3:44 pm , August 23, 2022

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ চুক্তি স্বাক্ষরের প্রায় দু বছর পরে ভোলায় একটি গ্যাস কূপের খনন শুরু করেছে রাশিয়ার রাষ্ট্রয়াত্ব প্রতিষ্ঠান ‘গ্যাজপ্রম’। শুক্রবার ভোলার ‘টবগিÑ১’ কূপের খনন শুরুর আগে জ¦ালানী বিভাগের সিনিয়র সচিব মোঃ মাহবুব হোসেন আনুষ্ঠানিকভাবে এর উদ্বোধন করেন। টবগিÑ১ কূপে ২০Ñ২৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মজুদের ব্যাপারে আশাবাদী জ¦ালানী বিশেষজ্ঞরা। তবে সচিবের সাথে উপস্থিত বাপেক্স-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী সাংবাদিকদের জানান, খনন সম্পন্নসহ প্রাপ্ত তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষন করেই মজুদ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে। এ সময় পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল আহসানসহ জ¦ালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিতি ছিলেন। চুক্তি অনুযায়ী আগামী বছরের জুনের মধ্যে গ্যাজপ্রম ভোলার ‘ইলিশাÑ১’ ও ‘ভোলা নর্থÑ২’ কূপ দুটিও খনন করবে বলে জানিয়েছে বাপেক্স-এর দায়িত্বশীল সূত্র।
২০১৭-১৮ সালে বাংলাদেশ খনিজ অনুসন্ধান ও উন্নয়ন সংস্থাÑবাপেক্স ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ করে ভোলার ৩টি স্থানে গ্যাসের সম্ভাব্য মজুদ চিহিৃত করে। বাপেক্স থেকে এসব গ্যাস ক্ষেত্রের নামকরন করে ‘ইলিশাÑ১’, ভোলা নর্থÑ২’ ও টবগীÑ১’ নামে। ইতিমধ্যে এসব গ্যাসকূপ খননে গ্যাজপ্রমের সাথে চুক্তি হয়। তবে বাপেক্স-এর সক্ষমতা আগের চেয়ে বৃদ্ধির পরেও ভোলায় গ্যাসকূপ খননে গ্যাজপ্রমের সাথে চুক্তি নিয়ে শুরু থেকেই বিশেষজ্ঞ মহলে ভিন্ন মত ছিল। এমনকি গ্যাজপ্রমের চুক্তির কারণেই গত তিন বছর বাপেক্সকে এসব কূপ খনন থেকে বিরত রাখার কথাও বলছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জ¦ালানী বিশেষজ্ঞ।
সর্বশেষ ২০১৮ সালের ২৭ জানুয়ারী ‘ভোলা নর্থÑ১’ কূপটির ৩ হাজার ৩৪৮ ফুট গভীর থেকে প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে গ্যাস উত্তোলন করে বাপেক্স। এটি ছিল দেশের ২৭তম গ্যাস কূপ। সেখানে ৬শ বিলিয়ন ঘনফুটের বিশাল গ্যাস মজুদ রয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা দিয়েছে বাপেক্স-এর প্রকৌশলীরা। ২০১৭ সালের ৯ ডিসেম্বর ভেদুরিয়ার কাছে ‘ভোলা নর্থÑ১’ কূপটির খনন কাজ শুরু করে বাপেক্স। ২০১৮-এর ১৫ জানুয়ারী কূপটিতে গ্যাসের মজুদ সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা লাভ করেন বাপেক্স-এর প্রকৌশলীরা এবং ২৬ জানুয়ারী দুপুরে কূপ থেকে গ্যাস উত্তোলন করে মজুদ নিশ্চিত করে বাপেক্স। টবগী-১’ সহ খনন পরিকল্পনাধীন ‘ইলিশা-১ ও ভোলা নর্থ-২ নিয়ে ভোলায় গ্যাস কূপের সংখ্যা দাঁড়াবে ৯টিতে।
’৯৫ সালের ৮ নভেম্বর দ্বীপ জেলা ভোলার শাহবাজপুরে গ্যাসের সন্ধান লাভের পরেও আজ পর্যন্ত পরিúূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত হয়নি। শাহবাজপুর গ্যাস ক্ষেত্রে এ পর্যন্ত যে ৪টি কূপ খনন করা হয়েছে তার মজুদের পরিমান ১ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ঘনফুট। বর্তমানে সরকারী-বেসরকারী ৪টি বিদ্যুৎ উৎপাদন ইউনিট ছাড়াও একটি টাইলস ফ্যাক্টরী ও কিছু আবাসিক গ্রাহক মিলিয়ে শাহবাজপুর থেকে দৈনিক গড়ে ৪৫-৪৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন হচ্ছে।
এর আগে ২০১৭ সালের অক্টোবরে ভোলার মুলাইপত্তনে ‘শাহবাজপুর-ইষ্ট ১’ কূপে আরো ৭শ বিলিয়ন বা ৭০ হাজার কোটি ঘনফুট গ্যাস আবিষ্কারের ফলে ভোলায় গ্যাস মজুদ আরো সমৃদ্ধ হয়েছে। এর পরে মুলাইপত্তনে আবিষ্কৃত গ্যাস ক্ষেত্রটি থেকে ৩২ কিলোমিটার উত্তরে ভোলা সদর উপজেলার ‘ভোলা নর্থ-১’ কূপে নতুন করে গ্যাসের সন্ধান মেলায় ভোলার গ্যাস জাতীয় গ্রীডে সংযুক্তির বিজ্ঞান সম্মত সম্ভাবনা নিশ্চিত হয়েছে বলে কারিগরি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।
তবে সুষ্ঠু কর্ম পরিকল্পনার অভাবসহ ভোলায় গ্যাসের বিশাল মজুদ ব্যবহারে বিগত প্রায় ২৭ বছরেও কোন অগ্রগতি হয়নি। ফলে প্রকৃতির এ অপার দান আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে কোন অবদান রাখেনি। এমনকি দেশ জুুড়ে গ্যাসের মারাত্মক সংকটের মধ্যেও ভোলার বিশাল গ্যাসের মজুদ অব্যবহৃত রয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভোলায় আবিষ্কৃত বিপুল গ্যাস-এর বানিজ্যিক ব্যবহার নিশ্চিত করণে একাধিকবার জাতীয় গ্যাস গ্রীডে সংযুক্তির ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
এরই প্রেক্ষিতে বিষয়টি নিয়ে সম্ভাব্যতা সমিক্ষা হলেও সে আলোকে বিশাল ব্যয় বহুল এ প্রকল্পে এখনো কোন সিদ্ধান্ত গ্রহন সম্ভব হয়নি বলে জানা গেছে। দক্ষিন ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের শিল্প ও বনিক মহলসহ ওয়াকিবহাল মহল ভোলা থেকে বরিশালÑগোপালগঞ্জÑবাগেরহাট হয়ে খুলনা পর্যন্ত জাতীয় গ্রীডে গ্যাস সঞ্চালনের দাবী জানিয়েছেন। তবে ভোলা থেকে ২৮ কিলোমিটার প্রশস্ত মেঘনা নদী অতিক্রম করে লক্ষ্মীপুর হয়ে ফেনীতে জাতীয় গ্যাস গ্রীডে সরবরাহের একটি প্রস্তাবনাও রয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রকৃত মজুদ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সুবিধাসহ জাতীয় অর্থনীতিতে প্রভাব হিসেব করেই ভোলার গ্যাস কোন পথে জাতীয় গ্রীডে যুক্ত হবে, সে আলোকে সিদ্ধান্ত গ্রহনের তাগিদ দিয়েছেন জ¦ালানী বিশেষজ্ঞরা।