মুলাদীতে বাড়ছে বিকৃত মস্তিষ্কের নৃশংস হত্যাযজ্ঞ মুলাদীতে বাড়ছে বিকৃত মস্তিষ্কের নৃশংস হত্যাযজ্ঞ - ajkerparibartan.com
মুলাদীতে বাড়ছে বিকৃত মস্তিষ্কের নৃশংস হত্যাযজ্ঞ

3:41 pm , August 13, 2022

আরিফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিবেদক ॥ মুলাদীতে ক্রমশ বেড়েই চলছে বিকৃত মস্তিষ্কের নৃশংস হত্যাযজ্ঞ। গত ৫ আগস্ট মুলাদীতে আখিনুর আক্তার (১৪) নামের এক স্কুলছাত্রীর মৃতদেহ পুলিশ উদ্ধার করে। তাকে চোখ উপড়ে এবং মাথা ও মুখম-লে ছুরিকাঘাত করে হত্যার পর লাশ খালে ছুড়ে ফেলা হয় বলে জানান মুলাদী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এস এম মাকসুদুর রহমান। ওই কিশোরী স্কুলছাত্রী। নিখোঁজের একদিন পরে বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) বিকালে উপজেলার গাছুয়া ইউনিয়নের হোসনাবাদ সিকদার বাড়ি সংলগ্ন খালে ব্রিজের নিচ থেকে তার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এর আগে গত ২৪ মে চোখ উপড়ানোর পর মনির হোসেন নামে (৩২) এক যুবককে গলা কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। ২৪ মে সকালে উপজেলার কাজিরচর ইউনিয়নের চরকমিশনার গ্রামের একটি মাছের ঘেরের পাশ থেকে মনিরের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুজনকে আটক করা হয়।
এর আগে গত ৬ এপ্রিল মঙ্গলবার স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যার পর পালিয়ে গেছে স্বামী। মুলাদী থানার ওসি (তদন্ত) সমীর কুমার দাস জানান, ৬ এপ্রিল উপজেলার চরকালেখান ইউনিয়নের দক্ষিণ গাছুয়া গ্রামে স্ত্রী মরিয়ম আক্তারকে হত্যার পর স্বামী মনির খান পালিয়ে গেছে বলে অভিযোগ লিপিবদ্ধ হয়। মনির ওই গ্রামের সিপার খানের ছেলে। নিহত মরিয়ম মুলাদী সদর ইউনিয়নের পাতারচর গ্রামের সিদ্দিক হাওলাদারের মেয়ে। তিনি জানান, বিয়ের পর থেকে তার মেয়ের সঙ্গে মনির খানের ঝগড়া হতো। ঘটনার দিন মরিয়মকে বুঝিয়ে তার বাবা-মা মনির খানের বাড়িতে দিয়ে যান। এ সময় ঝগড়ার একপর্যায়ে মরিয়মকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
একইমাসের ২৮ এপ্রিল মুলাদিতে ব্যাট দিয়ে পিটিয়ে নাতিকে হত্যা করে দাদা। নিহত নাতি দশম শ্রেণির ছাত্র জিসান (১৭) মালয়েশিয়া প্রবাসী নজরুল ইসলাম হাওলাদারের একমাত্র ছেলে। সে স্থানীয় একটি মাধ্যমিক স্কুলে পড়ত। দাদা কাশেম হাওলাদারের (৬৬) বাড়িতেই সে থাকত। সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর মঙ্গলবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, মুলাদী থানার জালালাবাদে গত ২৮ এপ্রিল ওই হত্যাকা- ঘটে। বাড়ির অন্যান্যদের কথাবার্তা শুনে বাগানের নারিকেল ও লেবু তুলেছে এমন সন্দেহে কাশেম হাওলাদার তার নাতি জিসানের মাথায় ক্রিকেট খেলার ব্যাট দিয়ে বাড়ি দেন।
এছাড়াও গেলো বছরের ৩০ এপ্রিল রাতের আঁধারে মোবাইল ফোনে ইমরান হোসেন (২৫) নামে বিদেশ ফেরত এক যুবককে ডেকে নিয়ে জবাই করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। সকালে উপজেলার আমানতগঞ্জ বাজারের কাছে বিল থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ ৪ জনকে আটক করে। ইমরান হোসেন আমানতগঞ্জ বাজার এলাকায় আলতাফ হোসেন দফাদারের ছেলে। কয়েক মাস আগে সে কাতার থেকে দেশে আসেন। করোনা পরিস্থিতির কারণে তিনি আটকা পড়েন।
পরপর তিনটি নৃশংস হত্যাযজ্ঞ ছাড়াও অতীতের এমন বেশকিছু ঘটনার উল্লেখ করে মুলাদী উপজেলাটিকে খুনী এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কথা বলতে চাইলেই তারা বলেন, আমাদেরতো সরকারিভাবে খুনী এলাকার লোক বানিয়ে দেয়া হচ্ছে। এখানে থানা পুলিশের ভূমিকা খুবই পক্ষপাত দুষ্ট বলে অভিযোগ গ্রামবাসীর। গ্রামবাসী মহিবুল হাওলাদার, দোকানদার মকবুল মুন্সিসহ একাধিক লোক জানান, দরিদ্র শ্রেণির মানুষের সাথে মুলাদি থানা পুলিশের আচরণ মোটেও আন্তরিক নয়, তাই পুলিশের কাছে কোনো অভিযোগ নিয়ে যেতেও ভয় পান বলে জানান একাধিক গ্রামবাসী। আর অপরাধী কারা তা
সব জেনেও পুলিশ নীরব ভূমিকা পালন করে। সব দোষ সর্বহারা বা সরকার বিরোধী পক্ষের ঘাড়ে চাপিয়ে পার পেয়ে যায় বলে দাবী করেন স্থানীয় এক বিএনপি নেতা। নাম-পরিচয় গোপন রাখার শর্তে তিনি আরো বলেন, ঘটনা ঘটার পরও পুলিশের উল্লেখযোগ্য কোনো ভূমিকা চোখে পরে না এখানে।
মুলাদী উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ তারিকুল হাসান খান মিঠু বলেন, সর্বহারার কোনো অস্তিত্ব এখন আর নেই। ওটাও বিএনপি নেতৃবৃন্দের অতিরঞ্জিত প্রচারণা। তবে হ্যা, পরপর বেশকিছু নৃশংস হত্যাযজ্ঞ ঘটেছে যা আসলে কারোই কাম্য নয়। অপরাধীরা যখন অপরাধ করে কাউকে জানিয়ে তো করে না। তবে পুলিশের পাহারা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। তারা অপরাধীদের গ্রেফতারও করেছেন। কতটা কি অগ্রগতি তা জানাতো আমার পক্ষে সম্ভব না। সেটা আপনারা সাংবাদিকরা বলতে পারবেন। তবে মুলাদী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ মতিউর রহমান খুব আন্তরিকতা নিয়েই জানালেন, আঁখি নূর মেয়েটির শুধু চোখেই নয়, তার মাথায়ও নৃশংসভাবে আঘাত করা হয়েছে। এর আগে এক যুবকের চোখ উপড়ে হত্যার বিষয়টিও আমরা পর্যালোচনা করছি। এটা অবশ্যই অপরাধীদের মধ্যে বিকৃতির লক্ষ্মণ স্পষ্ট। এটা ভয়ানক নৃশংসতাও। তবে আমরা এখুনি কিছু বলতে চাইনা, আরো একটু তদন্ত করেই সঠিক মতামত দিতে পারবো। এ জাতীয় ঘটনা যাতে আর ঘটতে না পারে সে বিষয়ে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে পুলিশ। জনগণের মাঝে সচেতনতা তৈরী এবং জিরো টলারেন্স দেখাতে নির্দেশনা রয়েছে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT