ভালো আছেন রাস্তায় পড়ে থাকা প্রতিবন্ধী বৃদ্ধা ॥ খুঁজছেন একটু আশ্রয় ভালো আছেন রাস্তায় পড়ে থাকা প্রতিবন্ধী বৃদ্ধা ॥ খুঁজছেন একটু আশ্রয় - ajkerparibartan.com
ভালো আছেন রাস্তায় পড়ে থাকা প্রতিবন্ধী বৃদ্ধা ॥ খুঁজছেন একটু আশ্রয়

3:41 pm , June 29, 2022

আরিফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিবেদক ॥ ভালো আছেন রাস্তায় পড়ে থাকা সেই অসহায় প্রতিবন্ধী বৃদ্ধা। বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (শেবাচিম) এর চারতলায় মহিলা মেডিসিন বিভাগের ফ্লোরে তার যথেষ্ট যতœ নিচ্ছেন চিকিৎসক ও কর্মকর্তারা। তিনি এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। কথাও বলতে পারছেন নিজের মতো করে। ডাক্তারের ছাড়পত্র পেলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আগলে রেখেছেন তাকে। বাইরে যেতে চান, একটু ঘুরে আবার ফিরে আসতে চান হাসপাতালের উদারতার আশ্রয়ে। পাশাপাশি বৃদ্ধা এখন আহাজারি করছেন তার ব্যাগ থেকে চুরি যাওয়া এক হাজার টাকা ফিরে পাওয়ার জন্য। তার সাথে কথা বলে জানা গেছে, তিনি বরিশাল নৌ বন্দরের ভিতরেই হুইল চেয়ার নিয়ে ভিক্ষা করতেন এবং ওখানেই পড়ে থাকতেন। ঘটনার দিন দুই সপ্তাহ আগে গত ১৮ জুন রাতে কে বা কারা এই বৃদ্ধাকে লঞ্চ টার্মিনাল থেকে সরিয়ে নিয়ে আসে ও তার টাকা পয়সা লুটে নিয়ে ফেলে রেখে যায় জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন হায়দার এর বাড়ির সামনের পুকুরের পূর্ব পাড়ের একটি সড়কে। যে সড়কেই আবার থাকেন স্থানীয় কাউন্সিলর শহীদুল্লাহ কবির। মাঝরাত থেকে পরদিন বিকেল পর্যন্ত পড়ে থাকেন তিনি কাউন্সিলরের বাড়ির সামনে। জেলা প্রশাসন সমাজসেবা ও পুলিশের সদস্যরা এসে তাকে দেখে চলে যান বলে জানান এলাকাবাসী। এলাকাবাসী তখন জানান, কেউই বৃদ্ধার কোনো দায়িত্ব নিতে রাজী হননি। সমাজসেবার কর্মকর্তা এসে দেখে বললেন তাদের প্রতিবন্ধী বৃদ্ধাদের জন্য কোনো ব্যবস্থা নেই। পুলিশ এসে ঘুরে চলে যায়। বলে বিকালে সরিয়ে নিয়ে যাবো। এদিকে অসুস্থ ও ক্ষুধার্থ বৃদ্ধা বারবার খেতে চায়, পানি খেয়েই জ্ঞান হারিয়ে যায়। সমাজ সেবা কর্মকর্তাকে ফোন করলে তিনি জানান, বরিশালে তাদের কোনো বৃদ্ধাশ্রম নেই। প্রতিবন্ধী পূনর্বাসন কেন্দ্র যেটি আছে সেখানে বৃদ্ধদের কোনো ব্যবস্থা নেই বলে জানালেন উপ-পরিচালক আল মামুন তালুকদার। অসুস্থ ও অজ্ঞান বৃদ্ধার সবার আগে চিকিৎসা প্রয়োজন। তাই তাকে তাড়াতাড়ি নিয়ে যাওয়া হয় শেবাচিমে। সেখানে ভর্তি ও হাসপাতালের চারতলায় পৌঁছে দিতে সাহায্য করেন ৯৯৯ থেকে পাঠানো বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি দল। এরপর জেলা প্রশাসনের প্রবেশন কর্মকর্তা সাজ্জাদ পারভেজ এর সুপারিশে হাসপাতালের সমাজসেবা দপ্তরের নজরদারিতে দেয়া হয় নাম না জানা প্রতিবন্ধী এই বৃদ্ধাকে। মুখে খাবার গ্রহণের মতো অবস্থা না থাকায় ডাক্তার তাকে খাবার স্যালাইন ও লিকুইড ঔষধ দেন। বুধবার রাতে বৃদ্ধাকে দেখতে গেলে তিনি মিষ্টি হাসিতে অভ্যর্থনা জানান। এখন তিনি সুস্থ। ভালো আছেন। নিজ হাতে খাবারও খাচ্ছেন। নার্স ও আয়ারা তার যতœ নিচ্ছেন। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কতদিন তাকে দেখবেন? বরিশালে বেসরকারি একটি বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্র রয়েছে কাউনিয়া হাউজিং এর ইসলামি ব্যাংকের নীচে বলে জানালেন আশ্রমটির পরিচালক শাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, এটি আগে বাকেরগঞ্জে ছিলো। খাবারের অভাবে বন্ধ হয়ে যায়। পুনরায় এটি চালুর চেষ্টা নিয়ে কাউনিয়া এলাকায় একটি প্রকল্প করা হয়েছে। তবে প্রতিবন্ধীদের বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কারণ ইতিপূর্বে এদের কারণে অনেক স্টাফ পালিয়ে গেছে।
সামাজিক আন্দোলনের নেতা ও উন্নয়ন গবেষক এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, বৃদ্ধাশ্রম বা প্রতিবন্ধী বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের জন্য বেসরকারি নয়, সরকারি আশ্রয় স্থান আজ বড় বেশি প্রয়োজন। অসহায় এতিম বা স্বজনহীন প্রতিবন্ধীদের কথা আলাদাভাবে ভাবতে হবে বলে জানালেন বরিশালের সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ প্রায় সকলেই।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT