিবেশ আদালত, বিসিক, জাদুঘর, আঞ্চলিক পোস্ট অফিস, ভূমিসহ সরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এখনো খুলনায় ছুটোছুটি করতে হয় বরিশালবাসীকে। বিভাগীয় শহর হওয়ার ২২ বছর হলেও এখনো কাটেনি বরিশালের পরনির্ভরতা। আর এ জন্য প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের অবহেলাকে দায়ী করেছেন সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ। এ বিষয়ে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের উত্তর পাওয়া না গেলেও বিভাগীয় কমিশনার দিয়েছেন দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস। সম্প্রতি ডাক বিভাগ ও বিসিক কার্যক্রম নিয়ে প্রতিবেদন করতে গেলে উঠে আসে এই চিত্র। এসব প্রতিষ্ঠানের বিভাগীয় কার্যক্রম এখনো খুলনা নির্ভর। ফলে একটু কিছু ওলট-পালট হলেই বরিশালবাসীকে ছুটতে হয় খুলনায়। বরিশালের সুশীল সমাজের প্রতিনিধি সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ দুলাল, সাংস্কৃতিক নেতা নজমুল হোসেন আকাশ, কাজল ঘোষ, সাহিত্যিক অধ্যাপক তপংকর চক্রবর্তী, অধ্যাপক ফরিদুল আলম জাহাঙ্গীর তালুকদারের বক্তব্য হচ্ছে, পায়রা ও পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে বরিশালের উপর চাপ অনেক বেড়ে গেছে। ভাঙা থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত সড়ক চারলেনে উন্নীত হওয়া এবং পাইপ লাইন গ্যাসের সুবিধা পেলেই বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার সুযোগ রয়েছে বরিশালে। অনেকেই এখন বরিশালে শিল্প প্রতিষ্ঠান খুলতে আগ্রহী। এক কথায় পদ্মা সেতুর কারণে বরিশালের বানিজ্যিক দ্বার উম্মুক্ত বলে মনে করেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। আর এ কারণে সবার আগে খুলনা নির্ভর প্রশাসনিক কার্যক্রমগুলোকে গুটিয়ে বরিশাল নির্ভর হতে হবে। তবে এসব কাজে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের সাথে জেলার সমন্বয়হীনতা স্পষ্ট বলে দাবী সুশীল সমাজের অনেকের। সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের গাফলতিতো আছেই, সাথে বিভাগীয় প্রশাসনের উদাসীনতার কারনেই অনেক কাজ আটকে আছে এমন দাবী সামাজিক ও পরিবেশ আন্দোলনের নেতা কাজী মিজানুর রহমান ও এনায়েত হোসেন শিবলুর। তারা বলেন, নগরীর উন্নয়নের মূল পরিকল্পনা করার কথা সিটি করপোরেশনের। সে অনুযায়ী খুলনা সিটি করপোরেশন এর সাথে সমঝোতার মাধ্যমে বরিশাল সিটি করপোরেশন তার প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো গুছিয়ে নেবে। এতে জেলা ও বিভাগীয় প্রশাসন সহযোগিতা করবে। এখানে উল্টো জেলা প্রশাসন নগর সাজাতে ভূমিকা রাখছে।
এ প্রসঙ্গে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মোঃ ইউনুস বলেন, একটি বিভাগীয় শহর কেন আর একটি বিভাগের উপর নির্ভরশীল থাকবে। তাহলে বিভাগীয় প্রশাসন কি করছে? ১৯৯৩ সালে বরিশাল বিভাগ হয়েছে। ২০০০ সালে হয়েছে সিটি করপোরেশন। এতোদিনেও বরিশাল উন্নয়ন কমিটি হয়নি বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগের এই নেতা। তিনি চান বরিশালের নাগরিকদের সমন্বয়ে শক্তিশালী একটি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ তৈরী হোক বরিশালে।
তালুকদার ইউনুসের এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব ও চারবারের কাউন্সিলর মীর জাহিদুল কবির জাহিদ বলেন ‘প্রশাসনের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ তিনি (তালুকদার মো. ইউনুস) নিজেই এ বিষয়ে উদ্যোগী হতে পারতেন ও সবাইকে সংগঠিত করতে পারতেন। বরিশাল উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠনে ভূমিকা রাখার সুযোগ তার চেয়ে বেশি আর কারো নেই বলে দাবী এই বিএনপি নেতার। তিনি বলেন, প্রশাসনকে দোষ দিয়ে লাভ নেই, আমাদের নাগরিকদেরই সচেতনতার অভাব রয়েছে। আঞ্চলিক কার্যালয় এখনো খুলনা নির্ভর। গ্যাস লাইন, ফোরলেনে উন্নিত হওয়া এগুলো নিয়ে পদ্মা সেতু হবার আগেই আমরা বলে আসছি। এ বিষয়ে আমরা জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপিও দিয়েছি।একই কথা বলেছেন বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক। তিনি বলেন, শ্রম আদালত, পোস্ট অফিস, বিসিক, বীমা এমনকি জাদুঘরের যাবতীয় কিছু এখনো খুলনা নির্ভর। সিটি করপোরেশন হওয়ার ২২ বছর পরও বরিশাল উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নেই এখানে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় যা কিছু হয়েছে তার সবটাই বিএনপি শাসনামলে করা। বর্তমান সরকারের ১৩ বছরের অবদান ওই বর্ধিত এলাকার অবহেলিত চিত্র। এসব দাবীতে জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করা হলেও কোনো উদ্যোগ এখনো চোখে পড়েনি বলে জানান বিএনপির এই নেতা।এদিকে বরিশালের উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন হায়দার। নগরীর প্রধান সড়ক বর্ধিত করতে গত ১৪ ফেব্রুয়ারী সাগরদি ব্রীজ সংলগ্ন এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে। রূপাতলি ও নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ডে ফ্লাইওভার তৈরী এবং কীর্তনখোলা নদীর উপর চরকাউয়া এলাকায় আরো একটু সেতু নির্মাণের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন কর্তৃপক্ষ। এ ব্যাপারে বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার আমিন উল আহসান বলেন, বিভাগীয় সমস্যা নিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি। খুলনা নির্ভর প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকা তৈরি করে ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। ভোলার গ্যাস ও ফোরলেনের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সাথে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT