3:34 pm , July 23, 2022

আরিফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিবেদক ॥ বরিশালের বেশিরভাগ বাজারে খোলা সয়াবিন তেল নেই। বোতলজাত সয়াবিন তেল পাইকারী ব্যবসায়ীরা ১৮২ টাকায় বিক্রি করলেও খুচরা বাজারে তা ১৯০ ও ২০০ টাকা। তবে কোথাও খোলা তেল পাওয়া গেলেও তা মান ভেদে ১৮৫ ও ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পামওয়েল সুপার বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ টাকা দরে। পর্যাপ্ত সাপ্লাই না থাকার অভিযোগ খুচরা ও পাইকারী বিক্রেতাদের।
সরকারিভাবে লিটার প্রতি সয়াবিন ১৪ টাকা দাম কমানোর পর পরই প্রথমে বোতলজাত সয়াবিন তেল বাজার থেকে উধাও হয়ে যায়। যা থাকে তা সবই আগের বেশি দামের কেনা। ফলে সপ্তাহজুড়ে বেশি দামেই বিক্রি চলছে মফস্বলের বিভিন্ন বাজারে।
সরকারের পক্ষ থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর দাম কমানো সয়াবিনের বিক্রির সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে বাজারে অভিযান পরিচালনা করলেও তাতে তেমন কোনও সুফলই পাওয়া যায় না। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের বক্তব্য – আমাদের কাছে যা আছে তা সবই‘বেশি দামে কেনা। দাম কমানো সয়াবিন তেলের সরবরাহ এখনো বাজারে আসেনি বলে দাবী বরিশালের নতুন বাজার, চৌমাথা ও বাংলাবাজারের ব্যবসায়ীদের।
রাশিয়া আর ইউক্রেনের মধ্যকার যুদ্ধের প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ার দোহাই দিয়ে দেশেও সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছিল। যা ২০৫/২১০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিনের দাম কমলেও দেশি আমদানিকারকরা দাম কমানোর ক্ষেত্রে নানা অজুহাতে এখনে গড়িমসি করছেন। সরকার প্রথম দফায় প্রতিলিটারে ৬ টাকা কমিয়ে ১৯৯ টাকা এবং গত ১৭ জুলাই দ্বিতীয়বারের মতো ভোজ্যতেল আমদানিকারকদের সংগঠন প্রতি লিটারে ১৪ টাকা কমিয়ে বোতলজাত সয়াবিনের দাম ১৯৯ টাকা থেকে কমিয়ে ১৮৫ টাকা নির্ধারণ করে। যা পরের দিন ১৮ জুলাই থেকে কার্যকর করার সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সিদ্ধান্তের পাঁচদিন পরেও ২৩ জুলাই রবিবার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এর কোনো প্রভাব বাজারে পড়েনি। এখনও ইচ্ছামত বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে সয়াবিন তেল।
সরকার নির্ধারিত নতুন দাম অনুযায়ী, ১ লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৬৬ টাকা এবং ১ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৮৫ টাকা। ৫ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ৯১০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া পাম তেলের দাম ৬ টাকা কমিয়ে ১৪৮ টাকা নির্ধারণ করা হলেও বরিশালের বাজারে খোলা তেল খুঁজে পায়নি বলে ইজিবাইক ও অটোরিকশা চালকদের কয়েকজন অভিযোগ করেন। ইজিবাইক চালক রাশিদুল বলেন, ২৫০ গ্রাম খোলা সয়াবিন তেল কিনলে আমার তিন/চারদিন চলে যায়। অথচ বাজারে খোলা তেল নেই। পোর্ট রোডের বাধন নামের দোকানে খোলা সয়াবিন ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তারা বোতল ভেঙে বিক্রি করছে বলে দাবী বিক্রেতার।
বাঁধন স্টোরের বিক্রেতা জানালেন, তার দোকানে রূপচাঁদা, ফ্রেশ ও পুষ্টি সয়াবিন তেল লিটার ২০০ টাকা। তারা এখনো নতুন দামের বোতলজাত সয়াবিন পাননি। পামওয়েল তারা বিক্রি করেন না। বাংলা বাজারে অটোরিকশা চালক আমান বলেন, খোলা তেল না পেয়ে বাধ্য হয়ে বাজার থেকে এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৯০ টাকায় কিনেছেন তিনি। পাড়ার দোকানে যা ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বরিশালের পাইকার ও খুচরা বিক্রির জনপ্রিয় স্থান পোর্ট রোডের কয়েকটি দোকানে ঘুরে জানা গেল, তাদের কারো কাছেই খোলা তেল নেই। বোতলজাত সয়াবিন তারা খুচরা এবং পাইকারি বিক্রি করছেন। পাইকারি মূল্য ১৮৫ টাকা লিটার। তবে দু একটি দোকানে খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছিল ১৯০ ও ২০০ টাকা দরে।
গত ২১ জুলাই বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমার পরিপ্রেক্ষিতে দেশীয় বাজারে দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অভিন্ন ?মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি অনুযায়ী বাংলাদেশ কেনিটোল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সিদ্ধান্তমতে ভোজ্যতেলের দাম সমন্বয় করা হয়েছে। এর আগে ১৭ জুলাই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে তেলের মিল ও পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানের মালিকদের সঙ্গে বৈঠক থেকে নতুন দাম নির্ধারণ করে দেয়। এ সময় বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ জানিয়েছিলেন, বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমার কারণে দেশের বাজারেও দাম কমানোর এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দরপতন অব্যাহত থাকলে আগামীতেও এর সুফল ভোক্তারা পাবেন। তবে এ সুফল সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে বরিশালের বাজার মনিটরিং এর দাবী ভোক্তাদের সকলের।