3:34 pm , June 26, 2022
চাপ বেড়েছে গণপরিবহনে
আরিফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিবেদক ॥ বদলে গেছে নগরীর নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালের চিত্র। সকাল থেকে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে হাতে গোনা কিছু বাস কাউন্টার। বেশিরভাগ যাত্রী পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে যাতায়াতের নতুন বিলাসবহুল বাসের টিকিট খুঁজছেন বলে জানালেন বরিশাল বাস মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক কিশোর দে। তিনি বলেন, রবিবার সকাল থেকে খুব চাপ যাত্রীদের। বেশিরভাগই পদ্মা সেতু দেখার যাত্রী। তবে পর্যাপ্ত গাড়ি আছে। তাই এ চাপ সামলানো এখন খুবই সহজ। কেননা এখন আর ফেরীঘাটে কোনো গাড়ি আটকে নেই।
২৫ জুন পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য ২৬ জুন সকাল থেকে চলাচলের দ্বার উম্মুক্ত হয়েছে। ২১ জেলাকে কেন্দ্র করে পরিবহন সেক্টরেও ঘটেছে ব্যাপক রদবদল। বরিশালের পাঁচ জেলা বরিশাল, পটুয়াখালী ও বরগুনা, ঝালকাঠি ও পিরোজপুরকে ঘিরে গ্রীনলাইন, সাকুরা, ঈগল, ইলিশ, জিএমসহ বিভিন্ন পরিবহনের বেশকিছু পুরাতন ও নতুন বাস এখন নিয়মিত যাতায়াত শুরু করেছে।
এরমধ্যেই গ্রীনলাইন এনেছে ১২টি লাক্সারি বাস। যার একটি রোববার বেলা সাড়ে বারোটায় সাড়ে চারঘন্টায় ঢাকা থেকে বরিশাল এসে পৌঁছেছে। টোল প্লাজায় আধাঘন্টার বেশি আটকে থাকার কারণে এই দেরী বলে জানালেন গ্রীনলাইন বাসের চালক।
আর সদ্য ঢাকা থেকে আসা ইলিশ পরিবহনের চালক মোকলেছুর রহমান বললেন, টোল প্লাজায় আধাঘন্টার বেশি সময় লেগেছে। এরপর ভাঙা পর্যন্ত ৮০ কিমি এর উপরে চলা গতিতে এসে হঠাৎ দুই-লেনের সড়কে নেমে বিপত্তি সৃষ্টি হচ্ছে। ভাঙা থেকে বরিশাল পর্যন্ত সড়ক চারলেনে উন্নিত না হলে পদ্মা সেতু দিয়ে এসেও কোনো লাভ হবেনা। তিনি আরো জানান, এই রুটে এখন থেকে ইলিশ পরিবহনের ১৬ বাস নিয়মিত চলবে। টার্মিনালের ভিতরে ইলিশের কাউন্টার রয়েছে বলে জানান তিনি। এদিকে নতুন বিলাসবহুল গ্রীনলাইনের জন্য নতুন কাউন্টার চালু করা হয়েছে নথুল্লাবাদ ইয়াকুব টাওয়ারে। এখানে তখন ঢাকামুখী যাত্রীদের উপচে পরা ভিড়। কয়েকজন যাত্রী জানালেন, তারা আরো আগেই ঢাকা যেতেন। ২৫ জুন পদ্মা সেতুর উদ্বোধন। তাই অপেক্ষা করে উদ্বোধনের একদিন পর পদ্মা সেতু পার হবার সুযোগ নিতে এসেছেন।
যাত্রী আহমদউল্লাহ জানান, যেহেতু আমরা আগেই শুনেছি গ্রীনলাইন পদ্মা সেতুর জন্য আলাদা লাক্সারি বাস চালু করেছে, তাই এখানে এসেছি। আর একজন যাত্রী ইমরান বলেন, ভাঙা থেকে বরিশাল সড়ক চারলেনে উন্নিত না হলে পদ্মা সেতুর সুফল বঞ্চিত হব আমরা। দূর্ঘটনা আরো বাড়বে বলে দাবি যাত্রীদের বেশিরভাগ অংশের। নাম বলতে অনীহা প্রকাশ করে একজন যাত্রী বলেন, ভাঙা থেকে বরিশাল সড়ক দ্রুত উন্নত করতে না পারলে এই সড়ক ঢাকার গুলিস্তান হবে। এখনের চেয়ে তিনগুণ দূর্ঘটনা ঘটবে।
একঘন্টা পর পর ঢাকা থেকে বরিশাল ও কুয়াকাটা রুটে গ্রীনলাইনের ১২টি গাড়ি চলাচল করবে বলে জানালেন বরিশালের ব্যবস্থাপক মোঃ হাসান সরদার বাদশা। তিনি বলেন, ৭ টা থেকে রাত সাড়ে বারটা পর্যন্ত গাড়ি পাবেন। ইকোনোমিকাল (৪০ আসনের বাস) ৭৫০ টাকা ও বিজনেস ক্লাস (২৩ আসনের বাস) ১০০০ টাকা ভাড়া ধার্য করেছেন গ্রীনলাইন কর্তৃপক্ষ।
বাদশা আরো জানান, টোল প্লাজায় আধাঘন্টা জ্যামে আটকে থাকতে হচ্ছে, এটা না থাকলে চার ঘন্টায় আসা সম্ভব হবে।
পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের আগে থেকেই দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলাকে কেন্দ্র করে গণপরিবহনে ব্যাপক রদবদলের আভাস দিয়েছিলো সড়ক পরিবহন সেক্টর। এমনকি সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব এনায়েত উল্লাহ বলেছিলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পাশাপাশি পুরো বাংলাদেশে অর্থনৈতিক একটা মহাবিপ্লব ঘটবে। সেতু চালু হলে পরিবহন কোম্পানিগুলোর অত্যাধুনিক বাস বিভিন্ন জেলার সঙ্গে চলাচল শুরু করবে। ফলে পরিবহন সেক্টরের স্বর্ণযুগ অবস্থান তৈরি হবে। নতুন বাস নামলে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হবে ও বেকারত্ব কমবে। এছাড়া পণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে আর বিড়ম্বনায় পড়তে হবে না। ভাড়া কম লাগবে বলে পণ্যের দামও হয়তো কমবে। এতে পদ্মা সেতুর সুফল পাবে পুরো দেশবাসী। আর এ নিয়ে ঐ সময় গ্রীন লাইনের জেনারেল ম্যানেজার মো. আবদুস সাত্তার বলেছেন, আমাদের জন্য এই সেতু একটি আর্শীবাদ। ফেরী দিয়ে পারাপারে অনেক ভোগান্তি হতো। সেতু উদ্বোধনের পর থেকে আর কোনো গাড়ি আমরা দৌলতদিয়া পাটুরিয়া ঘাট দিয়ে পারাপার করবো না। আমাদের যশোর রুটে চলা গাড়ি খুলনা রুটের গাড়ি সবই পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে পারাপার করবে। তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যেই আমরা নতুন গাড়ি এনেছি। আমরা খুলনা রুটে প্রথমবারের মতো ডাবল ডেকার বাস সার্ভিস শুরু করেছি। দুমাস আগে গাড়িগুলো নতুন এনেছি। খুলনা সাতক্ষীরার যাত্রীরা পদ্মাসেতু হয়ে গোপালগঞ্জ দিয়ে যাতায়াত করতে পারবে এখন। আমাদের পটুয়াখালি পর্যন্ত গাড়ি চলবে। আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি আছে, আমারা বেশ উৎফুল্ল। যাত্রীরাও ভালো সেবা পাবে, ভোগান্তি কমবে।
২৫ জুন পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হয়েছে। ২৬ জুন রবিবার সকাল ছয়টা থেকে পদ্মা সেতুর টোল প্লাজায় দেখা গেছে দীর্ঘ লাইন। আর এ লাইনে আটকে আধাঘন্টা ও পৌনে একঘন্টা দেরীতে পৌঁছেছে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতুর টোল দিয়ে আসা বেশিরভাগ বাস। এ সুযোগে বরিশাল বাস টার্মিনালে বিলাসবহুল নতুন গাড়ি দেখা গেছে শুধু ইলিশ ও গ্রীনলাইন। অন্য সব পরিবহনের গাড়িই পুরাতনগুলোই চলছে।
মালিক সমিতির মহাসচিব কিশোর দে আরও জানালেন, আসলে দু একটি কোম্পানি হয়তো নতুন কিছু গাড়ি অন্য লাইন থেকে এনে এই রুটে সংযোগ করেছে। তবে বেশিরভাগ গাড়িই আগের। ফেরীতে আটকে থাকার কারণে নিয়মিত দেখা যেত না। এখন আর সে সমস্যা নেই। তবে এ সেক্টরে নতুন বিলাসবহুল গাড়ি চালাতে হলে বরিশাল থেকে ভাঙা সড়ক চারলেনে উন্নীত করতে হবে। তা না হলে রিস্ক থেকেই যাবে।