3:40 pm , July 5, 2022

৮৩ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মেরামত না করে
ঝালকাঠি প্রতিবেদক ॥ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির (পিইডিপি-৪) এর আওতায় নলছিটি উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মেরামতের কাজে সীমাহীন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। নীতিমালা অনুযায়ী ৩০ জুনের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত করার কথা থাকলেও কোন স্কুলেই কাজ শুরু হয়নি। অথচ কাগজে কলমে কাজ সমাপ্ত দেখিয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন ১ কোটি ৬৬ লাখ টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে নিয়েছে। আর এ অনিয়মের সাথে উপজেলা শিক্ষা অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা জড়িত রয়েছে বলে গুরুত্বর অভিযোগ রয়েছে। উপজেলা শিক্ষা অফিসের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থ বছরে উপজেলার ১৬৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে মাইনর (ক্ষুদ্র) মেরামতের জন্য ৮৩টি বিদ্যালয় তালিকাভূক্ত হয়। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর প্রতিটি বিদ্যালয়ের বিপরীতে ২ লাখ টাকা হিসাবে ৮৩টি বিদ্যালয়ের জন্য ১ কোটি ৬৬ লাখ টাকা দেয়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি ‘প্রকল্প কমিটি করে তাদের মাধ্যমে বিদ্যালয়ের ক্ষুদ্র মেরামতের কাজ করানোর কথা। কিন্তু সেটা না করে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা কেনাকাটা না বা কোন কাজ না করিয়েই বিভিন্ন দোকানপাট থেকে ফাঁকা ভাউচার সংগ্রহ করে। এরপর প্রাক্কলন ব্যায় (এস্টিমেট) অনুযায়ী লিখে দিয়ে অফিসকে বরাদ্দের ২০ থেকে ২৫ পার্সেন্ট দিয়ে বাকী টাকা তুলে নেয়। আর এসব ভাউচার তৈরিতে উপজেলা শিক্ষা ও প্রকৌশলীর কার্যালয়ের লোকজন সহায়তা করে থাকে। পার্সেন্ট টাকা না দিলে শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তারা কোনো কাগজে স্বাক্ষর করেন না।
নাম প্রকাশে না করার শর্তে সূত্রটি আরো জানায়, বিগত ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে উপজেলা শিক্ষা অফিস ভবন মেরামত বাবদ ৪০ হাজার টাকা বরাদ্ধ হয়। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন অর্থ বছর শেষ হয়ে গেলেও কোন কাজ না করেই বিল তুলে নিয়েছে। একই ভাবে রুটিন মেইনটেন্যান্স ও স্লিপের টাকাও বিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টে না দিয়ে শিক্ষা কর্মকর্তার অ্যাকাউন্টে রেখে দিয়েছেন।
উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, ক্ষুদ্র মেরামতের জন্য বরাদ্দকৃত ১ কোটি ৬৬ লাখ টাকা দুই দফায় এসেছে। ৩০ জুনের আগেই বিভিন্ন সময় সমুদয় টাকা হিসাব রক্ষণ অফিস থেকে ছাড় করানো হয়। বরাদ্দ প্রাপ্ত টাকা বিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টের বদলে শিক্ষা কর্মকর্তার অ্যাকাউন্টে নেয়া হয়েছে। এছাড়াও ৯৭টি বিদ্যালয়ের অনুকূলে রুটিন মেইনটেন্যান্সের টাকাও হিসাব রক্ষণ অফিস থেকে ছাড় করিয়ে একই অ্যাকাউন্টে নিয়ে রাখা হয়েছে।
গত ৪ ও ৫ জুলাই বরাদ্দ প্রাপ্ত ২৫টি বিদ্যালয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, চলতি বছরের ৩০ জুনের মধ্যে কাজ সমাপ্তির বাধ্যবাধকতা থাকলেও অধিকাংশ বিদ্যালয়ে কাজ শুরু হয়নি। যদিও কাজ সমাপ্ত দেখিয়ে বরাদ্দকৃত টাকা ৩০ জুনের মধ্যে তোলা হয়েছে। কয়েকটি বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির বরাদ্দের ব্যাপারে জানেনই না। তবে বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন একাধিক অভিভাবক। তারা সঠিক তদন্তের মাধ্যমে এ অনিয়ম ও দূর্নীতি উদঘাটনের দাবি জানিয়েছে।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো.রুহুল আমিন সমস্ত অনিয়ম-দূর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার কওে বলেন, ‘বরাদ্দের টাকা শিক্ষা কর্মকর্তার সরকারি অ্যাকাউন্টে আনার নিয়ম আছে। সেখান থেকে বিদ্যালয়গুলোর অ্যাকাউন্টে দেয়া হচ্ছে। আর শিক্ষা অফিস ভবন মেরামতের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ যথাযথ ভাবে খরচ করা হয়েছে। তবে অফিস খরচ বাবদ ২০/২৫ পার্সেন্ট টাকা কেটে নেওয়ার বিষয়টি সত্য নয়।
মেয়াদ শেষ হলেও কাজ শুরু না হওয়ার ব্যাপাওে তিনি বলেন, বিদ্যালয়ে ম্যানেজিং কমিটি না থাকায় কাজ করতে বিলম্ব হয়েছে। উপজেলা পরিদর্শন ও শিক্ষা কমিটির মাধ্যমে উন্নয়ন কাজ তদারকি করা হবে। কোন বিদ্যালয়ে কাজ না হলে কি হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কাজ আদায় করে নেয়া হবে। এখানে কোনো অনিয়মের সুযোগ থাকবে না।’ কাজ না কওে টাকা উত্তোলনর সম্পর্কে বলেন,’এটি সরকারি সিস্টেম। সিস্টেমটি ভুল হলেও এটা নিয়ে আমি কথা বলতে পারবো না।
বরিশাল বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. জালাল উদ্দিন বলেন, উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ উত্তোলন ও ব্যয়ে অনিয়ম হয়ে থাকলে তদন্ত করা হবে। তদন্তে অনিয়ম পেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।