3:23 pm , July 13, 2022

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ ঈদ উল আজহায় ঘরমুখী জন¯্রােতে পদ্মা সেতু হয়ে দক্ষিণাঞ্চল মুখী সড়ক পথে নানা বিড়ম্বনায় বিপন্ন নৌ পরিবহন সেক্টর কিছুটা সতেজ হলেও তার স্থায়িত্ব নিয়ে সংশয় রয়েছে। ঈদের আগের ৪ দিনের মত ঈদের দিন ভোর পর্যন্ত ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম থেকে চাঁদপুর হয়ে অর্ধ শতাধিক নৌযান দক্ষিনাঞ্চলের বিভিন্ন গন্তব্যে প্রায় দুলাখ যাত্রী পৌছে দেয়। বেশীরভাগই নৌযানেই ছিল ধারন ক্ষমতার আড়াই থেকে তিনগুনেরও বেশী যাত্রী। এমনকি বরিশালমুখি নৌযানগুলো ঈদের আগের তিন দিনই ডবল ট্রিপে কয়েক লাখ যাত্রী পরিবহন করেছে। পদ্মাসেতু চালু হবার পরে দক্ষিণাঞ্চলের নৌ পরিবহন সেক্টরে মারাত্মক বিপর্যয় নেমে আসে। ঈদকে কেন্দ্র করে তা কিছুটা কাটিয়ে ওঠার সম্ভাবনা দেখছেন নৌযান মালিকগন। ঈদের পরেও বুধবার থেকেই কর্মস্থল মুখী যাত্রীতে ঠাশা থাকবে বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চল থেকে ঢাকা ছাড়াও চাঁদপুর মুখী নৌযানগুলো। আগামী এক সপ্তাহ ধরেই সড়ক ও আকাশ পথের মত নৌপথেও কর্মস্থলমুখি জন¯্রােত অব্যাহত থাকার কথা বলেছেন বিভিন্ন পরিবহন সেক্টরের মালিকগন।
বিগত দু বছর করোনা মহামারীতে ঘরমুখী যাত্রী সংকটে দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম বৃহত বিনিয়োগের নৌ পরিবহন খাতে চরম অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়। সে পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার আগেই পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় নৌ বানিজ্যে মারাত্মক বিপর্যয় নেমে এসেছে বলে দাবী নৌযান মালিকদের।
এবারো অন্তত দশ লাখ মানুষ আপনজনদের সাথে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে দক্ষিণাঞ্চলে যাতায়াত করছেন। অন্যান্য বছর প্রায় ৮০ ভাগ ঘরমুখী মানুষ নৌপথে যাতায়াত করলেও পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় একটি বড় অংশই সড়ক মুখি হয়েছে। ফলে নৌ পথে ঈদকে ঘিরে যাত্রী বাড়লেও তা তুলনামূলকভাবে কম। তবে ঈদের ভীর কাটিয়ে মানুষ কতটা নৌ পথকে ব্যবহার করে তার ওপরই সব কিছু নির্ভর করবে বলে মনে করছেন নৌযান মালিকগন । পদ্মা সেতু চালুর পরে ঢাকা থেকে ভাংগা পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ের শেষ প্রান্ত থেকে দক্ষিণাঞ্চলের প্রবেশমুখ ফরিদপুরÑবরিশাল মহাসড়কের বিভিন্নস্থানে যানযটে জনদূর্ভোগ প্রকট আকার ধারন করে। ফলে বাধ্য হয়েও অনেক মানুষই নৌপথ মুখি হয়েছেন। একাধিক নৌযান মালিক জানিয়েছেন, গত বৃহস্পতিবার থেকে শণিবার রাত পর্যন্ত বেশীরভাগ নৌযানই বরিশালে যাত্রী নামিয়ে পুনরায় ঢাকায় ফিরে ডবল ট্রিপে ঘরমুখি বাড়তি যাত্রীদের পৌছে দিয়েছে। তাদের মতে, শণিবার সকাল পর্যন্ত অনেক গার্মেন্টসে বেতন বোনাস না হওয়ায় শ্রমিকরা টাকা হাতে পেয়ে বিকেলেই ঘরে ফিরতে শুরু করেন। সব বিবেচনায় নিয়েই নৌযান মালিকগন ঈদের আগের দিন, শণিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢাকা থেকে বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি রুটে প্রতিদিনই ডবল ট্রিপে যাত্রীদের পৌছে দিয়েছে।রোববার রাতের প্রথম প্রহর থেকে শেষ রাত পর্যন্ত হাজার হাজার ঘরমুখি যাত্রী বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলে বিভিন্ন নদী বন্দরে পৌছে। ঈদের পরেও অন্তত এক সপ্তাহ বাড়তি যাত্রী পরিবহনের সুবাদে নৌ পরিবহন খাতের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা চলছে বলেও জানিয়েছেন নৌযান মালিকগন।তবে ঈদকে কেন্দ্র করে অন্যান্য বছর বেসরকারী নৌযানে ভাড়া বৃদ্ধির প্রবনতা এবার সম্পূর্ণই অনুপস্থিত রয়েছে। পাশাপাশি যাত্রীদের সাথে নৌযান কর্মীদের আচরনেও ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ্যণীয়। নৌযানের মালিক ও কর্মচারীরা যাত্রীদের আবার নৌপথ মুখি করতে সম্ভব সব কিছু করছে বলেও জানিয়েছেন একাধীক নৌযান মালিক। পদ্মা সেতু চালু হবার পরের প্রথম ঈদেই দক্ষিণাঞ্চল মুখি জন¯্রােত ভাংগা এক্সপ্রেসওয়ের পরে বরিশাল পর্যন্ত ৯৫ কিলোমিটার মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক যানযটে যাত্রীরা নাকাল হয়েছেন। ঈদের পরে মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে প্রায় একই পরিস্থিতি। ৬০ বছরের পুরনো এবং মেয়াদ উত্তীর্ণ অপ্রশস্ত মহাসড়কটির বিভিন্নস্থানে বাজার ও দোকানপাটের সাথে নানা অবৈধ যানবাহনের ভীড়ে দিনরাত যানযট লেগেই থাকছে। ফলে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে ভাংগা অতিক্রমের পরেই যানবাহনের গতি ধীর হয়ে যায়। ঢাকা থেকে মাত্র ১৬৫ কিলোমিটার দুরের বরিশালে পৌছতেই ৫ ঘন্টারও বেশী সময় লেগে গেছে। দক্ষিনাঞ্চলের অন্যান্য গন্তব্য পৌছা ছিল আরো কষ্টকর। এসব বিবেচনায় এবারের ঈদেও দক্ষিণাঞ্চলের ঘরমুখি মানুষের একটি বড় অংশই নৌপথকে বেছে নেন।
সড়ক পরিবহন সেক্টরের সম্পৃক্তদের মতে, ফরিদপুর Ñ বরিশাল Ñ পায়রা Ñ কুয়াকাটা, ভাঙ্গা Ñ ভাটিয়াপাড়া Ñ নড়াইল Ñ যশোর Ñ বেনাপোল, ভাটিয়াপাড়া – গোপালগঞ্জ Ñ খুলনা/ মোংলা মহাসড়কগুলো অবিলম্বে ৬ লেনে উন্নীত করার কোন বিকল্প নেই। নচেত, পদ্মা সেতু সহ ঢাকাÑমাওয়াÑভাংঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের তেমন কোন সুফল দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণÑপশ্চিমাঞ্চলের মানুষের ভাগ্যে নাও জুটতে পারে। তবে এসব মহাসড়ক উন্নয়নে জরুরী পদক্ষেপর গ্রহন করলেও দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার জাতীয় মহাসড়কগুলো মানসম্মত ও নিরাপদ পর্যায়ে উন্নীত করতে কমপক্ষে ৭-১০ বছর পর্যন্ত অপক্ষো করতে হতে পারে । এদাবী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সড়ক অধিদপ্তরের একাধীক দায়িত্বশীল সূত্রের। তবে ঢাকাÑমাওয়াÑভাংঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের মত এসব জাতীয় মহাসড়ক উন্নয়নে সেনাবাহিনীকে সম্পৃক্ত করলে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া দ্রুততর হবে বলেও মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল।